দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া

জাকির নায়েকের এনজিও ৫০ লাখ রুপি দিয়েছে রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশনকে

বাংলাদেশ ও ভারতে বিতর্কিত ইসলামি বক্তা ও পিস টিভির কর্নধার ড. জাকির নায়েকের এনজিও ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন (আইআরএফ) নিয়ম ভঙ্গ করে রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশনকে ৫০ লাখ রুপি অনুদান দিয়েছে। ২০১১ সালে ইউপিএ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে আইআরএফ এ অনুদান দেয়। শনিবার ভারতের অন্যতম পত্রিকা দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া প্রধান শিরোনাম প্রতিবেদন হিসেবে প্রকাশ করেছে।

শুক্রবার ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা আইআরএফ’কে ‘প্রায়োর পারমিশন’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এর আওতায় একটি সংস্থার জন্য যে কোনও ধরনের অনুদান ব্যবহারের আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে।

সূত্র জানিয়েছে, ‘এর আগে আইআরএফ-এর ওপর নিরীক্ষা চলাকালে এফসিআরএ ভঙ্গের বিষয়টি শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এক মিলিয়ন দিরহামের একটি  বিদেশি অর্থায়নের বিষয়ে ঘোষণা না দেওয়া, ১০ কোটি রুপির বিদেশি তহবিলকে ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে রাখা, বিদেশি অনুদানের অর্থ রাজীব গান্ধী চ্যারিটেবল ট্রাস্টের মতো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার মতো বিষয়গুলো। তদন্ত প্রতিবেদনে এই নিয়ম ভঙ্গের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। এই ফাইল এখনও এফসিআরএ বিভাগের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম সচিবের কাছে পৌঁছায়নি। একজন আন্ডার সেক্রেটারি কিছু নির্দেশনাসহ এটি ফেরত পাঠিয়েছেন।

গত ১৯ আগস্ট আইআরএফ-এর এফসিআরএ রেজিস্ট্রেশন নবায়ন করা হয়। চলতি মাসে এ বিষয়টি সামনে উঠে আসে। এরপরই এমএইচএ’র তিনজন কর্মকর্তাকে দায়িত্বে অবহেলার জন্য  সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।

আইআরএফের মুখপাত্র আরিফ মালিক বলেন, ‘আইআরএফের বিরুদ্ধে এমএইচএ যেসব অভিযোগ এনেছে, তাতে এখন অস্বস্তিতে পড়ে তারা আত্মরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে। তারা এগুলো আবিষ্কার করছেন। রাজীব গান্ধী চ্যারিটেবল ট্রাস্টে অনুদানের বিষয়ে উদ্বেগের কথা বলা হচ্ছে। আইআরএফ নানা ক্ষেত্রে অনুদান প্রদান করে থাকে। এরমধ্যে উচ্চ শিক্ষা, সার্জারি, মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের মতো বিষয়গুলো রয়েছে। আইআরএফ-এর চার্টারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সব ক্ষেত্রেই এ অনুদান প্রদান করা হয়। আইআরএফ-এর দাখিল করা বার্ষিক প্রতিবেদনে পরিষ্কারভাবে এ বিষয়গুলোর উল্লেখ রয়েছে।

কংগ্রেসের পক্ষ থেকে শুক্রবার স্বীকার করা হয়েছে যে, কয়েক বছর আগে আইআরএফ-এর তরফ থেকে রাজীব গান্ধী চ্যারিটেবল ট্রাস্টে অনুদান হিসেবে ৫০ লাখ রুপি প্রদান করা হয়েছিল। তবে দলটি বলছে, ড. জাকির নায়েকের কর্মকাণ্ড নিয়ে সম্প্রতি বিতর্ক উঠার পর ওই অর্থ ফেরত দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে দলের সাবধানতা প্রয়োগ করা উচিত ছিল কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক সিংভি বলেন, ‘সতর্কতার বিষয়ে আমার জানা নেই। কিন্তু আমি অবশ্যই মনে করি যে, এটা ব্যবহার করা প্রয়োজন ছিল। কারণ এটা বহু বছর আগে রাজীব গান্ধী চ্যারিটেবল ট্রাস্টকে স্বেচ্ছায় দেওয়া অর্থ। কারণ অনুদান প্রদানকারী সংস্থা কোনও সন্দেহভাজন তালিকা বা পর্যবেক্ষণ তালিকাতেও ছিল না।’

কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক সিংভি বলেন, ‘যাই হোক, সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে এটি আবিষ্কৃত হয়েছে। যে মুহূর্তে এটি আবিষ্কার হয় তখন আমরা কাগজপত্র পরীক্ষা করি। কয়েক মাস আগেও একটি রেমিটেন্স ফেরত দেওয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে আমি পুরোপুরি একমত যে, সন্দেহভাজন সংস্থার ব্যাপারে পূর্ণ সজাগ ও সতর্ক থাকা প্রয়োজন এবং এটা প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু এটা অবশ্যই ৫ থেকে ৬ বছর আগের ঘটনা, তখন এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্য সংশ্লেষের বিষয়ে কারও জানা ছিল না।

এর আগে গত মাসে আইআরএ’ নোটিস পাঠায় ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এফসিআরএ লঙ্ঘনের অভিযোগে পাঠানো ওই নোটিসকে কোনও এনজিও বা সংগঠনের এফসিআরএ নিবন্ধন স্থগিত বা বাতিলের প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

মুম্বাইভিত্তিক শিক্ষামূলক সংগঠন ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং আইআরএফ  এডুকেশনাল ট্রাস্ট এফসিআরএ-এর অধীনে নিবন্ধিত। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

/এএ/