ভোপালে আট সিমি সদস্য ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত

ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ভোপালে নিষিদ্ধ ঘোষিত মুসলিম ছাত্রসংগঠন স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়া (এসআইএমআই – সিমি)-র আট সদস্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভোপাল কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে এক কারারক্ষীকে হত্যার পর তারা পালিয়ে যান। এই খবরটিকেই মঙ্গলবার প্রধান শিরোনাম করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।  

the hindu

পুলিশ কর্তৃপক্ষের দাবি, রবিবার গভীর রাতে ভোপাল কেন্দ্রীয় কারাগারের এক কারারক্ষীকে মেরে ভারতে সিমি-র আট সদস্য পালিয়ে যান। পরে সোমবার সকালে ভোপালের অদূরে মালিখেড়া নামক একটি স্থানে পুলিশ ও এন্টি-টেরোরিজম স্কোয়াড (এটিএস)-এর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ওই কারাবন্দিরা নিহত হন বলে পুলিশ দাবি করে।

রবিবারই পলাতক সিমি-র ছাত্রনেতাদের খোঁজ দিতে পাঁচ লাখ রুপি পুরস্কারও ঘোষণা করা হয় রাজ্য সরকারের তরফে।

মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভুপেন্দ্র সিং দ্য হিন্দু-কে বলেছেন, তারা একটি ‘মই’ ব্যবহার করে রাত ১২টা থেকে ৩টার মধ্যে কারাগার থেকে পালিয়ে যান। তিনি আরও জানিয়েছেন, সোমবার সকাল ১১টার দিকে পুলিশের অভিযানে তারা নিহত হন।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত কারারক্ষী হেড কনস্টেবল রপমা শংকরের গলায় ধারালো স্টিলের টুকরা পাওয়া গেছে। পুলিশের ধারণা, তাকে কাঁটাচামচ দিয়ে আঘাত করা হয়ে থাকতে পারে।

পুলিশের ভাষ্যমতে, রবিবার রাত ২টা থেকে ৩টার দিকে জেলের এক নিরাপত্তারক্ষীকে কাঁটাচামচ দিয়ে গলা কেটে খুন করে ওই আট ছাত্রনেতা।

রাজ্য পুলিশের আইজি যোগেশ চৌধুরী জানান, ‘আমরা ওই আট জনের খোঁজ পেয়ে সেখানে গেলেই তারা আমাদের ওপর গুলি বর্ষণ করে। এরপর পুলিশের তরফে পাল্টা গুলি চালালে তারা নিহত হন।’

তবে পুলিশ ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বলে দাবি করলেও মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতাসীন বিজেপি-র রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভুপেন্দ্র সিং বলেছেন, সোমবার ‘ওই আটজন কাঁটাচামচ দিয়েই পুলিশকে হামলা করেছিলেন। তখন পুলিশের গুলিতে তারা নিহত হন।’

1e789443af6ffe6fe7390c3377163fd2-5817d1eb10b29

ওই ঘটনার পর ঘটনাস্থলের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। যেখানে নিহতদের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। আর তাদের খুব কাছ থেকে গুলি করছেন এক পুলিশ সদস্য। কিন্তু তাদের কাছে কোনও অস্ত্র দেখা যায়নি। এক পুলিশ (এটিএস) সদস্যকে দেখা যায়, এক মরদেহের প্যান্টের পকেট থেকে ছুরির মতো কিছু একটা বের করতে। কিন্তু নিশ্চিতভাবেই সেখানে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়নি।

এই ঘটনায় তিন নিরাপত্তা রক্ষীকে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কারাগারের সুপারইনটেন্ডেন্ট অখিলেশ তোমারকেও  সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বন্দি পালানোর ঘটনার বিস্তারিত তথ্য রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও।

‘বন্দুকযুদ্ধে’ সিমি-র নিহত ছাত্রনেতারা হলেন – মেহবুব গুড্ডু ওরফে মল্লিক, মোহাম্মদ খালিদ আহমদ, আমজাদ খান, মুজিব শেখ, মোহাম্মদ আকিল খিলজি, জাকির হোসেন সাদিক, মোহাম্মদ সালিক সাল্লু এবং আবদুল মজিদ।

পুলিশের ভাষ্যমতে, ওই আটজনই ২০০৮ সালে আমেদাবাদ সিরিয়াল বোমা বিস্ফোরণ মামলা এবং দুই বছর আগে পুনে, করিমনগর ও চেন্নাইয়ের বিস্ফোরণেও জড়িত ছিল।

নিহত আট ছাত্রনেতা

১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ছাত্র সংগঠন এসআইএমআই বা সিমি। এই সংগঠনটির বিরুদ্ধে নাশকতায় মদদ দেওয়ার অভিযোগ এনে ২০০১ সালে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারতের তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকার। তবে এখনও পর্যন্ত ওই সংগঠনটির কোনও সহিংস কর্মকণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি।

কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ চৌহান।

তবে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ এবং কারাগার থেকে পালানোর ঘটনায় সন্দেহ প্রকাশ করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন বিরোধী দলীইয় নেতারা।

/এসএ/