পদক ভুলিয়ে দিয়েছে যন্ত্রণা

সার্জেন্ট গোলাম মাওলাকে পদক পরিয়ে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।দুর্বৃত্তদের বোমা ও ইট-পাটকেল হামলায় মরতেই বসেছিলেন সার্জেন্ট গোলাম মাওলা। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর এখন মোটামুটি সুস্থ। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত ওষুধ খেতে হচ্ছে। ক্ষত শুকালেও প্রতিনিয়ত যন্ত্রণায় কাতরাতে হচ্ছে তাকে। এরইমধ্যে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপসহ পারিপার্শ্বিক রোগেও আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। কিন্তু ‘রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম)’ পদক তার সেই যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিয়েছে। বুধবার বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
সার্জেন্ট গোলাম মাওলা বলেন, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি অনেক গৌরবের ও আনন্দের। যে কারণে আমাকে পদক দেওয়া হয়েছে, সেই ঘটনার দিন হয়তো মরেও যেতে পারতাম। সবার দোয়ায় আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। ইটের টুকরা ছাড়াও তিনটি ককটেল মাথায় এসে পড়ে। হেলমেটের কারণে মাথা কিছুটা নিরাপদ থেকেছে। না হয় সেদিন মাথা ছিন্নভিন্ন হয়ে যেত।
হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে সার্জেন্ট গোলাম মাওলা বলেন, সেই দিনটির কথা মনে উঠলে এখনও দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়। রাজধানীর শ্যামলীর শিশুমেলার সামনে প্রতিদিনের মতো গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকালে তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন। তখন সময় আনুমানিক সকাল সোয়া আটটা। এ সময় তাকে লক্ষ করে ককটেল হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। পুরোশরীরে ককটেলের স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়। দুর্বৃত্তদের ধরতে গিয়েও পারেননি। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
গোলাম মাওলা বলেন, ঘটনার সময় তার মাথায় হেলমেট ছিল। দুর্বৃত্তরা হেলমেটের ওপরেই ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এতে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। মরে গেছি মনে করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যান। হামলার সময় দুর্বৃত্তরা প্রথমে ‘জয়বাংলা’ ও পরে ‘নারায়ে তাকবির-আল্লাহু আকবার’ বলে স্লোগান দেন। দুর্বৃত্তরা চলে গেলে পুলিশ ও স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান।

অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে সার্জেন্ট গোলাম মাওলা বলেন, দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলাম। এখনও নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হচ্ছে। মাথার এক পাশ এখনও ফুলে আছে। মাঝে মাঝে প্রচণ্ড ব্যথা করে। চুলকানি, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের কারনে তখন শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়। বেঁচে থাকার পর যখন দেড় লক্ষাধিক সদস্যের একটি বাহিনীর মধ্যে তাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে, তখন আর মনে দুঃখ থাকে না। প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে রাষ্ট্রীয় সম্মানের এই পদক পরিয়ে দিয়েছেন। এতেই শান্তি।

সার্জেন্ট গোলাম মাওলা আরও বলেন, ২০০১ সালে চাকরিতে যোগদানের পর ১৫ বছরের চাকরি জীবনে কখনও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হননি বলেও জানান তিনি। স্ত্রী আইরিন সুলতানা, ছেলে আদিত্য (৯) ও অরণ্যকে (৪) থাকেন মিরপুরে। গ্রামের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটার মানিকখালীতে।

পদক দেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি একটি রাজনৈতিক জোটের অনির্দিষ্টকালের ডাকা হরতাল ও অবরোধের সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অর্পিত দায়িত্ব পালন করছিলেন সার্জেন্ট মো. গোলাম মাওলা। এ সময় অবরোধকারী কতিপয় সন্ত্রাসী প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে আকস্মিকভাবে তার ওপর হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ককটেল ও ইট দিয়ে গুরুতর আহত করে। আহত অবস্থায়ও তিনি দুর্বৃত্তদের আটকের চেষ্টা করেন। জীবনবাজি রেখে সরকারি দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে ‘রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম)’ পদকে ভূষিত করা হলো।

/এমএনএইচ/