দ্য গার্ডিয়ান

যুক্তরাজ্যের ইহুদিদের জন্য লেবার পার্টি হুমকি নয়: করবিন

যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন তার দলের ভেতর থেকে ইহুদি বিদ্বেষ সমূলে উৎপাটনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর পাশাপাশি তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, দলের ভেতরে থাকা ‘অ্যান্টি সেমিটিজমের’ বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে তার গতি মন্থর ছিল। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাজ্যে ইহুদিদের জীবনযাপনের বিরুদ্ধে লেবার পার্টির অবস্থান কোনও হুমকি নয়। ইহুদি বিদ্বেষের বিষয়ে লেবার পার্টির ভূমিকা নিয়ে যুক্তরাজ্যে সমালোচনা হয়েছে। সমালোচকরা নিন্দার তীর নিক্ষেপ করেছেন ‘ইন্টারন্যাশনাল হলোকাস্ট রিমেমবারেন্স অ্যালায়েন্সের’ (আইএইচআরএ) সংজ্ঞা পূর্ণভাবে গ্রহণে লেবার পার্টির অনিচ্ছা দেখে। ইহুদি সংগঠনগুলোর শঙ্কার জবাবে জেরেমি করবিন বলেছেন, আইএইচআরএর সংজ্ঞা পূর্ণ রূপে গ্রহণ না করায় লেবার পার্টিকে নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে তা তিনি স্বীকার করছেন। আরও দ্রুত ইহুদি সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান ০৪ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মুদ্রিত সংখ্যার প্রধান শিরোনাম করেছে এ বিষয়ে, ‘লেবার ইজ নো থ্রেট টু জিউইশ লাইফ ইন ইউকে - করবিন।’Untitled

গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক নিবন্ধে জেরেমি করবিন লিখেছেন, ‘যারা ইহুদি বিদ্বেষের বিষ ছড়ায় তাদের জেনে রাখা উচিত, আমার নামে তারা সেটা করতে পারে না। তোমরা যারা এই কাজ করো তারা আমার সমর্থক হতে পার না এবং আমাদের আন্দোলনে তোমাদের কোনও স্থান নেই।’ তবে তিনটি ইহুদিবাদী পত্রিকা যে যৌথভাবে সম্পাদকীয় ছেপে বলেছে, লেবার সরকার গঠিত হলে যুক্তরাজ্যে ইহুদিদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে তাকে ‘ওভারহিটেড রেথোরিক’ আখ্যা দিয়েছেন করবিন।

করবিন ইহুদি বিদ্বেষের সংজ্ঞা নিয়ে তার আগের অবস্থানেই স্থির থেকেছেন। আইএইসআরএ তাদের সংজ্ঞায় বলেছে, ইসরায়েলের বিরোধিতাও ইহুদি বিদ্বেষে পরিণত হতে পারে। করবিন মনে করেন, ওই সংজ্ঞা পূর্ণ রূপে গ্রহণ করলে রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের সমালোচনার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই লেবার পার্টি সংজ্ঞাটি গ্রহণ করলেও ১১টি উদাহরণের ভাষা পরিবর্তন করেছে। এদের মধ্যে ইসরায়েল সংক্রান্ত উদাহরণটিও রয়েছে। এই পরিবর্তনের দরকার ছিল উল্লেখ করে করবিন লিখেছেন, ‘এ ধরণের ধারাকে ব্যবহার করে ইসরায়েলের সমালোচনা ঠেকাতে ইচ্ছুক পক্ষগুলো সুযোগ নেয়।’

শেষ পর্যায়ে করবিন লিখেছেন, ‘তবে আমি আশা করি যেসব বিষয় নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে এ মাসেই সেসবের  বিষয়ে জিউইশ লেবার মুভমেন্ট সহ অন্যান্য পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে।’

ইহুদি বিদ্বেষ নিয়ে দলের মধ্যেও চাপে পড়েছেন করবিন। লেবার পার্টির  একজন নেত্রী মারগারেট হজ করবিনকে ইহুদি বিদ্বেষী আখ্যা দিয়েছিলেন। এ নিয়ে দলের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরে যখন তাকে বলা হয়েছে, ক্ষমা চাইলে তার বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা হবে, তখন তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ইহুদিদের বিষয়ে লেবার পার্টির ভূমিকা নিয়ে করবিন প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখতে চেয়েছিলেন। অনুষ্ঠানস্থল হিসেবে তিনি ইহুদি জাদুঘরকে ব্যবহারে ইচ্ছুক ছিলেন। কিন্তু বিষয়টিকে ‘স্পর্শকাতর’ আখ্যা দিয়েছিল জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন প্রধান অ্যাবিগেইল মরিস সংবাদমাধ্যম জিউইশ ক্রনিকলকে বলেছিলেন, ‘পরিস্থিতি এখন খুবই নাজুক। ইহুদি জাদুঘরটি সম্পর্ক গড়ে তোলার কাজ করে। তবে কখনও কখনও বিষয়টি কষ্টকর হয়ে যায়। আমরা ক্ষত শুকানোর প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখতে চাই, পরিস্থিতি আরও বিগড়ে দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়।’

গার্ডিয়ানে প্রকাশিত করবিনের নিবন্ধকে গত এক সপ্তাহ ধরে এ বিষয়ে চলা উত্তেজনা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ আখ্যা দিয়েছে গার্ডিয়ান। কিন্তু করবিনের কথাতে সন্তুষ্ট নন যুক্তরাজ্যের ইহুদিরা। ‘জিউইশ লেবার মুভমেন্টের’ একজন মুখপাত্র মন্তব্য করেছেন, ‘আজকে দলের গঠন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আরেকটি নিবন্ধ প্রকাশ ছাড়া কিছুই ঘটেনি। আর কোনও আস্থা অবশিষ্ট নেই। আমরা আবারও সুস্পষ্ট পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি, শুধু মুখের কথার নয়।’