দ্য টাইমস

রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিশোধের অঙ্গীকার থেরেসা মে’র

পক্ষত্যাগী সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার কন্যা ইউলিয়াকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। এ ঘটনায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে সাইবার যুদ্ধ শুরু করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার শিরোনাম করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস।

The Timesথেরেসা মে পার্লামেন্টকে বলেছেন, গোয়েন্দা তথ্য থেকে সরকার এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, স্ক্রিপাল হত্যায় যুক্ত দুই রুশ নাগরিক রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা। তারা ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

এদিকে ওই হত্যাচেষ্টার ঘটনায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দায়ী করেছেন যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী বেন ওয়ালেস। বৃহস্পতিবার বিবিসি’কে তিনি বলেছেন, যুক্তরাজ্যে সাবেক রুশ গুপ্তচরকে হত্যাচেষ্টায় ভ্লাদিমির পুতিন নিজেই জড়িত। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রুশ প্রেসিডেন্টের দফতর ক্রেমলিন এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দেশটির সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্য। পুতিনের সরকারই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের তহবিলের যোগান দেয়।

তিনি বলেন, পুতিন দায়ী না করার একটাই যুক্তি থাকতে পারে। আর সেটা হচ্ছে আপনি যদি এটা বলেন যে, নিজ দেশের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ নেই। এমনটা হলে তিনি দায়ী হবেন না। কিন্তু সেটি তো সম্ভব নয়।

বেন ওয়ালেস বলেন, রুশ প্রেসিডেন্টের দফতর দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং সামরিক বাহিনীর সিনিয়র জেনারেলদের মাধ্যমে এই হত্যাচেষ্টা চালিয়েছে।

এর আগে সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার কন্যা ইউলিয়াকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বুধবার দুই রুশ নাগরিকের নাম প্রকাশ করে যুক্তরাজ্য। ওই দুই ব্যক্তির নাম অ্যালেক্সান্দার পেত্রোভ ও রুসলান বশিরভ। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড এবং ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস (সিপিএস) জানিয়েছে, তাদের উভয়ের বিরুদ্ধেই সলসবারিতে সংঘটিত ওই রাসায়নিক হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ দায়েরের মতো ‘যথেষ্ট প্রমাণ’ রয়েছে।

অ্যালেক্সান্দার পেত্রোভ ও রুসলান বশিরভ নামের ওই দুই জনের ব্যাপারে ইউরোপজুড়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। দুইজনেরই ছবি প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের পুলিশ।

রাশিয়া দাবি করেছে, সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার কন্যাকে হত্যাচেষ্টার দায়ে যুক্তরাজ্য যে দুই ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করেছে রুশ কর্তৃপক্ষ তাদের সম্পর্কে জ্ঞাত নয়। বুধবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখরোভা বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমে যে নাম ও ছবি প্রকাশিত হয়েছে তা আমাদের কাছে কোনও অর্থ বহন করে না।’

গত জুলাইয়ে ব্রিটিশ পুলিশ জানায়, তারা সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার কন্যার ওপর লন্ডনে রাসায়নিক হামলার ঘটনায় একাধিক সন্দেহভাজন রুশ নাগরিককে শনাক্ত করেছে। সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে তাদের শনাক্ত করা হয়। সন্দেহভাজন হামলাকারীরা যে রাশিয়ার নাগরিক সে ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের তদন্তকারীরা নিশ্চিত হয়েছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, সিকিউরিটি ক্যামেরার ওই সময়ের রেকর্ড একাধিকবার পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৪ মার্চ সালসবেরি শহরের একটি বিপণিকেন্দ্রের বেঞ্চে সের্গেই স্ক্রিপাল এবং তার ৩৩ বছরের কন্যা ইউলিয়াকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে এ ঘটনায় ব্যবহৃত নার্ভ এজেন্টের সন্ধান পায় ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। কন্যাকে নিয়ে সের্গেই স্ক্রিপাল যেখানে দুপুরের খাবার খেয়েছিলেন- জিজ্জি নামের সলসবেরির ওই পিজার দোকানেই তার স্নায়ুকে আঘাতকারী এই নার্ভ এজেন্টের খোঁজ মিলেছে। অন্তত পাঁচটি স্থানে ফরেনসিক তদন্ত চালানোর পর পিজার দোকানে এর সন্ধান মিলে।

জিজ্জিতে দুপুরের খাবারের অন্তত দুঘণ্টা পর সাবেক ওই রুশ গুপ্তচর ও তার মেয়েকে অত্যন্ত সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় কাছের একটি পার্ক থেকে উদ্ধার করা হয়। তাদের উদ্ধারে যাওয়া একজন পুলিশ কর্মকর্তাও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সের্গেই স্ক্রিপাল এবং তার মেয়ে ইউলিয়া বেশ কিছুদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

নার্ভ এজেন্ট হচ্ছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক, যা স্নায়ুতন্ত্রকে বিকল বা অকার্যকর করে দিতে পারে। এতে দৈহিক কর্মক্ষমতা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।