দ্য হিন্দু

উপদ্রুত অঞ্চলে সশস্ত্র বাহিনীর দায়মুক্তি বাতিল করল সুপ্রিম কোর্ট

সশস্ত্র বাহিনীর কারণে প্রতিটা নিহতের ঘটনায় যথাযথ তদন্ত হতে হবে বলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় জানিয়েছেন। এই বিষয়টিকেই প্রধান শিরোনাম করেছে প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।

the-hindu-09-07-2016

শুক্রবার বিচারপতি মদন বি. লকুর এবং বিচারপতি ইউ.ইউ. ললিতের একটি বেঞ্চ ৮৫ পৃষ্ঠার এক ঐতিহাসিক রায়ে জানিয়েছেন, ‘এটা কোনও বিষয় নয় যে, আক্রান্ত ব্যক্তি একজন জঙ্গি অথবা সন্ত্রাসী, আক্রমণকারী একই ব্যক্তি অথবা রাজ্য যেই হোক না কেন, আইন সবার ওপর একই প্রকারে প্রয়োগ করা হবে। গণতন্ত্রের জন্য তা অপরিহার্য এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করা এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তা অপরিহার্য।’

এই রায়ের ফলে মণিপুরের পুলিশ এবং সেনাবাহিনী মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করতে পারবে না। এ ধরনের অভিযোগ উঠলে ফৌজদারি আদালতে বিচার হবে।

১৯৭৮ সাল থেকে মণিপুরে ১ হাজার ৫২৮ জনকে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ নথিবদ্ধ রয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ নিয়েও বিস্তারিত তথ্য তলব করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। কোনও স্বতন্ত্র সংস্থাকে দিয়ে এই বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এনকাউন্টারে নিহতদের পরিবারগুলোর এক সংগঠনের আবেদনের ভিত্তিতেই এ রায় দিয়েছেন দেশটির শীর্ষ আদালত। কেন্দ্রীয় সরকার এবং সেনাবাহিনী ফৌজদারি আদালতে অভিযুক্ত নিরাপত্তারক্ষীদের বিচার থেকে ছাড় দেয়ার আবেদন জানিয়েছিল। কিন্তু সেই আবেদন মঞ্জুর করেননি আদালত।

বিচারপতি লোকুর বলেছেন, ‘রাষ্ট্র যখন মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে কোনও ব্যক্তিকে হত্যা করে, তখন সেটা বিচারবহির্ভূত হত্যা ছাড়া অন্যকিছু নয়। সমাজ ও আদালত এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা মেনে নিতে পারে না। মণিপুরে প্রথা বহির্ভূত যুদ্ধ চলছে বলে সেনাবাহিনী দাবি করলেও সেখানে এমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, যাতে দেশের কোনও অংশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। সরকার এমন ঘোষণাও দেয়নি।

রায়ে আরও বলা হয়, সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এনকাউন্টারে নিহতের ঘটনার তদন্ত হওয়াটা বাধ্যতামূলক, তা দেশের মৌলিক অধিকারের পর্যায়ে পড়ে।

উল্লেখ্য, ১৯৫৮ সালের আর্মড ফোর্সেস (স্পেশ্যাল পাওয়ারস) অ্যাক্ট বা এএফএসপিএ অনুসারে, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা এতোদিন তাদের হামলায় নিহতের ঘটনায় দায়মুক্তি পেতেন। আর এর মধ্য দিয়ে কার্যত আইনের ঊর্ধ্বেই রাখা হতো তাদের। কোনও অভিযানে নির্বিচারে গুলি চালাতেও তাদের অনুমতির প্রয়োজন ছিল না। তবে এবার তাদের ওই ক্ষমতা খর্ব হচ্ছে। সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধেও এখন থেকে ফৌজদারি আদালতে আভিযোগ করা যাবে।

/এসএ/