এবার সুপ্রিম কোর্টের বাইরে কথা বললেন বিচারপতি মানিক

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকসোমবার হঠাৎ করেই সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পরও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন সদ্য অবসরে যাওয়া বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। যদিও রবিবার তার করা সংবাদ সম্মেলনের ভিত্তিতেই সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার অফিস এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তারপরও আজ সোমবার দুপুরে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বাইরে মাজার গেট সংলগ্ন বটতলায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। এসময় অবিলম্বে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করেছেন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
এর আগে রবিবার সমাপ্ত হওয়া রায় এবং আদেশগুলো গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। ঠিক সন্ধ্যায় মানিকের এই বক্তব্য সঠিক নয় বলে দাবি করেন সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি মানিকের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জেনারেল আবু সৈয়দ দিলজার হোসেনের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ চলাকালীন সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অবসরপ্রাপ্ত বিচারতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী একটি প্রেস কনফারেন্স করেন যা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির অবগত হন। যদিও সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এ ধরনের প্রেস কনফারেন্স নজিরবিহীন। প্রধান বিচারপতি আশা করেন, বর্তমান ও ভবিষ্যতে মাননীয় বিচারপতিরা কোর্টের পবিত্রতা বজায় রাখার স্বার্থে এরূপ কার্য থেকে বিরত থাকবেন।’
সুপ্রিম কোর্টের ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি আশা করেন যে, সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মিডিয়াতে মামলার রায় ও আদেশ-সংক্রান্ত কোনওরূপ বক্তব্য না দিয়ে তার কাছে যতগুলো অনিষ্পত্তিকৃত রায়ের ফাইল রয়েছে, তা সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিসে অতি সত্বর ফেরত দেবেন, যাতে বিচারপ্রার্থীদের আর ভোগান্তি না হয়।’

এরপর সোমবার সকালে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে কোনও সংবাদ সম্মেলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। আর দুপুরেই সুপ্রিম কোর্টের বাইরে মাজার গেট সংলগ্ন বটতলায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বিচারপতি মানিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি কর্তৃক সব নথি চেয়ে পাঠানো অবৈধ। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার অফিস থেকে আমার বিষয়ে যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে তা বিভ্রান্তিকর। আমার বক্তব্যকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, গতকাল (রবিবার) তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন যেটা সংবাদ সম্মেলন ছিল না। তবে অনেক ‘নতুন তথ্য’ নিয়ে আগামীতে সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানান তিনি।

আপিল বিভাগের সদ্য অবসরে যাওয়া একজন বিচারপতি হিসেবে তিনি বিচার বিভাগ নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য করলে তাতে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি যখন নিজেই বলেন তিনি শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন এবং সাকা চৌধুরীর পরিবারের সঙ্গে মিটিং করেছেন। সেখানে কি বিচার বিভাগের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় না?’

দুইদিনব্যাপী টানা এই পাল্টাপাল্টি জবাব প্রসঙ্গে সিনিয়র আইনজীবী মহসিন রশিদ বলেন, ‘চাইলে প্রধান বিচারপতি পুরো বিষয়টার সুষ্ঠু সুরাহা করতে পারেন। তিনি রুলস ফ্রেম করার ক্ষমতা রাখেন। এখন থেকে আর ব্যাকডেটে কোনও আদেশ বা রায়ে স্বাক্ষর করা যাবে না সেটা নিয়ম করে দেওয়া যেতে পারে।’

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বিচারপতি মানিকের এর আগেও কয়েক দফা চিঠি চালাচালির ঘটনা ঘটেছে। গত ২ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের নামে শামসুদ্দিন চৌধুরীকে তার পেনশন বিষয়ক কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠির জবাবে গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি বরাবর একটি চিঠি লেখেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে দিয়ে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতিকে চিঠি দেওয়া শুধু অশোভনীয় ও অসৌজন্যমূলকই নয়, সহকর্মী বিচারকদের প্রতি চরম হেয় ও অবমাননার বহিঃপ্রকাশ।’ এর মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের সব বিচারপতিদের অসম্মান করেছেন বলেও ওই চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি। এমনকি ওই চিঠির জের ধরেই প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছেও তিনি চিঠি দিয়েছেন বলে সেসময়ে সাংবাদিকদের সামনে দাবি করেন।

/এফএস / এএইচ /