হিন্দুস্তান টাইমস

ভারতীয় রাজনীতি হারাল তার কাব্যিকতা

ভারতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী ৯৩ বছর বয়সে গত বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) মৃত্যুবরণ করেছেন। তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে আজ নয়া দিল্লির ‘রাষ্ট্রীয় স্মৃতি স্থলে’। ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন বাজপেয়ী ১২ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী হয়েছিল তিন বার। ব্রিটিশ ভারতে রাজনীতি শুরু করা অটল বিহারী বাজপেয়ী তার দলের হিন্দুত্ববাদী চরমপন্থা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেছেন, যা তাকে প্রধানমন্ত্রী পদে বিজেপির গ্রহণযোগ্য প্রার্থীতে পরিণত করেছিল। ভারতের পারমাণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটানো ও কার্গিল যুদ্ধের মতো ঘটনা তার আমলে ঘটেছে। অন্যদিকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় ভারত অনেক দূর এগিয়েছিল বাজপেয়ী সরকারের আমলে। রাজনীতির পাশাপাশি কবি হিসেবে পরিচিত বাজপেয়ীর মৃত্যুতে হিন্দুস্তান টাইমস ১৭ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মুদ্রিত সংখ্যার প্রধান শিরোনাম করেছে,‘পলিটিক্স লসেস ইটস পোয়েট্রি।’Capture

‘আল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট ফর মেডিক্যাল সাইন্সেসে’ (এইমস) তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন সেখানে তাকে দেখতে গেছেন এমন কি কংগ্রেসের সভাপতি রহুল গান্ধী ও রাজ্যসভায় বিরোধী দলীয় নেতা গোলাম নবী আজাদ। ২০০৯ সালে স্ট্রোক হওয়ার পর থেকেই বাজপেয়ীর স্বাস্থ্যের অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এইমসের ভর্তির সময় তার কিডনিতে সমস্যা থাকার কথাও জানা গিয়েছিল। তার মৃত্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘বাজপেয়ীর মৃত্যু তার জন্য ‘ব্যক্তিগতভাবেও এক অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি দেশের জন্য বেঁচেছিলেন এবং দশকের পর দশক ধরে দেশের জন্য অক্লান্তভাবে কাজ করেছেন।’ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী লিখেছেন, ‘আজ ভারত তার এক মহান পুত্রকে হারাল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীকে কোটি কোটি মানুষ শ্রদ্ধা করত।’

হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, বাজপেয়ীর সবচেয়ে বড় অর্জন ভারতীয় জনতা দলকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনতে প্রস্তুত করা এবং দলটির জন সমর্থন নিশ্চিত করা। এ কাজে তিনি ভারসাম্যপূর্ণ রাজনীতি করতেন যা তাকে তার দলের মধ্যে এক অনন্য নেতায় পরিণত করেছিল। ব্রিটিশ ভারতেই তার রাজনীতিতে হাতে খড়ি। প্রথমে তিনি আরএসএসে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৫১ সালে। আর ১৯৫৭ সালে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৬৮ সালে নির্বাচিত হনবিজেপির পূর্বসূরী সংগঠন ভারতীয় জনসংঘের সভাপতি।

১৯৭৭ সালে মোরারজি দেশাইয়ের সরকারে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। জনসংঘের সঙ্গে নীতিগত বিষয়ে দ্বিমতের সূত্রে তিনি নতুন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) গঠন করেন। তার নতুন দলের অন্যতম লক্ষ্যছিল ‘গান্ধিবাদী সমাজতন্ত্রের’ ভিত্তিতে কাজ করা।

ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর কংগ্রেসের পক্ষে জনসমর্থনের ঢেউ উঠলে চাপে পড়ে বিজেপি। এরকম পরিস্থিতিতে লাল কৃষ্ণ আদভানির নেতৃত্বে হিন্দুত্ববাদীদের ‘রাম জন্মভূমি’ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে বিজেপি। এই আন্দোলন ও তার পরবর্তীতে বিজেপির নীতি নির্ধারণে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তদাতা ছিলেন না বাজপেয়ী।

হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, আদভানির নেতৃত্বে বিজেপি শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু বাবরি মসজিদের ওপর করা হামলার বিষয়ে একমত ছিলেন না বাজপেয়ী। ১৯৯৬ সালে এই বিষয়টির কারণেই দলের পক্ষে তাকে প্রধানমন্ত্রী করার পক্ষে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনে যুক্ত বিজেপির দলীয় আদর্শের বাইরে আরও অনেকের সমর্থন দরকার ছিল, যার জন্য বাজপেয়ী হয়ে উঠেছিলেন সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য। বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। তবে সেবার তাকে দলীয় কোন্দলের কারণে ১৩ দিনের মাথায় পদত্যাগ করতে হয়েছিল।

১৯৯৮ সালে মধ্যবর্তী নির্বাচনে তিনি আবার জয়লাভ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। সেবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ভারতের জন্য তিনটি বড় পদক্ষেপ ঘটনা ঘটেছিল। একটি ১৯৯৮ সালের মে মাসে সংঘটিত পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা, ১৯৯৯ সালে তার লাহোর সফর এবং ১৯৯৯ সালের গ্রীষ্মে কার্গিল যুদ্ধ।

১৯৯৯ সালে জয়ললিতার দল সমর্থন প্রত্যহার করে নিলে লোকসভায় অনাস্থা ভোটে হেরে যায় বিজেপি। ১৯৯৯ সালের নির্বাচনের পর জোট সরকার গঠন করে বিজেপি। তৃতীয় মেয়াদে বাজপেয়ী পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নেন। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ভিত্তি তৈরিতেও ভূমিকা রেখেছিলেন বাজপেয়ী। চীনের সঙ্গেও কূটনৈতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখেন বাজপেয়ী। তার শাসনামলে সিকিমকে চীন ভারতের অংশ হিসেবে মেনে নেয়। অপর দিকে ভারত তিব্বতকে চীনের অংশ হিসেবে মেনে নেয়।

হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, ২০০২ সালে যখন গুজরাট দাঙ্গা হয় তখন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘রাজধর্ম’ নির্বাহ করতে বলেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি মোদিকে বরখাস্ত করার বিষয়ে মনস্থির করলেও দলের চাপে তা করা সম্ভব হয়নি তার পক্ষে। ২০০৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির পরাজয়ের মাধ্যমে শেষ হয় বাজপেয়ী আমল। তারপর তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।