দ্য গার্ডিয়ান

চার্চের নিপীড়নের দায় স্বীকার করে পোপের ক্ষমা প্রার্থনা

খৃষ্ট ধর্মের সবচেয়ে বড় ধর্ম গুরু পোপ ফ্রান্সিস তার দুইদিনব্যাপী আয়ারল্যান্ড সফরের শেষ দিনে অনুষ্ঠিত এক জনসমাবেশে ভাষণ দিয়েছেন। সেখানে তিনি চার্চের সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত বিভিন্ন ধরণের নিপীড়নের দায় স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। একে একটি নিপীড়নের কথা আলাদা আলাদা করে উল্লেখ করে সবগুলোর জন্য তার ক্ষমা প্রার্থনার সময়ে উপস্থিত জনতা হাততালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানিয়েছে। আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনের ফোনিক্স পার্কে পোপের ভাষণের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু এতে জনসমাগম হয়েছে অনেক কম। পাঁচ লাখ লোকের জন্য অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলেও কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে তিন লাখ লোকের সমাগম হয়েছে। কিন্তু কার্যত এসেছে তার চেয়েও বহু কম মানুষ। পোপের সমাবেশে এতো ক্ষুদ্র জনসমাগমের পেছনে ওই দিনের আবহাওয়া ভূমিকা রেখে থাকতে পারে; বাদলা হাওয়া ও বৃষ্টি হয়েছে রবিবার। তবে এর পেছনে আন্দোলনকারীদের ভূমিকা থাকার কথাও উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। নিপীড়নের বিরুদ্ধে যথার্থ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে পোপের অনুষ্ঠানের টিকেট না কিনতে আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রতিবাদকারীরা। এর মধ্যে আরেকজন খৃস্টান ধর্মীয় গুরু খোদ পোপের বিরুদ্ধেই নিপীড়কদের প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলে পোপের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন। এসব বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান ২৭ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মুদ্রিত সংখ্যার প্রধান শিরোনাম করেছে, ‘পোপ বেগস ফর ফরগিভনেস আফটার ডিকেডস অফ অ্যাবিউজ অ্যান্ড কভার-আপস।’গার্ডিয়ান - ২৭ আগস্ট, ২০১৮

পোপের ভাষণে সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, এক একটি নিপীড়নের কথা আলাদা আলাদা করে উল্লেখ করে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি। পোপ ফ্রান্সিস যৌন নিপীড়ন, অসহায় নারীদের শারীরিক কাজ করতে বাধ্য করা, দত্তক দেওয়ার প্রশ্নবিদ্ধ প্রক্রিয়া ইত্যাদির ঘটনায় চার্চের যাজকদের সংশ্লিষ্ট থাকা এবং এ সংক্রান্ত অভিযোগগুলো এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে চার্চের পক্ষ থেকে দায় স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। গার্ডিয়ান লিখেছে, কয়েক দশক ধরে উত্থাপিত হতে থাকা এসব অভিযোগের কারণে আয়ারল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ক্যাথলিক চার্চের গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। পোপ ফ্রান্সিসের ভাষ্য, ‘আমরা চার্চের ঊর্ধ্বতন পদে আসীন সেসব ব্যক্তিদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি যারা এমন সব অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ার পরও কোন ব্যবস্থা না নিয়ে নীরবতা অবলম্বন করেছেন। আমরা সেসব ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইছি যেখানে সন্তানদের আলাদা করে দিয়ে সিঙ্গেল মাদারদের বলা হয়েছে সন্তানের খোঁজ নেওয়াটা একটা পাপ এবং সন্তানদের বলা হয়েছে যে মায়ের খোঁজ নেওয়াটা পাপ। আমাদের যেন সেই শক্তি হয় যাতে আমরা ন্যায় করতে পারি। আমিন।’

ফোনিক্স পার্কে আয়োজিত সমাবেশে ফ্রান্সিস যখন উপস্থিত হন তখন অর্কেস্ট্রা বাজানোর জন্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন তিন হাজার বাদক। পোপ উপস্থিত জনতাকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। পোপের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দক্ষিণ আয়ারল্যান্ড থেকে কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন। তাছাড়া বিশ্বের অন্যান্য প্রান্ত থেকেও আয়ারল্যান্ডে গিয়েছিলেন হাজার বিশেক মানুষ। পাঁচ লাখ টিকেট বিক্রির জন্য প্রস্তুত রাখা হলেও ভ্যাটিকান জানিয়েছে, সেখানে তিন লাখ লোকের সমাগম হয়েছিল। যদিও অন্যান্য সূত্রগুলোর ভাষ্য, এর চেয়েও অনেক কম মানুষ সেখানে হাজির হয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পলের আয়ারল্যান্ড সমাবেশে সাড়ে ১২ লাখ মানুষের সমাবেশ হয়েছিল। সেবারের তুলনায় এবারের জনসমাগম নিতান্তই নগ্নয়। আকাশ থেকে তোলা একটি ছবিতেও দেখা গচেহজে অনুষ্ঠান স্থলের বেশিরভাগটাই খালি পড়ে আছে।

এক দিকে পোপ যখন প্রার্থনা করছেন, তখন চার্চের নিপীড়নের শিকার মানুষসহ আন্দোলনকারীরা ডাবলিনের গার্ডেন অব রিমেম্বারেন্সে জড়ো হয়েছিলেন প্রতিবাদ জানাতে। তাছাড়া তুয়ামের একটি মা ও শিশু কেন্দ্রে আবিষ্কৃত গণকবরে উপস্থিত হয়ে প্রতিবাদকারীরা কর্মসূচি পালন করেছেন। ওই গণকবরে প্রায় ৮০০ শিশুর দেহাবশেষ পাওয়া গেছে।

শনিবার পোপ ফ্রান্সিস চার্চের নিপীড়নের শিকার আট জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেখানে উপস্থিত একজন ভুক্তভোগী এবং ‘প্নটিফিকাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ মাইনর্সের পদত্যাগী সদস্য’ ম্যারি কলিন্স বলেছেন, পোপ কোনও ধর্মযাজককের বিরুদ্ধে নতুন করে পদক্ষেপ না নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। পোপের দাবি, বর্তমানে যে ট্রাইব্যুনালগুলো আছে তারাই বিচারের ব্যবস্থা করবে। পোপের এ বক্তব্যে অসন্তুষ্ট কলিন্স বলেছেন, অভিযুক্ত ধর্মযাজকদের বরখাস্ত না করে তাদের পদত্যাগ করতে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত হয়নি বলে তিনি পোপের কাছে অপভিযমত ব্যক্ত করেছেন।

এদিকে খোদ পোপ ফ্রান্সিসের বিরুদ্ধেই নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত ধর্মযাজককে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ৭৭ বছর বয়সী আর্চবিশপ কার্ল মারিয়া ভিগানো। ১১ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদনে তিনি লিখেছেন, থিওডোর ম্যাকক্যারিক নামের ওয়াশিংটনে ওই ধর্মযাজক যে নিপীড়নে যুক্ত পোপ ফ্রান্সিস তা আগে থেকেই জানতেন। তারপরও তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেননি।