দ্য গার্ডিয়ান

ইইউয়ের প্রত্যাখ্যানে অপমানিত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মে

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী থেরাসা মে যে খসড়া তৈরি করেছেন তা কার্যকর করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেনন ইইউ নেতারা। এতে অপমানিত হয়েছেন থেরেসা মে। তিনি পাল্টা মন্তব্য করেছেন, ব্রেক্সিট চুক্তি চূড়ান্তে তিনি ইইউ নেতাদের কাছ থেকে আরও বেশি সম্মান প্রত্যাশা করেন। গত জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যের চেকার্সে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ব্রেক্সিটের জন্য যেসব শর্তের খসড়া লিপিব্ধ করেছিলেন মে সেগুলোর বিষয়ে ইইউ নেতারা অস্ট্রিয়ার সালজবার্গে বৈঠকে বসেছিলেন। গত বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সেখানে থেরাসে মের অনুপস্থিতিতেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তার পরিকল্পনা সফল হবে না। মূল সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে ইইউ সদস্য রাষ্ট্র আয়ারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড অংশের মধ্যে বাণিজ্যের শর্ত নির্ধারণ নিয়ে। মে সাংবাদিকদের বলেছেন, চেকার্সে নেওয়া সিদ্ধান্তই বাণিজ্যের বাধাহীন প্রবাহের জন্য সঠিক। আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বা নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের কোনও ‘হার্ড বর্ডার’ না রাখার প্রস্তাব ছিল চেকার্স পরিকল্পনায়। কিন্তু ইইউ মনে করে, মের এই পরিকল্পনা কার্যকর করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র গার্ডিয়ান ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মুদ্রিত সংখ্যার প্রধান শিরোনাম করেছে, ‘মে হিউমিলিয়েটেড অ্যাজ ইউরোপিয়ান লিডার্স টেল হার: ইওর ব্রেক্সিট প্ল্যান ওন্ট ওয়ার্ক।’ws

অস্ট্রিয়ার সালজবার্গের ওই বৈঠক শুরুর আগেই ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক মেকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তার পরিকল্পনার বিষয়ে ইইউ নেতারা কি মন্তব্য করতে যাচ্ছেন। মধ্যাহ্নভোজের পর ইইউ নেতারা যখন বৈঠক শুরু করেন, তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না থেরেসা মে। তার অনুপস্থিতিতেই চেকার্স পরিকল্পনার সমালোচনা হয়। ডোনাল্ড টাস্ক তার পরিকল্পনাকে অগ্রহণযোগ্য আখ্যা দেন। আইরিশ সীমান্তের বিষয়ে গ্রহণযোগ্য কোনও প্রস্তাব না দিতে পারলে ব্রেক্সিট আলোচনা ভেস্তে যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি । ফরাসি প্রেসিডেন্টের ভাষ্য, ব্রেক্সিটপন্থীরা মিথ্যাবাদী। যত সহজে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়া, দেশের টাকা দেশে রাখাসহ সব কিছু ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল তারা তা হয়নি। গার্ডিয়ান অবশ্য ফরাসি প্রেসিডেন্টের এই ভাষাকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। ব্রেক্সিট নিয়ে মের চেকার্স পরিকল্পনার বিষয়ে একমত নন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলও। তিনি বলেছেন, ব্রেক্সিটের বিষয়ে এখনও ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি র’ দরকার রয়েছে।

আইরিশ সীমান্তের বিষয়ে ইইউয়ের পরামর্শ হচ্ছে: নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ইউরোপীয় বাজারের অংশ হিসেবে থাকবে। আর বাকি যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে আলাদা হয়ে যাবে। কিন্তু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিকভাবে এবং সাংবিধানিকভাবে যুক্তরাজ্যকে বিভক্ত করে ফেলবে। এদিকে আগামী অক্টোবর মাসেই ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের সভা। সেখানে যদি চূড়ান্ত ব্রেক্সিট পরিকল্পনা উপস্থাপন করা না যায় তাহলে এ বিষয়ে আগামী নভেম্বরে বিশেষ বৈঠক ডাকাটাও সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে আগামী ২৯ মার্চের মধ্যে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত থেরেসা মে নিয়েছেন তা বাস্তবায়নে চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট কার্যকর করতে হবে, যা ‘নো ডিল-ব্রেক্সিট’ নামে আখ্যায়িত হচ্ছে।

ইইউ নেতাদের চেকার্স পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যানের প্রতিক্রিয়ায় থেরেসা মেকে অপমানিত, রাগান্বিত ও নার্ভাস হিসেবে উল্লেখ করেছে গার্ডিয়ান। মে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ইইউ নেতারা ব্রেক্সিট আলোচনায় ‘কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন’, যাতে তাকে তার লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া যায়। তার ভাষ্য, ‘আমি আগেও বলেছি চুক্তি নিয়ে আলোচনা খুবই কঠিন একটি বিষয়। এবং এর বিভিন্ন পর্যায়ে কৌশল অবলম্বন করা হবে।’

ইইউ নেতাদের যে ভাষ্যের প্রেক্ষিতে মে অপমানিত হয়েছেন বলে গার্ডিয়ান উল্লেখ করেছে সে বিষয়ে যুক্তরাজ্যের যোগাযোগমন্ত্রী ক্রিস গ্রেলিং প্রতিরোধ তৈরির চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন, ইইউ যেভাবে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বাণিজ্য অনুষ্ঠিত করার কথা বলেছে তা মেনে নেওয়া যুক্তরাজ্যের পক্ষে অসম্ভব। তার ভাষ্য, ‘প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আমরা একক ইইউ শুল্ক আইনের আওতায় থাকব না। এ বিষয়ে আমি তার সঙ্গে একমত পোষণ করি। এটাই সরকারের অবস্থান। আমরা নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে কোনও সীমান্ত মেনে নিতে রাজি নই। এখন আমরা চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট কার্যকরের চেষ্টা করব। আমাদের ইইউ বন্ধুরা যদি চুক্তি চূড়ান্ত করার মধ্য দিয়েই ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়াটা দেখতে চান তাহলে তাদের বুঝতে হবে, এমন কিছু বিষয় আছে যা আমাদের পক্ষে কোনওভাবেই গ্রহণ করা সম্ভব নয়।’