দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস

যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রতার প্রত্যাশায় পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ উত্তর কোরিয়ার

উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া মধ্যে ঐতিহাসিক সমঝোতা প্রসঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সন্ধি ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা আক্রান্ত না হওয়ার নিশ্চয়তার বিনিময়ে পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগে সম্মত হয়েছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। দক্ষিণ করিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনকে কিম জং উন নিজেই বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে কোরীয় যুদ্ধ সমাপ্তির বিষয়ে রাজি হলে এবং উত্তর কোরিয়াকে আক্রমণ না করার নিশ্চয়তা দিলে তিনি শান্তি চুক্তি করতে করবেন। উত্তর কোরিয়া নেতার এই ভাষ্যকে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস ৩০ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত পত্রিকার প্রথম পাতার শিরোনাম করেছে। উত্তর কোরিয়ার এই বক্তব্যের ওপর দৃঢ়ভাবে আস্থা রাখতে পারছেন না যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। তিনি বলেছেন, এটা উত্তর কোরিয়ার বহু বছর ধরে চালিয়ে আসা প্রপাগান্ডার অংশ।Untitled

দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের মুখপাত্র উন ইয়ং চ্যাঙ শুক্রবারের সম্মেলনের সংক্রান্ত এমন অনেক বিস্ময়কর তথ্য জানিয়েছেন। যেমন, পারস্পারিক আস্থা গড়ে তুলতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আগেই কিম জং উন দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবাদিক ও বিশেষজ্ঞ এবং যুক্তরাষ্ট্রকে আমন্ত্রণ জানাবেন উত্তর কোরিয়াতে। তাদের উপস্থিতিতে উত্তর কোরিয়া তার ভূগর্ভস্থ একমাত্র পারমাণবিক পরীক্ষাগারটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেবে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, দুই বছরের মধ্যে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার যে প্রস্তাব রয়েছে সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা সতর্কতার সঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সমালোচকদের কেউ কেউ বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার এমন প্রতিশ্রুতির বিষয়ে চূড়ান্তভাবে আস্থা রাখা যায় না। কারণ দেশটি আগেও পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করে তা পালন করেনি। কিম জং উনের  আন্তরিক আচরণ শুধুমাত্র তার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া দেশটির বিরুদ্ধে থাকা নিষেধাজ্ঞা বাতিলের কৌশলও হতে পারে। ট্রাম্পের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন আর বোল্টন  বলেছেন, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের প্রক্রিয়ায় উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক অস্ত্র গবেষণার সঙ্গে সম্পর্কিত সব তথ্য দিয়ে দিতে হবে, যেসবের সত্যতা আন্তর্জাতিক পক্ষগুলো নিশ্চিত করবে।  

দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তা উনের লেখা বিবরণী থেকে জেনে নিউ ইয়র্ক টাইমস কিমের মন্তব্য উদ্ধৃত করেছে। কিম জং উন পানমুনজমের সম্মেলনে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনকে বলেছেন, ‘আমি জানি আমেরিকানরা আমাদের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই বিরূপ। কিন্তু যদি তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে তাহলে তারা বুঝতে পারবে দক্ষিণ কোরিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা বা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পারমাণবিক অস্ত্র হামলা করার মতো মানুষ আমি নই।’

কিন্তু উত্তর কোরিয়ার বক্তব্যের ওপর দৃঢ় আস্থা রাখতে পারছেন না যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোল্টন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে হামলা না করার অনুরোধ জানানো উত্তর কোরিয়ার পুরানো প্রোপাগান্ডা কৌশলের অংশ, যা তারা বহুবার ব্যহার করেছে। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে কিম জং উনের সমঝোতাটি ঐতিহাসিক হবে, আশা করছেন তিনি। উনের সঙ্গে চুক্তি করার জন্য না কি ট্রাম্প উন্মুখ হয়ে আছেন, তিনি চান যত দ্রুত সম্ভব চুক্তি করে ফেলতে।