দ্য গার্ডিয়ান

আসাদ সরকারকে লাখ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছে জাতিসংঘ

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান এবং তার সরকারকে লাখ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছে জাতিসংঘ। ত্রাণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতিসংঘ এই অনুদান দিয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। আর এই প্রতিবেদনটিকেই পত্রিকাটি মঙ্গলবার প্রিন্ট সংস্করণের প্রধান শিরোনাম করেছে।

the-guardian-30-august

এই অনুদান দেওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, এ ছাড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাদের হাতে বিকল্প ছিল না। তিনি বলেন, ‘সিরিয়ায় আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যত বেশি সম্ভব আক্রান্ত মানুষের কাছে পৌঁছানো। এক অনিরাপদ অবস্থায় অবরুদ্ধ দুর্গম জায়গাগুলোতে যারা যেতে পারে, তাদের খুঁজে বের করাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আর এজন্য আমাদের হাতে সীমিত বিকল্পই ছিল।’

জাতিসংঘ যাদেরকে অনুদান দিয়েছে তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিষিদ্ধের তালিকায় থাকা কোম্পানি, সিরিয়ার বিভিন্ন সরকারি বিভাগ এবং আসাদের স্ত্রী আসমা আল-আসাদ ও তার আস্থাভাজন রামি মাখলুফের নিয়ন্ত্রণাধীন দাতব্য সংস্থাও রয়েছে।

তবে সমালোচকদের মতে, জাতিসংঘ এখন আপোসের ঝুঁকিতে আছে। তাদের আশঙ্কা, বাশার আল-আসাদ সরকারের পক্ষের দাতব্য সংস্থাগুলোকে ত্রাণ সহায়তার জন্য যে অনুদান দেওয়া হয়েছে তা সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকাকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যবহার করা হবে। আর এর মধ্য দিয়ে হাজার হাজার বেসামরিকের মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে বিবেচিত আসাদ সরকারকেই সহায়তা দেওয়া হবে বলে আশঙ্কা করছেন সমালোচকরা।

বাশার আল-আসাদ

জাতিসংঘ বিভিন্ন খাতে আসাদ সংশ্লিষ্টদের অনুদান দিয়েছে। চাষাবাদ ও খামারের কাজ জোরালো করার জন্য সিরিয়ার সরকারকে ১৩ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান দিয়েছে জাতিসংঘ। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জ্বালানী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে অন্তত চার মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়া হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটিও ইইউ-এর নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে।

সিরিয়ার ন্যাশনাল ব্লাড ব্যাংকের জন্য পাঁচ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আর এ ব্লাড ব্যাংকটি আসাদ সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এখান থেকে যাদের প্রয়োজন তাদেরকে রক্ত সরবরাহ করা হবে, নাকি প্রথমে সামরিক বাহিনীতে রক্ত সরবরাহ করা হবে, তা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্বেগ ছিল।

বাশার আল আসাদের স্ত্রী আসমার দাতব্য সংস্থা সিরিয়া ট্রাস্ট চ্যারিটি-র সঙ্গে জাতিসংঘের দুটি সংস্থার অংশীদারত্ব রয়েছে। এ দাতব্য সংস্থাকে সাড়ে আট মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে জাতিসংঘ। আসাদের স্ত্রীও যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ-এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছেন।

বাশার আল আসাদ ও তার স্ত্রী আসমা আসাদ

সিরিয়ার অন্যতম ধনী ব্যক্তি রামি মাখলুফের মালিকানাধীন আল-বুস্তান অ্যাসোসিয়েশনকে দুই লাখ ৬৭ হাজার ৯৩৩ ডলার অনুদান দিয়েছে ইউনিসেফ। মাখলুফ আসাদের চাচাতো ভাই এবং বন্ধু। বেশ কয়েকটি সরকারপন্থী মিলিশিয়া গোষ্ঠীর সঙ্গে তার সংযোগ রয়েছে।

সিরিয়াটেল নামের একটি মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক চালান মাখলুফ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ নেটওয়ার্ককেও সাত লাখ ডলার অনুদান দিয়েছে জাতিসংঘ। মাখলুফের নামও ইইউ-এর নিষেধাজ্ঞায় রয়েছে।

জাতিসংঘের সংস্থাগুলো অন্তত আরও ২৫৮টি সিরীয় কোম্পানির সঙ্গে কার্যক্রম চালিয়েছে। তাদেরকেও বিভিন্ন পরিমাণে অনুদান দেওয়া হয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগেরই আসাদ সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।

ত্রাণ গ্রহণের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছে আছে সিরীয় শিশুরা

ত্রাণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জাতিসংঘের কর্মীরা দামেস্কের ফোর সিজন হোটেলে থাকেন। ২০১৪-১৫ সালে তাদের থাকা-খাওয়াবাবদ এ হোটেলকে ৯২ লাখ ৯৬ হাজার ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে। হোটেলটির এক তৃতীয়াংশের মালিকানা এখনও সিরিয়ার পর্যটন মন্ত্রণালয়ের হাতে। আর এ পর্যটন মন্ত্রণালয় ইইউ-এর নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে।

জাতিসংঘের দাবি, তাদের এ ত্রাণ কার্যক্রমের কারণে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বেঁচেছে। সিরিয়ায় কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে দেশটির সরকারের সঙ্গে কাজ করতে হবে বলেও উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘের মতে, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইইউ-এর নিষেধাজ্ঞা মেনে কাজ করার কোনও বাধ্যবাধকতা তাদের নেই। তারা কেবল জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা তালিকা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। তবে ওই ‘বিতর্কিত’ প্রত্রিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলেও জাতিসংঘ মনে করে।

/এসএ/