বিশ্লেষকরা বলছেন, আসিয়ান-ভুক্ত কোনও দেশের নেতাদের সঙ্গে শি জিনপিং সচরাচর এ ধরনের ইস্যু নিয়ে কথা বলেন না। তাই ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার এই আলাপ গুরুত্ববহ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে এর মধ্য দিয়ে আরও একটা বিষয় পরিষ্কার হয়েছে। আর তা হচ্ছে কোরীয় উপদ্বীপের সংঘাত শুধু দুই কোরিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই; বরং এটি এখন পুরো এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্যই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এর আগে চলতি মাসেই উত্তর কোরিয়ার নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার হুমকিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চীন। দেশটি বলছে, যে কোনও হঠকারী পদক্ষেপের কারণে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরুর মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছে বেইজিং। গত বুধবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এমন মন্তব্য করেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু কাং। তিনি বলেন, উত্তেজনা বৃদ্ধি করে এ ধরনের যে কোনও পদক্ষেপের বিরোধী চীন।
মার্কিন বিমানবাহী রণতরী কোরিয়া উপদ্বীপে মোতায়েনের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে যে যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়াকে সরে আসারও আহ্বান জানিয়েছে বেইজিং। এ যুদ্ধের ফলে আঞ্চলিক পরিস্থিতি ‘অনিশ্চিত’ হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
এক সংবাদ সম্মেলনে ওয়াং ই বলেন, ‘আমরা সব পক্ষকেই মৌখিক-প্রায়োগিক সব ধরনের উস্কানি দেওয়া কিংবা হুমকি দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়।’
যুদ্ধাবস্থা সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে ওয়াং বলেছেন, ‘যুদ্ধ শুরু হলে সব পক্ষই তাতে হারবে, কোনও পক্ষই জয়ী হবে না। যে কোনও মুহূর্তে সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কায় আছে আরেক পক্ষ। এ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই অত্যন্ত সতর্ক থাকা উচিত।’
উল্লেখ্য, কোরিয়া উপদ্বীপ অভিমুখে রয়েছে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ভিনসন স্ট্রাইক গ্রুপ। ওদিকে ষষ্ঠ পারমাণবিক পরীক্ষার প্রস্তুত উত্তর কোরিয়া। শনিবার উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সুং-এর ১০৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের সময়ে ৬ষ্ঠ পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালানো হতে পারে। এ নিয়ে উত্তর কোরিয়া-মার্কিন সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করছে। উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে ‘ধৈর্যচ্যুতি’ ঘটেছে বলে ইতোমধ্যেই সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সিরিয়ায় বিষাক্ত সারিন গ্যাস হামলার পর পরই উত্তর কোরিয়ার একটি উপদ্বীপের দিকে নৌবহর পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকেও পাল্টা হুমকি দিতে ছাড়েননি উ. কোরীয় প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। পিয়ংইয়ং অভিযোগ করে বলেছে, এ পদক্ষেপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোরিয়া উপদ্বীপকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে।
চীন তার দোরগোড়ায় এমন সামরিক উত্তেজনা নিয়ে প্রবল দুশ্চিন্তায় পড়েছে। যুদ্ধ বাধলে উত্তর কোরিয়া ভেঙে পড়বে এবং চীন সীমান্তে সংকট সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা তাদের। তাই উত্তেজনা কমাতে চীন শান্তিপূর্ণ সমাধান চাইছে।
/এমপি/