দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল

কাবুলে ১০ ঘণ্টার রক্তাক্ত জিম্মিদশা

WSJকাবুলে বেসরকারি সংস্থা কেয়ার ইন্টারন্যাশনালের অফিসে ১০ ঘণ্টার রক্তাক্ত জিম্মিদশার অবসান ঘটেছে। জিম্মিদের মুক্ত করতে আফগান বাহিনী অভিযানে তিন হামলাকারী নিহত হয়। তবে অভিযান চলাকালে একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার কথা জানালেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেয় আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়টি নিয়ে বুধবার শিরোনাম করেছে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ইউরোপীয় সংস্করণ।

এর আগে সোমবার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে লক্ষ্য করে জোড়া বোমা হামলা চালায় তালেবান। হামলায় অন্তত ২৪ জন নিহত হন। এদের বেশিরভাগই নিরাপত্তারক্ষী। তবে তালেবান দাবি করে, নিরাপত্তা বাহিনীর ৫৮ সদস্যকে হত্যা করতে সমর্থ হয়েছে তারা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র সে সময় জানান, নিহতদের মধ্যে সামরিক বাহিনীর একজন জেনারেল পর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন। সোমবারের এই হামলায় প্রায় ১০০ জন আহত হয়েছেন।

উল্লেখ্য, আফগান কর্তৃপক্ষ আগামী মাসে ব্রাসেলসে এক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওই সম্মেলনে বিদেশি দাতাগোষ্ঠীদের সঙ্গে তালেবান সহিংসতা নিয়ে বৈঠকে বসবেন তারা। ঠিক সেই সময়ে একটি বেসরকারী সহায়তা সংস্থা লক্ষ্যবস্তু হলো। তবে কাবুলে হামলার ঘটনায় তালেবান দায় স্বীকার করলেও এখনও কেয়ার অফিসের জিম্মিকারীদের পরিচয় জানা যায়নি। কেউ ওই ঘটনায় দায় স্বীকারও করেনি।

সোমবার রাতের সেই জোড়া বোমা হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই কাবুলের কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল ভবনে ঢুকে সেই ভবনের বাসিন্দাদের জিম্মি করে ফেলে সন্ত্রাসীরা৷ মঙ্গলবার সকালে সেখানে পুলিশি অভিযান শুরু হয়। চলতে থাকে বন্দুকযুদ্ধ। কয়েক ঘণ্টার অভিযান শেষে কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল ভবনে পুলিশের সফল অভিযান শেষে আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘পুলিশের বিশেষ অভিযান শেষ হয়েছে। গতরাতে যারা কেয়ার ইন্টারন্যাশনালে হামলা চালিয়েছিল, তারা নিহত হয়েছে।'

অভিযান শুরুর আগে কেয়ার ইন্টারন্যাশনালের আশপাশের সব রাস্তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ৷ ওই অঞ্চলে বেশকিছু রেস্ট হাউস রয়েছে৷ অনেক বিদেশি নাগরিক থাকেন রেস্ট হাউসগুলোতে৷

কেয়ার ইন্টারন্যাশনালের অভিযান শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রথমে একজন বেসামরিক নাগরিকের নিহত হওয়ার খবর জানানো হয়েছিল৷ পরে অবশ্য দাবি করা হয়, অভিযানে তিন হামলাকারী নিহত হলেও কোনো বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি হয়নি৷ সন্ত্রাসীদের হত্যা করে ১০ বিদেশিসহ মোট ৪২ জনকে উদ্ধার করেছে বলেও দাবি করেছে পুলিশ৷

কাবুলে আমেরিকান ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে হামলা চালিয়ে ১৩ জনকে হত্যার দুই সপ্তাহের মাথায় সোমবারের জোড়া বোমা হামলা হয় । দুই হামলার ঘটনাতেই দায় স্বীকার করে তালেবান। তার আগে এ বছর ২৩ জুলাই তারিখে কাবুলের বিক্ষোভ সমাবেশে হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় অন্তত ৮০ জনকে। ওই হামলার দায় স্বীকার করে ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

উল্লেখ্য, আফগান তালেবানের শীর্ষ নেতা মোল্লা আখতার মনসুরের মৃত্যুর পর তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোল্লা হাবিবুল্লাহ আখন্দজাদাকে প্রধান নেতা নির্বাচন করা হয়। এ বছর ২৫ মে তালেবানের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, কেন্দ্রীয় নেতারা এক বৈঠকে মিলিত হয়ে মোল্লা হাবিবুল্লাহ আখন্দজাদাকে নতুন নেতা নির্বাচন করেন। উচ্চ পর্যায়ের কমান্ডারদেরকে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন নবনির্বাচিত তালেবান প্রধান। তিনি স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন আফগান সরকারের সঙ্গে কোন রকম শান্তি আলোচনায় যাওয়া হবে না। আখন্দজাদা অঙ্গীকার করেছেন, তিনি তালেবানদের মধ্যে মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের যুগ ফিরিয়ে আনবেন এবং নিবেদিতপ্রাণ নেতার মত সাধারণ জীবনযাপন করে শত্রুদের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রাখবেন।

/এমপি/