দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে নেওয়া প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন হাইয়ের অভিসংশনের সিদ্ধান্ত শুক্রবার বহাল রাখে দেশটির সাংবিধানিক আদালত। এই চূড়ান্ত অভিশংসনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হতে যাচ্ছেন তিনি। পার্ক জিউন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, মেয়াদ শেষের আগে যিনি দায়িত্ব ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। শুক্রবার দেশটির সাংবিধানিক আদালতের আট বিচারপতির প্যানেল সর্বসম্মতিক্রমে পার্ক জিউনকে অভিশংসিত করার ব্যাপারে পার্লামেন্টের সিদ্ধান্তটি বহাল রাখে। এর মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল দায়মুক্তিও হারিয়েছেন হাই। তাকে এখন বিচারের মুখোমুখি করা যাবে।
হাইকে চূড়ান্তভাবে ক্ষমতাচ্যুত করার খবরে ক্ষোভ জানিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন শত শত সমর্থক। আদালতের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। অনেককে তখন কাঁদতেও দেখা যায়। সে সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হন।
অন্যদিকে শুক্রবার আদালতের রায়ে সন্তোষ জানিয়েছে পার্ক জিউন হাই এর বিরোধীরা। সিউলের বিভিন্ন সড়কে উল্লাসে মেতে ওঠেন পার্কের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনকারীরা।
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন পার্ক। এরপর থেকেই তার বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে। পার্কের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ, তিনি নিজ ক্ষমতাবলে তার বন্ধুকে দুর্নীতির সুযোগ করে দেন।
পার্ক জিউন-হাইয়ের বন্ধু চোই সুন-সিল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্কের সুবাদে অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদানের নামে ৬৫.৫ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেন। এর মধ্যে স্যামসাং এবং হুন্দাই-এর মতো কোম্পানিও রয়েছে। ওই অর্থ সন্দেহভাজন একটি ফাউন্ডেশনের নামে নেওয়া হয়। পরে তিনি সেখান থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হন।
পার্ক জিউনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বন্ধুকে ওই অর্থ তুলতে সাহায্য করেন। তিনি চোই সুন-সিলকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি চোই-এর রাষ্ট্রীয় নথি ফাঁস করতে সহযোগীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ প্রেসিডেন্টের বন্ধু চোই কোনও রাষ্ট্রীয় পদেই নেই।
গত ডিসেম্বর থেকে পার্ককে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে রাখা হয়েছিল। আর এ সময় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার (১০ মার্চ) পার্ক জিউন হাইকে অভিশংসিত করা নিয়ে পার্লামেন্টের নেওয়া সিদ্ধান্তটি বহাল রাখে আদালত। দেশটির সাংবিধানিক আদালতের আট বিচারপতির প্যানেল সর্বসম্মতিক্রমে পার্ক জিউনকে অভিশংসিত করার ব্যাপারে পার্লামেন্টের সিদ্ধান্তটি বহাল রাখে।
এর মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল দায়মুক্তিও হারিয়েছেন হাই। তাকে এখন বিচারের মুখোমুখি করা যাবে। মে মাসের শুরুতেই এখন দক্ষিণ কোরিয়াকে নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে হবে।
এদিকে, পার্ক জিউন হাই-এর অভিশংসন দ.কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে কোনও প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। শুক্রবার (১০ মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে তারা। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বস্তুত উ. কোরিয়ার বিরুদ্ধে দ. কোরিয়ার প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিলো।
মার্কিন সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের সঙ্গেই কাজ করে যাবে মার্কিন সরকার। কেবল তাই নয়, পরবর্তীতে যে ব্যক্তিই প্রেসিডেন্ট হোন না কেন এ সম্পর্ক অপরিবর্তিত থাকবে বলেও জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
/এমপি/