দ্য ব্রুনাই টাইমস

ভিয়েতনামের স্বাধীনতা দিবসে ব্রুনাইয়ের সুলতানের শুভেচ্ছা

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনামের স্বাধীনতা দিবস ২ সেপ্টেম্বর। এ উপলক্ষ্যে দেশটির সরকার ও জনগণের প্রতি অভিনন্দন জানিয়েছেন ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ। এ বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার শিরোনাম করেছে ব্রুনাইভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ব্রুনাই টাইমস।

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এ দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক বেশ পুরনো ও মজবুত।

১৯৪৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ভিয়েতনাম। দেশটি ইন্দো চীন উপদ্বীপের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। উত্তরে চীন, পশ্চিমে লাওস ও কম্বোডিয়া, দক্ষিণ ও পূর্বে দক্ষিণ চীন সাগর অবস্থিত। ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়। বৃহত্তম শহর হো চি মিন সিটি।

ভিয়েতনাম ভৌগোলিকভাবে সরু ও দীর্ঘ। এর ভূপ্রকৃতি বিচিত্র। উত্তর প্রান্তে ও মধ্যভাগের ভিয়েতনাম পাহাড়-পর্বতময়। উত্তরের উচ্চভূমিগুলো ধীরে ধীরে ঢালু হয়ে পূর্বদিকের প্রশস্ত, নদীবহুল উপকূলীয় সমভূমির সঙ্গে মিশে গেছে। সমভূমিগুলোতে নিবিড় কৃষিকাজ হয়। বহু শতাব্দী ধরে ভিয়েতনামের এগুলোতে অনেক বাঁধ তৈরি করে ও খাল কেটে সেচকাজ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।

মধ্য ভিয়েতনাম দেশের সবচেয়ে সরু অংশ। এখানে পর্বতগুলো সাগরপারের অনেক কাছে অবস্থিত। এমনকি কোনও কোনও জায়গায় এগুলো সাগরের একেবারে গা ঘেঁষে রয়েছে। দক্ষিণ ভিয়েতনাম মূলত মেকং নদীর অববাহিকা দ্বারা গঠিত প্রশস্ত। এই সমভূমি বেশ উর্বর। এখানে প্রচুর কৃষিকাজ হয় এবং মূলত ধান উৎপাদন করা হয়।

ভিয়েতনাম একটি কৃষিভিত্তিক সমাজ হিসেবে গড়ে ওঠে। এখনও এখানকার অধিকাংশ লোক গ্রামে বাস করেন। ২০০৩ সালের হিসাব অনুযায়ী শহরে শতাংশ লোকের বাস। তবে শহরমুখী জনসংখ্যার পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। ফলে হো চি মিন সিটি, হ্যানয় এবং অন্যান্য এলাকার জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ভিয়েতনামে প্রায় ৫০টির মত ভিন্ন জাতিগত ও ভাষাগত গোষ্ঠী বসবাস করেন। তবে ভিয়েত বা ভিয়েতনামীয় জাতির লোকেরাই সর্বতোভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ। ভিয়েতনামীয় জাতির লোকেরা আদিতে লোহিত নদীর উপত্যকায় বাস করত। নদীটি দক্ষিণ চীনে উৎপত্তি লাভ করে উত্তর ভিয়েতনামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে টোনকিন উপসাগরে পতিত হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতকে চীন অঞ্চলটি দখল করে। ৯৩৯ সালে ভিয়েতনামীয়রা স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তী ১০০০ বছর ধরে ভিয়েতনাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি গতিশীল সভ্যতায় পরিণত হয় এবং উপকূল ধরে দক্ষিণ দিকে বিস্তার লাভ করতে থাকে।

১৯ শতকের শেষদিকে ফ্রান্স ভিয়েতনাম আক্রমণ করে। ফরাসিরা দেশটিকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করে দেয়। অঞ্চলগুলোকে কম্বোডিয়া ও লাওসের সঙ্গে যুক্ত করে ইন্দোচীন ইউনিয়ন তথা ফরাসি ইন্দোচীন গঠন করে। ফরাসিরা নিজেদের সুবিধার জন্য ভিয়েতনামের সম্পদ আহরণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর (১৯৩৯-১৯৪৫), ভিয়েতনামে উপনিবেশ বিরোধীরা সাম্যবাদী দলের নেতৃত্বে ফরাসি শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা হয়।

১৯৫৪ সালে দিয়েন বিয়েন ফু-তে ভিয়েতনামী সেনারা ফরাসি সেনাদের যুদ্ধে পরাজিত করে। এরপর ভিয়েতনামকে সাময়িকভাবে দুইটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়-উত্তর ও দক্ষিণ। উত্তর ভিয়েতনামে একটি সাম্যবাদী সরকার এবং দক্ষিণ ভিয়েতনামে সাম্যবাদ বিরোধীরা শাসন করা শুরু করে। পরবর্তী ২০ বছর ধরে উত্তর ভিয়েতনামের নেতৃত্বে ভিয়েতনাম একত্রীকরণের একটি আন্দোলন শুরু হয় এবং দক্ষিণ ভিয়েতনামের সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় তাকে ব্যর্থ করে দেওয়ার চেষ্টা চালায়।

১৯৭৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সেনা সরিয়ে নেয়। ১৯৭৬ সালে দুই ভিয়েতনামকে একত্রিত করে একটি সাম্যবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়।

/এমপি/