দ্য গার্ডিয়ান

ভালো ব্রেক্সিট চুক্তি করুন, নয়তো সমর্থন পাবেন না: থেরেসাকে করবিন

ব্রেক্সিট নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র চেকার্স পরিকল্পনাকে সমর্থন না দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। এক্ষেত্রে শর্ত বেঁধে দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ব্রেক্সিটের পর ব্রিটেনকে একটি কাস্টমস ইউনিটে রাখতে, ভোক্তার মানদণ্ড ও কর্মীর অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আর তা না করতে পারলে মে লেবার এমপিদের সমর্থন পাবেন না। তাছাড়া কোনও ধরনের চুক্তি ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে আসারও বিরোধিতা করবে লেবার পার্টি। লিভারপুলে দলের বার্ষিক সম্মেলনের শেষ দিনে দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন করবিন। বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এ খবরটিকে প্রধান শিরোনাম করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

জেরেমি করবিন
ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে ২০১৬ সালের জুন মাসে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গণভোটে ইইউ ত্যাগের পক্ষে রায় দেয় ব্রিটিশ ভোটাররা। এর প্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া থেরেসা মে ২০১৯ সালের ২৯ মার্চের মধ্যে ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন সম্পন্ন করার ঘোষণা দেন। কী কী শর্তে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্য বেরিয়ে যাবে তা নির্ধারণ করতে গিয়ে ইইউয়ের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের দর কষাকষি চলতে থাকে। ব্রেক্সিটের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য চেকার্স পরিকল্পনা তৈরি করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। এ পরিকল্পনা নিয়ে নিজ দর থেকেও বিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছেন মে। প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের বিরুদ্ধে ইইউয়ের অনেক শর্ত বিনা বাধায় মেনে নেওয়ার অভিযোগ তুলে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে পদত্যাগ করেন ব্রেক্সিট বিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড ডেভিস। তার পরপর ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন প্রস্তাবের শর্তের সঙ্গে একমত হতে না পেরে পদত্যাগ করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন।

২০১৮ সালের ২৯ মার্চের মধ্যে যুক্তরাজ্যকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের চুক্তি সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে এর আগে সরকারের এ সংক্রান্ত পরিকল্পনায় পার্লামেন্টের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) করবিন থেরেসা মে’র চেকার্স পরিকল্পনাকে সমর্থন দেওয়ার জন্য শর্ত বেঁধে দেন।  করবিন বলেন, ‘যদি আপনি (থেরেসা মে) এমন একটি চুক্তি করেন যেখানে কাস্টমস ইউনিয়ন থাকবে, আয়ারল্যান্ড সীমান্তে কোনও কঠোরতা থাকবে না, চাকরির সুরক্ষা থাকবে, কর্মক্ষেত্রে জনগণের অধিকার থাকবে, বোক্তা মানদণ্ড থাকবে-তবে আমরা সে বিচক্ষণ চুক্তিটিকে সমর্থন দেব। আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী অঙ্গন এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলোও এ চুক্তিকে সমর্থন দেবে।’

করবিন আরও বলেন, ‘যদি আপনি ওই ধরনের চুক্তি নিয়ে আলোচনা না করতে পারেন, তবে যে দল এ নিয়ে আলোচনা করতে পারবে তাদের জন্য পথ তৈরি করে দেন।’

সম্প্রতি অস্ট্রিয়ার সালজবার্গের অনুষ্ঠিত বৈঠকে থেরেসা মে’র চেকার্স পরিকল্পনার সমালোচনা করেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেতারা। ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক। পরিকল্পনাকে অগ্রহণযোগ্য আখ্যা দেন। আইরিশ সীমান্তের বিষয়ে গ্রহণযোগ্য কোনও প্রস্তাব না দিতে পারলে ব্রেক্সিট আলোচনা ভেস্তে যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি । ফরাসি প্রেসিডেন্টের ভাষ্য,ব্রেক্সিটপন্থীরা মিথ্যাবাদী। যত সহজে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়া,দেশের টাকা দেশে রাখাসহ সব কিছু ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল তারা তা হয়নি। 

আইরিশ সীমান্তের বিষয়ে ইইউয়ের পরামর্শ হচ্ছে: নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ইউরোপীয় বাজারের অংশ হিসেবে থাকবে। আর বাকি যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে আলাদা হয়ে যাবে। কিন্তু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিকভাবে এবং সাংবিধানিকভাবে যুক্তরাজ্যকে বিভক্ত করে ফেলবে। এদিকে আগামী অক্টোবর মাসেই ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের সভা। সেখানে যদি চূড়ান্ত ব্রেক্সিট পরিকল্পনা উপস্থাপন করা না যায় তাহলে এ বিষয়ে আগামী নভেম্বরে বিশেষ বৈঠক ডাকাটাও সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে আগামী ২৯ মার্চের মধ্যে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত থেরেসা মে নিয়েছেন তা বাস্তবায়নে চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট কার্যকর করতে হবে, যা ‘নো ডিল-ব্রেক্সিট’ নামে আখ্যায়িত হচ্ছে।