গার্ডিয়ান জানায়, সন্ত্রাসবাদ ও পর্নোগ্রাফির মতো বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে ফেসবুকের দুইশ কোটি ব্যবহারকারী কী পোস্ট করতে পারবেন আর কী পোস্ট করতে পারবেন না তা বলা আছে ওইসব ফাঁস হওয়া নথিতে। তবে ফেসবুকের মডারেটরদের সূত্রে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে,সন্ত্রাস ও পর্নোগ্রাফির মতো ভয়াবহ বিষয়বস্তুগুলোতে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে ব্যর্থ হয় ফেসবুক।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, শতাধিক ট্রেনিং মডিউল, স্প্রেডশিট এবং ফ্লো চার্ট সম্বলিত এক নথি মিলেছে তাদের অনুসন্ধানে। ওইসব নথিতে সহিংসতা, ঘৃণাবাদী মন্তব্য, সন্ত্রাসবাদ, পর্ণোগ্রাফি ও বর্ণবাদের মতো বিষয়গুলোর প্রশ্নে ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা কী হবে,তা লিপিবদ্ধ রয়েছে।
গার্ডিয়ান আরও দাবি করেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নীতিমালা নিয়ে যখন বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে, ঠিক সেই সময়ে তাদের এই উন্মোচন বিশ্বজুড়ে এ সংক্রান্ত বিতর্ককে আরও জোরালো করে তুলবে।
ফেসবুকের ওইসব অভ্যন্তরীণ নথির মধ্যে খেলায় বাজি ধরা (ম্যাচ ফিক্সিং) আর মানুষের মাংস খাওয়ার মতো ভয়াবহ বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণের নীতিমালাও রয়েছে।
গার্ডিয়ান বলছে, ভুয়া সংবাদ-পর্নোগ্রাফি আর সন্ত্রাসবাদ প্রশ্নে ইউরোপ আর আমেরিকায় ভয়াবহ বিতর্কে জড়িয়ে পড়া ফেসবুকের উন্মোচনকৃত নথিগুলোতে ওই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের অভ্যন্তরীণ মডারেশন নীতিমালা প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে এলো।
গার্ডিয়ান ফেসবুকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মডারেটরকে উদ্ধৃত করে বলছে, বহু ব্যবহারকারীর এই সামাজিক যোগাযোগ তাদের সাইটে পোস্ট করা বিষয়বস্তু মডারেট করতে গিয়ে খুব কমই সময় পান। তারা একটি সিদ্ধান্ত নিতে বড়জোর ১০ সেকেন্ড সময় পান। ওই সূত্র গার্ডিয়ানকে জানিয়েছে, ‘ক্রমাগত ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। বিষয়বস্তুর ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারছে না এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।’
অন্যান্য মডারেটর সূত্রে গার্ডিয়ান আরও জানিয়েছে, পর্নোগ্রাফির মতো বিষয়বস্তুর বেলায় কোনও নির্দিষ্ট ও স্থায়ী নীতিমালা নেই ফেসবুকের।
গত বছর ফেসবুক মডারেটরদের কাছে সরবরাহ করা নথিগুলো দেখার দাবি করছে গার্ডিয়ান। ওই নথি অনুযায়ী, মডারেটরদের যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল তাহল:
- ‘কেউ ট্রাম্পকে গুলি কর’ এ ধরনের কোনও মন্তব্য থাকলে তা ডিলিট করা উচিত। কারণ, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি এক সুরক্ষিত পর্যায়ে আছেন। তবে ‘টু স্ন্যাপ অ্যা বিচ’স নেক’ কিংবা ফাক অফ এন্ড ডাই’ এ জাতীয় মন্তব্যগুলো রাখা যাবে। কারণ, এগুলোকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।
- সহিংস মৃত্যুর ভিডিও অস্বস্তির মনে হলে তা যে সব সময় ডিলিট করতে হবে তা নয়। কারণ, তারা মানসিক অসুস্থতাজনিত ইস্যুগুলো নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে সেগুলো সহায়ক হতে পারে।
- ধর্ষকাম কিংবা উদযাপনের উপকরণ না থাকলে যৌনতাবহির্ভূত শারীরিক নির্যাতন এবং বাচ্চাদের শাসানোর কিছু ছবি ডিলিট করা কিংবা সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার নেই।
- খুব হৃদয়বিদারক ও ‘বিরক্তিকর’ হিসেবে শনাক্ত হলে জীব-জন্তু নির্যাতনের ছবি শেয়ার করা যাবে।
- নগ্নতা ও যৌনতা সংক্রান্ত সব ধরনের হাতে তৈরি শিল্প প্রকাশের অনুমতি আছে। তবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে তেরি যৌন কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত শিল্পের ক্ষেত্রে তা করা যাবে না।
- নগ্নতা না থাকলে গর্ভপাতের ভিডিও প্রকাশের অনুমতি আছে।
- লাইভস্ট্রিমে নিজস্ব ক্ষতির প্রচেষ্টাকারী লোকজনকে পেসবুক অনুমোদন দেয়। তার কারণ, মর্মপীড়ায় থাকা লোকজনকে ফেসবুক সেন্সর করতে বা সাজা দিতে চায় না।
- সোশ্যাল মিডিয়ায় ১ লাখেরও বেশি অনুসারী যাদের রয়েছে তাদেরকে পাবলিক ফিগার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে এমন ব্যক্তিদের যে সুরক্ষা দেওয়া হয় তা পাবলিক ফিগারকে দেওয়া হবে না।
/এফইউ/