আনাদোলু পোস্ট

কুর্দিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ এরদোয়ানের

Anadolu Postইরাকের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কুর্দিস্তানের স্বাধীনতার প্রশ্নে অনুষ্ঠিত গণভোটকে বিশ্বাসঘাতকতা বলে অভিহিত করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। তিনি বলেছেন, ইরাকি কুর্দিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ইতিহাসের সর্বোৎকৃষ্ট স্তরে ছিল। অথচ তারা আমাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা বা পরামর্শ করেনি। এটা বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। দৃশ্যত তাদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থানই ভুল ছিল। ২৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার শিক্ষাবিদদের এক অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন এরদোয়ান। এ বিষয়টি নিয়ে বুধবার শিরোনাম করেছে তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু পোস্ট।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, কুর্দিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ এ অঞ্চলকে জাতিগত যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে। আমরা নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন শুরু করলে আপনারা মাঝখানে পড়ে থাকবেন। আমরা কপাট বন্ধ করে দিলে আপনাদের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।

রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বলেন, আপনাদের এই স্বাধীনতা কে মেনে নেবে? ইসরায়েল? কিন্তু দুনিয়া শুধু ইসরায়েলকে নিয়েই নয়। শুধু তাদের কাছ থেকে আপনারা কতটুকু অর্জন করতে পারবেন?

তিনি বলেন, তুরস্কের ট্রাকগুলো উত্তর ইরাকে চলাচল বন্ধ করে দিলে সেখানে খাবার ও পোশাক সংকট দেখা দেবে। বারজানি ও কুর্দিস্তানের সরকার যদি এই ভুল পদক্ষেপ থেকে সরে না আসে তাহলে তাদেরকে জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক যুদ্ধের কলঙ্ক নিয়ে ইতিহাসের আস্তকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হতে হবে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করতে চাই না যে, শেষ পর্যন্ত তিনি এ কাজ করবেন।

তুরস্ক ও ইরানের মতো প্রভাবশালী আঞ্চলিক দেশগুলোর চাপ উপেক্ষা করে ২৫ সেপ্টেম্বর কুর্দিস্তানের স্বাধীনতার প্রশ্নে এ গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। মোট ৫২ লাখ ভোটারের ৭৮ শতাংশই ভোটাভুটিতে তাদের রায় দেন। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গণভোটের ফল আসতে পারে। তবে গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে রায় এলেই কুর্দিস্তান স্বাধীন হয়ে যাবে না। জনরায় পেলে বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে নতুন করে তৎপরতা চালাবেন কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারজানি। বিশেষ করে তুরস্ক ও ইরাকের সঙ্গে তাকে একটা বোঝাপড়ায় পৌঁছাতে হবে।

ইরাকি কুর্দিস্তান ছাড়াও তুরস্ক, ইরান ও সিরিয়ার কুর্দি অধ্যুষিত ভূখণ্ডের তিন কোটি মানুষকে নিয়ে নতুন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে কুর্দি জাতীয়তাবাদীরা। গণভোটের প্রশ্নও ছিল এমন, ‘আপনি কি চাইছেন কুর্দিস্তান ও এর বাইরের অন্যান্য (কুর্দিস্তানি) এলাকা নিয়ে একটি স্বাধীন দেশ হোক?”

ইরাকি কুর্দিস্তানের নিজস্ব পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত এবং সেনাবাহিনী আছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর আশঙ্কা, ইরাকি কুর্দিস্তান স্বাধীন হলে এটি মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি নতুন ইসরায়েলের জন্ম দেবে। ইরাকের ভাইস প্রেসিডেন্ট নুরি আল মালিকি বলেছেন, কুর্দিস্তান নামের কোনও দ্বিতীয় ইসরায়েলের অস্তিত্ব মেনে নেওয়া হবে না।

এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর কুর্দিস্তানের স্বাধীনতা নিয়ে প্রস্তাবিত গণভোট প্রত্যাখ্যান করে ইরাকের পার্লামেন্ট। পার্লামেন্টে এ সংক্রান্ত ভোটাভুটিতে গণভোটের বিরুদ্ধে ভোট দেন দেশটির অধিকাংশ এমপি। এ সময় প্রতিবাদে আসন ছেড়ে বেরিয়ে যান কুর্দিস্তানের এমপিরা।

ইরাকের স্পিকার সালিম আল-জাবুরি বলেন, এ ভোটের মাধ্যমে সরকারকে একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। আর তা হচ্ছে, দেশের সংহতি ধরে রাখতে সরকারকে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। কুর্দি নেতাদের সঙ্গে আন্তরিক আলোচনা শুরু করতে হবে।