শীর্ষ অক্সফাম কর্মকর্তার যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় দেশটিতে ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা অক্সফামের সব কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে হাইতি সরকার। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই কর্মকর্তাসহ অভিযুক্তরা তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে দেশটিতে স্থায়ীভাবে অক্সফামের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার শিরোনাম করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবামাদমাধ্যম দ্য টাইমস।
হাইতি সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে অক্সফাম। প্রতিষ্ঠানটির আইনজীবী অ্যালাইন লেমিথে একে ‘হঠকারী ও রাজনৈতিক’ পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অপরাধের সুনির্দিষ্ট কোনও প্রমাণ নেই বলেও দাবি করেন অক্সফামের আইনজীবী।
এদিকে হাইতিতে অক্সফামের সাবেক পরিচালক রোল্যান্ড ভ্যান হুওয়ারমেরিন-এর যৌনকর্মী ভাড়া করার ঘটনায় সংস্থাটিতে সাত হাজার ব্যক্তিগত অনুদান বাতিল করা হয়েছে। হাইতির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী মার্ক গোল্ডরিং। হাইতি’র জনগণ ও সাহায্যকর্মীদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছেন তিনি।
ব্রিটিশ এমপিদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থাটির এই প্রধান নির্বাহীকে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কমিটি তার কাছে হাইতিতে ২০১০ সালের ভূমিকম্পের পর দেশটিতে দায়িত্বরত অক্সফামের তৎকালীন পরিচালকের যৌন অসদাচরণের বিষয়ে জানতে চায়। এ সময় এমপিরা জানান, ওই ঘটনায় সংস্থাটিতে নিয়মিত অনুদান দেন এমন সাত হাজার ব্যক্তি গত ১০ দিনে তাদের অনুদান বাতিল করেছেন।
পার্লামেন্টারি কমিটির কাছে শিশু হত্যা নিয়ে করা এক মন্তব্যের জন্যও ক্ষমা চান অক্সফামের প্রধান নির্বাহী।
দাতব্য কাজের সময় সংস্থাটির কর্মীদের যৌনকর্মী ভাড়া করার বিষয়ে দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্ক গোল্ডরিং বলেছিলেন, ‘এই হামলার (সমালোচনা) গভীরতা ও ভয়াবহতা আপনাকে বিস্মিত করবে। এটা ভাবাবে যে, আসলে আমরা কী করেছি? আমরা কি শিশুদের তাদের দোলনার মধ্যে হত্যা করেছি?’
২০১৩ সালে অক্সফামে যোগ দেওয়া মার্ক গোল্ডরিং বলেন, চাপ ও হতাশায় নিমজ্জিত থেকে তিনি ওই মন্তব্য করেছিলেন এবং এজন্য তিনি খুবই দুঃখিত।
দুনিয়ার ৯০টিরও বেশি দেশে অক্সফামের প্রায় ১০ হাজার কর্মী রয়েছে। হাইতিতে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের যৌনকর্মী ভাড়া করার বিষয়ে তিনি বলেন, শুধু হাইতির মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বরং এটা বৃহত্তর সহায়তা কর্মসূচির প্রতি মানুষের সমর্থন হ্রাস করবে। এ ঘটনায় আমি দুঃখিত, আমরা দুঃখিত।
অক্সফাম কর্মীদের এ ধরনের আরও ২৬টি ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী।
অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের চেয়ার অব ট্রস্টিজ ক্যারোলিন থমসন এবং নির্বাহী পরিচালক উইনি বিয়ানেইম। দুইজনই পার্লামেন্টারি কমিটিকে জানান, হাইতিতে যা ঘটেছে তার জন্য তারা লজ্জিত।
ক্যারিবিয়ান দেশ হাইতিতে অসহায় নারীদের যৌন কাজে ব্যবহারের অভিযোগের পর আফ্রিকার দেশ শাদেও সংস্থাটির বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে। ফলে সংস্থাটি বেশ চাপের মুখে রয়েছে। এদিকে দাতাগোষ্ঠীগুলোও বিষয়টি নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সংস্থাটির ওপর চাপ দিচ্ছে। আর সরকারের পক্ষ থেকে পূর্ণ তদন্তের নির্দেশ ও অনুদান বন্ধের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
দ্য টাইমস-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, রোল্যান্ড ভ্যান শুধু যে হাইতির ভূমিকম্পপীড়িত নারীদের যৌন কাজে ব্যবহার করেছেন শুধু তাই নয়, অভিযোগ রয়েছে তিনি অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের দিয়েও একই কাজ করিয়েছেন।
দ্য টাইমসের খবরে অক্সফামের বিরুদ্ধে কর্মীদের এমন অপরাধের পরও দায়মুক্তি দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়। এমনকি ওই কর্মকর্তা অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেওয়ার সময়ও তার সম্পর্কে এসব তথ্য গোপন করেছিল অক্সফাম।
রোল্যান্ড ভ্যান হুওয়ারমেরিনকে ২০১১ সালে অক্সফাম থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। পরে তিনি বাংলাদেশে অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গারের মিশন প্রধান হিসেবে কাজে যোগ দেন। দ্য টাইমসের খবরে বলা হয়, অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গারের পক্ষ থেকে অক্সফামের কাছে হুওয়ারমেরিনের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হলেও কোনও সতর্কতা দেয়নি তারা। যদিও একই সময়ে তার বিরুদ্ধে অক্সফাম নিজস্ব তদন্ত চালাচ্ছিল। পরে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে যান হুওয়ারমেরিন।