দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

মুখ খুললেন ক্ষুব্ধ মোদি: গো-রক্ষকরা সমাজবিরোধী

ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সংগঠন স্বঘোষিত গো-রক্ষায় নেমেছে। নিজেদের তারা গো-রক্ষক ও গো –সেবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গো-রক্ষকদের কর্মকাণ্ড ভারতজুড়ে সমালোচিত হলেও চুপ ছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অবশেষে ক্ষমতা গ্রহণের প্রায় দুই বছর পর এ নিয়ে মুখ খুললেন তিনি। তথাকথিত গো-রক্ষকদের সমাজবিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি। রবিবার ভারতের অন্যতম দৈনিক পত্রিকা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস খবরটি প্রধান শিরোনাম প্রতিবেদন হিসেবে প্রকাশ করেছে।

শনিবার নয়া দিল্লির টাউন হলে জনসংযোগের জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘কিছু লোক দোকান খুলে বসেছে! এই গো-সেবক, গো রক্ষকদের দেখে আমার খুব রাগ হয়! এরা সারারাত অসামাজিক কাজকর্ম করে। আর সকাল হলেই গো-রক্ষক ও গো-সেবক হয়ে যায়।

মোদি বলেন, ‘রাজ্য সরকারগুলোকে বলছি, এদের বৃত্তান্ত তৈরি করলেই দেখবেন, এদের অধিকাংশই সমাজবিরোধী।’

মোদি আরও বলেন, ‘যত গরু জবাই করে মারা হয়, তার থেকে অনেক বেশি গরু মারা যায় প্লাস্টিক খেয়ে। যদি সত্যি গো-রক্ষক হতে হয়, তবে লোকের কাছে প্লাস্টিক যত্রতত্র না ফেলার আবেদন করুন। সেটাই বড় সেবা।’

দলিত ও সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর স্বঘোষিত গো-রক্ষকদের নির্যাতন একাধিক রাজ্যে মোদি সরকারকে বিপাকে ফেলেছে। বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে গো হত্যার অভিযোগে মহম্মদ ইকলাখকে পিটিয়ে হত্যা করেছিল গো-রক্ষকরা। তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কিন্তু মোদি এ বিষয়ে কখনও মুখ খুলেননি। সম্প্রতি গুজরাটের উনা ও মধ্যপ্রদেশে গো-হত্যা ও গো-মাংস নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে দলিত ও সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার পুরো পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। গুজরাটে দলিতরা কাজ বন্ধ করে পথে নেমেছেন। তাদের সব ক্ষোভ রাজ্য সরকার ও বিজেপির ওপর। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়েছে, আনন্দিবেন প্যাটেল মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেওয়ার পর কোনও দলিতকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়নি। এতেও দলিতদের ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যেই আবার গুজরাট ও উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন সামনে। এই সব রাজনৈতিক হিসেবে-নিকেশ মাথায় রেখেই মোদি গো-রক্ষকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন বলে মনে করছেন বিরোধীরা।

মোদি গো-রক্ষকদের বিরুদ্ধে জেহাদ জানিয়েছেন ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে ‘মাই গভ’ প্ল্যাটফর্মের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে। সেখানে ‘মাই গভ ’-এর বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন তিনি। প্রশ্ন ছিল, স্বেচ্ছাসেবক কী করে কাজ করবেন? এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মোদি নিজেই টেনে আনেন গো-রক্ষকদের প্রসঙ্গ। উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, আগে রাজা-বাদশাহদের লড়াইয়ে এই কৌশল নেওয়া হত। বাদশাহরা সেনার সামনে গরু রেখে দিতেন। অস্ত্র চালালে গরু মারা যাবে, তাই হিন্দু রাজা দ্বিধান্বিত হতেন। সেই সুযোগে বাদশাহ জিতে যেতেন।

তবে বিরোধীদেরও একহাত নিতেও ছাড়েননি মোদি। তিনি বলেন, পঞ্চায়েতে, পৌরসভায় ও রাজ্যে কোনও ঘটনা ঘটলেই প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হচ্ছে। এটা খুবই খারাপ প্রবণতা। এতে এসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেওয়ার প্রবণতা কমছে। সব জবাবদিহি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কেন চাওয়া হচ্ছে? সংসদে গ্রীষ্মকালীন অধিবেশনের শুরু থেকেই দলিত ও সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রশ্নে বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়েছেন মোদি। সম্ভবত সে কারণেই এ এ পাল্টা আক্রমণ বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।

/এএ/