দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট

ব্রাজিলে একটি যুগের সমাপ্তি

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফের অভিশংসনের পক্ষে রায় দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেট। এর আগে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে অভিশংসিত হন তিনি। উচ্চকক্ষেও তিনি অভিশংসিত হবেন কিনা, তা নিয়ে ২০ ঘণ্টার বিতর্ক হয়। বিতর্ক শেষে তিনি অভিশংসিত হন। সিনেটের এই রায়ের কারণে আপাতত অন্তত ছয় মাসের জন্য প্রেসিডেন্টের পদ হারাচ্ছেন রৌসেফ। রৌসেফকে চূড়ান্তভাবে পদচ্যুত করার প্রশ্নে ওই ছয় মাস সিনেটে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। আর ততদিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মিশেল তেমার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে এর মধ্য দিয়ে হয়তো ব্রাজিলে একটি যুগের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। সেটা হচ্ছে দিলমা রৌসেফ যুগ।

রৌসেফকে অভিশংসিত করতে বৃহস্পতিবার সিনেটে ভোটাভুটি হয়। এর আগে রৌসেফের অভিশংসন প্রশ্নে ২০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সিনেটে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।ভোটাভুটিতে ৫৫ সিনেটর অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেন। আর বিপক্ষে ভোট পড়ে ২২টি।

ব্রাজিলের সংবিধান অনুযায়ী, সিনেটে অভিশংসন প্রক্রিয়া চলার সময় প্রেসিডেন্ট তার পদে বহাল থাকতে পারেন না। ফলে রৌসেফের অভিশংসন প্রস্তাবটি নিয়ে সিনেটে যে ১৮০ দিনের বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে, সে সময় ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না তিনি। সে অনুযায়ী ৫ আগস্ট থেকে রিও ডি জেনিরোতে শুরু হতে যাওয়া অলিম্পিক গেমসের সময়ও প্রেসিডেন্ট থাকছেন না তিনি।

TWP

১৮০ দিনের বিতর্ক শেষে সিনেটে অভিশংসন প্রশ্নে চূড়ান্ত ভোটাভুটি হবে। সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোট যদি অভিশংসনের পক্ষে যায় তবেই কেবল প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফ স্থায়ীভাবে পদচ্যুত হবেন।

প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো ২০১৪ সালে পুনঃনির্বাচনের সময় বাজেট আইন ভঙ্গ করে সরকারি হিসেবে কারসাজি করেছিলেন তিনি। রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পেট্রোবাসের কোটি টাকার একটি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। যদিও রৌসেফ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এরপরও তার অভিশংসনের দাবি ওঠে। আর অভিশংসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ১৭ এপ্রিল নিম্ন কক্ষে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে হেরে যান রৌসেফ। এরপরই উচ্চ কক্ষ সিনেটে অভিশংসন প্রস্তাবটি যায়। তবে অভিশংসন প্রক্রিয়া যেন না শুরু তার জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যান রৌসেফ। সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্টেরও শরণাপন্ন হন তিনি। তবে তার আবেদনটি নাকচ হয়ে যায়।

এদিকে জাতির উদ্দেশে আস্থার ডাক দিয়েছেন ব্রাজিলের নতুন অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট মাইকেল তেমার। রৌসেফ বরখাস্ত হওয়ার পরপরই তার শত্রু হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠা ব্রাজিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল তেমার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি।

ভাষণে তেমার বলেন, ‘ব্রাজিলে শান্তি ফিরিয়ে আনা এবং ঐক্য জরুরি। আমরা এমন একটি সরকার গঠন করব, যা জাতিকে রক্ষা করবে।’

তেমার জানান, তার প্রধান কাজ হবে অর্থনীতিতে প্রাণশক্তি ফিরিয়ে আনা।

দায়িত্ব নিয়ে একটি ব্যবসাবান্ধব মন্ত্রিপরিষদ ঘোষণা করেছেন মাইকেল তেমার। ডানপন্থী দল পিএমডিবি’র সদস্য তেমার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান হেনরিকে মেইরেলেসকে অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত করেছেন। তেমার বলেন, বিনিয়োগ আকর্ষণ ও অর্থনীতিকে ফের বাড়ন্ত করে তুলতে দেশের বিশ্বাসযোগ্যতা পুনর্গঠন জরুরি।

এদিকে সিনেটের ভোটের পর রৌসেফ এক ভাষণে বলেন, এটি তার বিরুদ্ধে ‘অভ্যুত্থান আর তামাশা’। রৌসেফ বলেন, পরিকল্পিত চক্রান্তের অংশ হিসেবে তার বিরুদ্ধে অভিশংসনের এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সূত্র: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।

/এমপি/