দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস

ট্রাম্পের সঙ্গে আরব যুবরাজদের সম্পর্ক গড়ে দিয়েছিলেন যে ব্যবসায়ী

মুসলমানদের অভিবাসী হতে না দেওয়া থেকে শুরু করে আরও যেসব বক্তব্য ট্রাম্প তার নির্বাচনি প্রচার অভিযানের সময় দিয়েছিলেন তাতে ট্রাম্পকে নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল আরব অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে। এমন অবস্থায় দেশগুলোর শাসকদের কাছে ট্রাম্পকে একজন গ্রহণযোগ্য মানুষ হিসেবে তুলে ধরা এবং আরব নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের দূরত্ব কমিয়ে আনতে মূল ঘটকের কাজ করেছিলেন ট্রাম্পের বন্ধু এবং মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবাসা করা টম বারাক। সম্প্রতি আরব আমিরাতের ফাঁস হয়ে যাওয়া ইমেইল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমসের হাতে এসেছে। ফাঁস হওয়া সেসব ইমেইল থেকেই নিউ ইয়র্ক টাইমস জানতে পেরেছে মুসলমান অধ্যুষিত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে ঠিক কীভাবে ‘মুসলিমবিদ্বেষী’ হিসেবে পরিচিত হওয়া ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস ১৬ জুন ২০১৮ তারিখে মুদ্রিত সংখ্যার একটি শিরোনাম করেছে এ বিষয়ে, ‘দ্য টাইকুন হু সেট আপ অ্যারাব প্রিন্সেস উইথ ট্রাম্প।’nyt

২০১৬ সালের এপ্রিলে ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার পর যখন মুসলমানদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা বলেছিলেন, তখন ট্রাম্পকে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের শাসকরা টম বরাকের কাছে তাদের মতামত জানিয়েছিলেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ আল-ওতাইবা ইমেইলে টম বরাককে লিখেছিলেন, ‘আপনার বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে বিভ্রান্তি অনেক বেশি।’ অথচ ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ পেতে মধ্যপ্রাচ্যের ওপরই বারাক সুদীর্ঘকাল ধরে নির্ভর করে আসছেন। রাষ্ট্রদূত ওতাইবার সঙ্গেও বারাকের দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক। উপসাগরীয় অঞ্চলের দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন উল্লেখ করে বারাক রাষ্ট্রদূত ওতাইবাকে ইমেইলে লিখেছিলেন, ‘তার নিজের সংযুক্ত আরব আমিরাতে যৌথ বিনিয়োগ আছে!’ এই ইমেইল ২০১৬ সালের ২৬ এপ্রিলের।

নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, ওই ইমেইলর ধারাবাহিকতাতেই মধ্যপ্রাচ্য প্রসঙ্গে ট্রাম্পের পরিবর্তন শুরু হয়। যার ফলে মুসলমান বিদ্বেষ দিয়ে যাত্রা শুরু করা ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়ে ওঠেন মধ্যপ্রাচ্যের রাজদরবারগুলোর হোয়াইট হাউজে থাকা সর্বকালের সেরা বন্ধু। এই পরিবর্তন থেকে শুধু যে ট্রাম্পের পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে বদলাতে পারার বিষয়টি সম্পর্কে বোঝা যায় তা নয়, বরং ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মহলে টম বারাক যে বিশেষ একজন তাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনি একই সঙ্গে ছিলেন ধনী, বিশ্বস্ত বার্তাবাহক, নির্ভরযোগ্য এবং প্রভাবশালী।

ট্রাম্পের প্রচার অভিযান চলাকালে বারাক ছিলেন সবচেয়ে বড় তহবিল সংগ্রহকারীদের একজন। প্রচারা অভিযানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি সাবেক সহকর্মী পল ম্যানাফোর্টকে নিয়ে এসেছিলেন এবং তার সঙ্গে সৌদি ও আমিরাতিদের বৈঠক আয়োজন করিয়ে দিয়েছিলেন। ম্যানাফোর্ট আগে বারাকের সঙ্গে সৌদি আরবের প্রয়োজনে লেবাননে কাজ করতেন। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর টম বারাকই তার অভিষেক অনুষ্ঠানের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন।

টম বারাক লেবানিজ বংশোদ্ভূত খ্রিস্টান। ট্রাম্পের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল ১৯৮০ সালে। ব্যবসায়িক লেনদেনের সূত্রে তার তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আরবি ভাষা জানা মার্কিন নাগরিক টম মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ব্যবসা করতেন। তার ভাগ্য খুলে যায় যখন আরব বেদুইন মনে করে তিনি সৌদির তেল কোম্পানি আরামকোর একজন জ্যেষ্ঠ পরিচালককে ক্যালিফের বাসস্থানে নিয়ে যান। বারাকের সহায়তায় চিকিৎসা করিয়ে ফিরে যাওয়া ওই আরামকো পরিচালক তাকে সাড়ে তিনশোরও বেশি বাস আমাদানির কাজ পাইয়ে দিয়েছিলেন। সেই থেকে মধ্যপ্রাচ্যের রাজপরিবারের বিভিন্ন সফর-অনুষ্ঠান তদারকি করা এমন কি রাজপরিবাগুলোর যারা বিদেশে গিয়েছে তাদের ভালো-মন্দের খোঁজ খবর রাখার ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য সহযোগী হিসেবে মুল্যায়িত হন টম বারাক। আর তার সূত্রেই মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে ওঠে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের।