খাদ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন আপিল বিভাগ

খাদ্যমন্ত্রীর আদালত অবমাননামৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মানবতাবিরোধী অপরাধী মীর কাসেম আলীর রায়ের আগে আপিল বিভাগ ও বিচারপতিদের নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ‘অবমাননাকর’ মন্তব্যের বিপরীতে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট নন আপিল বিভাগ। তাকে আবারও ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ রবিবার নোটিশের জবাবের শুনানিকালে আপিল বিভাগ এ কথা বলেছেন। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়ার পর দুই মন্ত্রী নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তার মধ্যে খাদ্যমন্ত্রীর আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি এবং বিচারাধীন বিষয়ে বিরূপ মন্তব্যের বিষয়ে আগামী ২৭ মার্চ ফের সর্বোচ্চ আদালতে হাজির হতে হবে দুই মন্ত্রীকে। রবিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৭ বিচারপতির বেঞ্চ এসব আদেশ দেন। শুনানিকালে আপিল বিভাগ বলেন, রায়ের আগেই এ দুই মন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন বলে আশা করেছিলেন তারা। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেছিলেন প্রধান বিচারপতি।
আজ রবিবার শুনানিকালে খাদ্যমন্ত্রীর দেওয়া ব্যাখ্যা তার আইনজীবী পড়ে শোনানোর পর আপিল বিভাগ এতে সন্তুষ্ট নন বলে মন্তব্য করেন। সকালে সর্বোচ্চ আদালতের তলবে হাজির হন দুই মন্ত্রী। ওই দিন আদালতে মোজাম্মেল হকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। কামরুল ইসলামের পক্ষে ছিলেন আবদুল বাসেত মজুমদার।

গত ৫ মার্চ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে বাদ দিয়ে মীর কাসেমের মামলার আপিল শুনানি পুনরায় করার দাবি জানান খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইমলাম।

সভায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বলছি, এ রায় নিয়ে যে শঙ্কা, তা এখন একটি সংকটে পরিণত হয়েছে। তবে এই সংকট আমাদের সৃষ্ট নয়। সংকট সৃষ্টি করেছেন আমাদের মাননীয় প্রধান বিচারপতি। এটাই আমাদের দুঃখ।’ এ ঘটনায় গত ৮ মার্চ খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে তলব করেন পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে নোটিশ জারি করেন।

সরকারের দুই মন্ত্রীকে ১৫ মার্চ সকাল ৯টায় সর্বোচ্চ আদালতে হাজির হয়ে তাদের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। অন্যদিকে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয় ১৪ মার্চের মধ্যে। নোটিশে কেন তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না- তা দুই মন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছেন আপিল বিভাগ। দুই মন্ত্রীর পক্ষে ১৪ মার্চ নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় নোটিশের জবাব দাখিল করেন।

এর আগে গত ১৫ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক হাজিরা দেন। তবে, বিদেশে থাকায় সেদিন হাজিরা দিতে পারেননি খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। তার সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে ২০ মার্চ ফের দুই মন্ত্রীকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৯ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ।

তলবাদেশ ও নোটিশ জারির সময় সর্বোচ্চ আদালত বলেন, ‘গণমাধ্যমে তাদের যেসব বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশ করা হয়েছে তা অশোভন ও অবমাননাকর। এ বক্তব্যগুলোতে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিরা স্তম্ভিত। এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ হয়েছে বলে মনে করি।’

/ইউআই /বিটি/এএইচ/