দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট

কাতারকে একঘরে করলো আরব দেশগুলো

TWPসৌদি আরবের নেতৃত্বে কাতারকে একঘরে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছয় আরব দেশ। ৫ জুন ২০১৭ সোমবার এ দেশগুলো কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয়। দেশগুলো হচ্ছে: সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন, লিবিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন। দেশগুলোর পক্ষ থেকে কাতারের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা তৈরি ও সন্ত্রাসবাদ উসকে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে কাতার বলছে, ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর লক্ষ্য পরিষ্কার। তারা আমাদের ওপর রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার এবং খবরদারি করতে চায়। এটা কাতারের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত।’ এ বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার শিরোনাম করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।

বিশ্বে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), কম ঘনত্বের তরল জ্বালানি এবং প্রাকৃতিক গ্যাসজাত শোধিত দ্রব্যের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী দেশ কাতার। দেশটি বিশ্বের মোট এলএনজি চাহিদার প্রায় এক তৃতীয়াংশই সরবরাহ করে থাকে। ফলে সৌদি আরবের নেতৃত্বে ছয় আরব দেশের কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণার পরপরই বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, তেলের আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৫০ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়েছে। ইউএস হেনরি হাবে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়ে মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট প্রতি ৩ দশকি ০৪০ ডলার হয়েছে।

কাতারের সঙ্গে ছয় দেশের সম্পর্ক ছিন্ন করার এ পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোকে ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। কাতার ইস্যুতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। এদিকে কাতারবিরোধী পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে তেল আবিব। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাভিগদর লিবারম্যান বলেছেন, নিঃসন্দেহে এটা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

পুতিন-এরদোয়ান আলাপে দুই নেতা কাতারের কূটনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। এর আগে তুরস্কের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সমস্যা সমাধানে কাতার ও অন্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে মধ্যস্থতায় প্রস্তুত আঙ্কারা।

তুরস্কের উপপ্রধানমন্ত্রী নুমান কুরতুলমাস বলেছেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে কাতারের সমস্যা সমাধানে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভোসুগলো বলেছেন, ‘উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্য ঐক্য ও সংহতিকে তুরস্ক তার নিজের ঐক্য হিসেবে বিবেচনা করে।’

ইরানের পার্লামেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আলাদিন বোরোউজার্দি। তার ভাষায়, কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের এমন পদক্ষেপ ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সৌদি সফরের ফল। বিষয়টি নিয়ে তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, ওমান ও ইরাকের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাফিস জাকারিয়া বলেছেন, কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে না ইসলামাবাদ।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের প্রতি কাতারের সমর্থনের কারণে দেশটির ওপর আগে থেকেই ক্ষুব্ধ তেল আবিব। ইসরায়েলের একটি রেডিও-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন ইসরায়েল ডায়মন্ড ইন্সটিটিউটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এলি আভিদার। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক সাবেক এ উপদ্ষ্টো একসময় কাতারে ইসরায়েলি গুপ্তচর হিসেবেও কাজ করেছেন। এলি আভিদার বলেন, হামাসের বেঁচে থাকার জন্য উপসাগরীয় অঞ্চলের সমৃদ্ধ অর্থনীতির এ দেশটি অপরিহার্য। কাতারের অর্থায়ন ছাড়া ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাসের পক্ষে ক্ষমতায় থাকা কিংবা ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করা সম্ভব নয়।

এলি আভিদার বলেন, ইসরায়েল হয়তো হামাসের ওপর প্রভাব বিস্তারে কাতারের বর্তমান কূটনৈতিক পরিস্থিতি ব্যবহারের চেষ্টা করবে। তবে এটা হবে ভুল। এখন যা ঘটছে সেটা দুনিয়াজুড়ে একটা নাটকীয় পরিবর্তনের পালা।

সাবেক এ ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মী বলেন, এই রাজনৈতিক কম্পনের ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যে হাজার হাজার বিদেশি নাগরিক কাতার ছাড়বেন। তবে এটা বুঝতে হবে যে, কাতারি নেতা বয়সে যুবক। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি পুরোপুরি একা হয়ে পড়েছেন। তিনি আতঙ্কের মধ্যে আছেন। প্রতিবেশী দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় সাধনের জন্য তিনি যে কোনও কিছুই করার চেষ্টা করবেন। হোয়াইট হাউসকে চাপ দিতে তিনি কাতারে ব্যবসা রয়েছে এমন মার্কিন কোম্পানিগুলোকে ব্যবহার করবেন।

/এমপি/