দ্য গার্ডিয়ান

ট্রাম্পের জলবায়ু চুক্তি প্রত্যাখ্যানে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ক্ষোভ

The Guardianপ্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার ঘোষণায় তুমুল সমালোচনা চলছে। চুক্তির সমর্থকদের মতে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সৃষ্ট ঝুঁকি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিকভাবে যে প্রচেষ্টা চলছে তাকে বাধাগ্রস্ত করবে ট্রাম্পের এ ঘোষণা। ফলে ট্রাম্পের ঘোষণায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চুক্তির সমর্থক মার্কিনিরা। অবশ্য, জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন মার্কিন রিপাবলিকান নেতৃবৃন্দ ও কয়লা শিল্পের সঙ্গে জড়িত লোকজন। এ বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার শিরোনাম করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে দেওয়া এক ভাষণে প্যারিস চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তার অভিযোগ, এ চুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হবে। দেশ আর্থিক লোকসানের মুখোমুখি হয়ে নিঃস্ব হতে শুরু করবে। অবশ্য, ঠিক কবে প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসবে তার সময়সীমা জানাননি ট্রাম্প। নিয়ম অনুযায়ী, কোনও দেশ চুক্তিতে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার পর তিন বছরের আগে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পারে না।

বৃহস্পতিবার ট্রাম্প জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণার দেওয়ার পর সমালোচনার ঝড় শুরু হয়। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন। আর সেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণায় ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ও শহরগুলো ট্রাম্পের এ উদ্যোগ বাতিল করার জন্য এগিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন সাবেক এ প্রেসিডেন্ট। ওবামা বলেন, ‘বিশ্বে আমেরিকান নেতৃত্বের অনুপস্থিতি তৈরি করে এ প্রশাসন গুটিকয়েক দেশের সঙ্গে যোগ দিয়েছে যারা ভবিষ্যতকে প্রত্যাখ্যান করছে। তারপরও আমি একটি ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। আমি আশা করি আমাদের অঙ্গরাজ্যগুলো, বিভিন্ন শহর এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো এ চুক্তিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর পদক্ষেপ নেবে এবং আমরা পৃথিবীকে যেমন করে পেয়েছি তেমন করেই তা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সুরক্ষিত রাখবে।’

বৃহস্পতিবার চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দিতে গিয়ে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমাকে পিটসবার্গের জনগণ ভোট দিয়ে জয়ী করেছেন,প্যারিসের জনগণ না। আমি এ চুক্তি থেকে সরে এসে নতুন চুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। যে চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে না।’

প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের বিপন্নতার প্রেক্ষিতে গত বছরের ডিসেম্বরে প্যারিসে কপ ২১ নামের একটি সম্মেলনে প্রথমবারের মতো একটি জলবায়ু চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হন বিশ্বনেতারা। যুক্তরাষ্ট্র এবং আরও ১৮৭টি দেশ ওই সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তির আওতায় বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।  সিরিয়া ও নিকারাগুয়া ওই চুক্তির অন্তর্ভূক্ত ছিল না।

গতবছর নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিতে ট্রাম্প বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে তিনি দেশের তেল ও কয়লা কোম্পানিকে সাহায্যের উদ্যোগ নেবেন। তখন মানুষের তৈরি এই বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ‘ভাঁওতাবাজি’ বলে অভিহিত করেছিলেন ট্রাম্প। গত সপ্তাহে শিল্পোন্নত সাতটি দেশের জি-৭ সম্মেলনের চূড়ান্ত ইশতেহারে যুক্তরাষ্ট্র ব্যতিত অন্য দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্রতা হ্রাসের বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় লিখেছিলেন, ‘আমি প্যারিস চুক্তি নিয়ে ওয়াশিংটনে পৌঁছে আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’

বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে দেওয়া এক ভাষণে প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প দাবি করেন, ওই চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি প্রতিবছর ৩০ হাজার কোটি ডলার কমবে। সেই সঙ্গে প্রায় ৬৫ লাখ মার্কিন জনগণ কর্মসংস্থান হারাবে। এর জায়গা চীন ও ভারত দখল করে নেবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন ট্রাম্প।

/এমপি/