দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস

শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী ভাষ্যের সমর্থনে ট্রাম্পের টুইট

বুধবার রাতে ট্রাম্প তার এক টুইটার বার্তায় বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের কাছ থেকে জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চলছে। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে আদেশ দিয়েছেন। এই টুইটের মাধ্যমে ট্রাম্প অনেক বড় এক বিতর্ককে উসকে দিলেন। শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীরা প্রচার করে, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শ্বেতাঙ্গদের গণহত্যার শিকার হতে হচ্ছে! ট্রাম্পও তার টুইটার ভাষ্যে সে দাবিরই প্রতিধ্বনি করেছেন। এ বিষয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস ২৪ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মুদ্রিত সংখ্যার অন্যতম প্রধান শিরোনাম করেছে, ‘ট্রাম্পস টুইট ইকোস এজেন্ডা অফ সুপরিমেসি।’নিউ ইয়র্ক টাইমস - ২৪ আগস্ট, ২০১৮

ট্রাম্প টুইট করতে গিয়ে খবরের সূত্র হিসেবে তার প্রিয় সংবাদমাধ্যমগুলোর একটি ফক্স টেলিভিশন চ্যানেলের উল্লেখ করেছেন। সেখানে পরিবেশিত খবরের সূত্রেই শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের বক্তব্যের সমর্থনে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী একটি গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরেই তাদের দাবির প্রতি সমর্থন আদায়ে যুক্তরাষ্ট্রে তদবির করছে। গত বছর তারা যুক্তরাষ্ট্রের গিয়ে তাদের বক্তব্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে: শ্বেতাঙ্গদের কাছ থেকে কৌশলে তাদের কৃষি জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে এবং তাদের অনেককে গণহত্যার শিকার হতে হচ্ছে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় জমির মালিকনা নিয়ে বড় বিতর্ক চলছে। দেশটির সরকার একটি নতুন আইন প্রণয়নের কথা ভাবছে যাতে কোনও ক্ষতিপূরণ না দিয়ে জমির মালিকদের কাছ থেকে কমি অধিগ্রহণের কথা বলা হয়েছে তা পুনর্বন্টনের জন্য। আইনটি এখনও কার্যকর হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার ৭০ শতাংশ জমি ও খামার শ্বেতাঙ্গদের হাতে। অথচ শ্বেতাঙ্গরা দেশটির জনসংখ্যার ৮ শতাংশ।

প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সরকার যে আইন পাসের কথা ভাবছে তাতে শুধুমাত্র অব্যবহৃত জমি পুনর্বন্টনের জন্য বিনা ক্ষতিপূরণে অধিগ্রহণের কথা বলা হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে, শ্বেতাঙ্গদের মালিকানায় থাকা যেসব জমি কৃষি উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলো সরকার অধিগ্রহণ করবে না। অথচ দেশটির শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীরা প্রচার করছে, জমি কেড়ে নেওয়া শুরু হয়ে গেছে এবং এবং সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করা হয়েছে।

ট্রাম্পের টুইটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ‘সাউদার্ন পোভার্টি ল সেন্টারের’ হেইদি বেইরিখ মন্তব্য করেছেন, ‘ট্রাম্প এমন একটি দাবির সমর্থনে লিখেছেন যা শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের মধ্যে বিশাল জনপ্রিয়। এদের মধ্যে ভুক্তভোগী হওয়ার একটা ধারণা প্রবল। তারা মনে করে, তাদের সম্পদ, সুযোগ বা জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। নতুন সদস্যদের শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী বলয়ে যুক্ত করতে তারা দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যবহার করে। সম্ভাব্য সদস্যদের তার বোঝায়, সতর্ক না হলে তাদের অবস্থাও দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গদের মতো হবে।’

তবে শুধু যে সমালোচনায় হয়েছে ট্রাম্পের টুইট নিয়ে, তা নয়। শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের কাছে ট্রাম্পের টুইট এমন সাহসী বার্তা হিসেবে মূল্যায়িত হয়েছে যা একটি ‘গুরুতর বঞ্চনার’ অস্তিত্বকে স্বীকার করে নিয়েছে। শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী মাইক পেইনোভিচ টুইটারে লিখেছেন, ‘এই বার্তাকে খুব ছোট কিছু মনে হতে পারে। কিন্তু এভাবেই আমরা শ্বেতাঙ্গবিরোধী সব প্রচারণা ভেদ করে সামনে এগিয়ে যাব। আশা করি এই ঘোষণা কার্যকর পদক্ষেপে অনূদিত হবে।’