দ্য হিমালয়ান

শেরপা সংকটে এভারেস্ট পর্যটন বাণিজ্য

বিপদজনকভাবে শেরপা সংকটের মুখে পড়েছে নেপালের অন্যতম পর্যটন খাত এভারেস্ট পর্যটন। এভারেস্টে উঠতে চাওয়া পর্যটকদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় গাইড হিসেবে কাজ করে অভিজ্ঞ শেরপারা। এভারেস্ট উপত্যকার নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠী শেরপারা পাহাড়ে চড়ায় অভিজ্ঞ। এভারেস্টে চড়তে যাওয়াদের জন্য প্রায় সমার্থক হয়ে উঠেছে শেরপা গাইড। বর্তমানে এদের সংকট হওয়ার খবরটিকে শনিবারের প্রধান শিরোনাম করেছে নেপালের সংবাদপত্র দ্য হিমালয়ান।দ্য হিমালয়ান
খবরে বলা হয়েছে, গত দুই দশকে এভারেস্টে চড়তে যাওয়া পর্যটকে সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে। তবে গাইড হতে চাওয়া শেরপাদের সংখ্যা বাড়েনি। একারণে নতুন নিয়োগ পাওয়া শেরপাদের দিয়েই কাজ চালাতে হচ্ছে।

গত বছর এভারেস্টে উঠেছিলেন ২০ বছর বয়সী দাওয়া সাঙ্গে শেরপা। এটা ছিল তার প্রথমবার। আর সঙ্গে ওঠা পর্যটকেরও প্রথমবার। নিচে নামার সময়ে ঠাণ্ডা আর অক্সিজেনের অভাবে তাদের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল। দুই আরোহী বরফ ভেঙে পড়ে যাওয়ার কয়েকঘণ্টা পর তাদের উদ্ধার করা হয়েছিল। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিল তারা। তাদের উদ্ধার করেছিল আং তেসেরিং লামা নামে এক গাইড। তিনি বলছিলেন, আমার বন্ধু আমাকে বললো সে হয়তো মারা গেছে তবে আমি দাওয়া সাঙ্গের নাড়ির স্পন্দন পাই। খুবই হাল্কাভাবে নড়ছিল তা। লামা তাকে অচেতন অবস্থায় টেনে নিচে নেমে আসে আর অন্যরা তার সঙ্গের পর্যটককে উদ্ধার করে। ঠাণ্ডায় জমে আঙুল হারিয়ে সাঙ্গে তার এভারেস্টে ওঠার ক্যারিয়ারের শেষ টেনেছেন।

অবশ্য সাঙ্গে ওই বছরেই গাইড হিসেবে কাজ করতে চায়নি। তার ইচ্ছা ছিল পাহাড়ে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী বয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করা। শেরপা হিসেবে কাজ করার আগে এই কাজ করে অভিজ্ঞতা নেয় অনেক তরুণ।

সাঙ্গে বলেন, আমি দ্বিতীয় দলে ছিলাম। এই দলটিতে প্রশিক্ষণ না পাওয়া শেরপারা সাধারণত খাবার ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী দ্বিতীয়, তৃতীয়, ও চতুর্থ বেস ক্যাম্পে বয়ে নিয়ে যায়।

তবে তার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান নেপালভিত্তিক অন্যতম বড় অভিযান পরিচালনাকারী সেভেন সামিট ট্রেক ওই সময়ে ৬০ জনেরও বেশি পর্বতারোহীর সঙ্গে চুক্তি করে।

সেভেন সামিট ট্রেকের প্রধান মিন্জমা শেরপা দাবি করেন, সাঙ্গে গাইড হওয়ার জন্য তৈরি ছিল। আর আগেও সে পর্বতে উঠেছে। তবে সাঙ্গে বলছে না সে আগে ওঠেনি।  বেসক্যাম্পের সূত্রগুলো বলছে, এই বছরে এরই মধ্যে সেভেন সামিট ট্রেকের অন্তত চার শেরপা ফ্রস্টবাইটে (তীব্র ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া) আক্রান্ত হয়েছে।

পাহাড়ে চড়তে চাওয়া প্রতিজনের কাছ থেকে ২০ হাজার মার্কিন ডলার নেয় সেভেন সামিট ট্রেক। অবশ্য অন্য কোম্পানিগুলোর থেকে এই অঙ্ক অন্তত তিনগুণ কম।সেভেন সামিট ট্রেক বলছে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রতিষ্ঠানগুলো তরুণ শেরপা গাইডদের প্রশিক্ষণে তারা কোনও অর্থ ব্যয় করছে না। মিন্জমা শেরপা বলেন, তারা শুধুমাত্র অভিজ্ঞ শেরপাদের নেয়। নতুন শেরপাদের প্রশিক্ষণে তারা কোনও অর্থ ব্যয় করে না।

১৯৯০ এর দশকে বাণিজ্যিকভাবে এই পর্যটন ব্যবসা শুরুর পর তখন থেকে কাজ করা অনেক অভিজ্ঞ শেরপা এখন অবসর নিয়েছেন। আর অন্যরা নেপাল ছেড়ে চলে গিয়ে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বি দেশগুলোতে তাদের সুনাম কাজে লাগাচ্ছে। আর এতে তারা নেপালের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ রোজগার করছে যা দিয়ে তাদরে ছেলেমেয়েরা কাঠমান্ডু, ভারত বা যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করছে।

১৯৯৪ সাল থেকে গাইডের কাজ করা কামি রিটা শেরপা চান না ছেলেমেয়েরা ঝুঁকিপূর্ণ এই পেশায় আসুক। তিনি বলেন, তারা শিক্ষিত ফলে অন্য কাজ খুঁজে নিতে পারবে। তিনি বলেন, পুরনো শেরপারা যদি তাদের সন্তানদের এই পেশায় না নিয়ে আসে তাহলে অবশ্যই শেরপা সংখ্যা কমবে।