দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

‘সবরিমালা মন্দির সংক্রান্ত রায়ের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ নয়’

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের একটি বেঞ্চ সবরিমালা মন্দিরে সব বয়সী নারীদের প্রবেশাধিকারের পক্ষে দেওয়া রায়ের বিষয়ে বলেছে, রায়টির কার্যকারিতা রহিত করার জন্য কোনও স্থগিতাদেশ দেওয়া হবে না। তবে মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) বেঞ্চ এটাও বলেছে, রায়ের বিষয়ে যে রিভিউ পিটিশনগুলো দেওয়া হয়েছে সেসবের বিষয়ে ২২ জানুয়ারি শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। নারীদের মন্দিরে প্রবেশের পক্ষে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের আবেদনসহ মোট ৪৯টি রিভিউ পিটিশন জমা পড়েছে। এ বিষয়ে ভারতীয় সংবাদপত্র দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ১৪ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মুদ্রিত সংখ্যার প্রধান শিরোনাম করেছে, ‘এসসি ডেকলাইনস টু স্টে সবরিমালা ভার্ডিক্ট, টেম্পল ওপেনস স্যাটারডে, রিভিউ ইন জান।’Untitled

গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সবরিমালা মন্দিরে সব বয়সী নারীদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে এক রায় দিয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, বয়সভেদে কোনও নারীকে মন্দিরে প্রবেশে বাধা দেওয়া যাবে না। ভক্তি কখনও বৈষম্যের উপর ভিত্তি করে গঠিত হতে পারে না । উপাসনার অধিকার সাংবিধানিক। মন্দির কর্তৃপক্ষ ও ভক্তদের বক্তব্য ছিল, মন্দিরে রজঃস্বলা নারীদের প্রবেশ নিষেধ কারণ। ঋতূকালীন নারীরা ‘অশুচি’ থাকে। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রা মন্তব্য করেছিলেন, ‘একদিকে নারীদের দেবী হিসাবে পূজা করা হয়, আর অন্যদিকে তাদের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক কোনওভাবেই জৈবিক বা শারীরিক বিষয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে না।' 

রায়ের পর নারী অধিকার কর্মীরা একাধিকবার মন্দিরে প্রবেশের চেষ্টা করলেও ভক্তদের অবরোধের মুখে তা সফল হয়নি। কেরালার এক পাহাড়ের ওপর অবস্থিত শতবর্ষী মন্দিরটিতে ঢুকতে গিয়ে বিদেশি সাংবাদিকরাও বাধার মুখে পড়েছেন। কট্টরপন্থী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রধান মোহন ভগওয়ান্ত বলেছেন, সর্বোচ্চ আদালত রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের অনুভূতি বিবেচনায় নেয়নি।

গত ১২ অক্টোবর হায়দরাবাদের সাংবাদিক কবিতা থাক্কাল ও কোচি এলাকার বাসিন্দা রেহানা ফাতিমা পাহাড়ি রাস্তা ধরে ইতিহাস সৃষ্টির প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন। মাত্র কয়েক মিনিট দূরে ছিলেন বিখ্যাত মন্দিরে প্রবেশ করা থেকে। কিন্তু মন্দিরে প্রবেশের ৫০০ মিটার আগেই ২০ জন পূজারি পথে বসে পরে প্রতিবাদ করতে থাকেন। শেষ আধা কিলোমিটার যাতে নারীরা পাড়ি দিতে না পারেন সেজন্য সম্ভাব্য সব ধরণের উপায় অবলম্বন করেন। শেষ পর্যন্ত তারা হুমকি দিয়েছিলে, নারীরা মন্দিরে প্রবেশ করলে তারা প্রার্থণা বন্ধ করে দেবেন। মন্দিরের পুরোহিতদের প্রধান কান্দারারু রাজিভারু বলেছিলেন, তারা মন্দির বন্ধ করে চাবি হস্তান্তর করে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছন।

আজ (১৪ নভেম্বর) ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বর্তমান প্রধান বিচারপতি গগৈ ২৮ সেপ্টেম্বরে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকৃতি জানান। দিনের শুরুর দিকে তিনটি রিভিউ পিটিশন জমা পড়লেও, সাকুল্যে ৪৯টি রিভিউ পিটিশন জমা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ বলেছে, আগামী ২২ জানুয়ারি এসব রিভিউ পিটিশনের শুনানির ব্যবস্থা করা হবে। বেঞ্চের ভাষ্য, ‘আমরা স্পষ্ট করে দিতে চাই, ২৮ সেপ্টেম্বরের রায়ের বিরুদ্ধে কোনও স্থগিতাদেশ হবে না।’

কয়েকটি বিরোধী দল ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠন দাবি জানিয়েছে, আসন্ন তীর্থ যাত্রা উপলক্ষে তরুণীদের যেন মন্দিরে যেতে বাধা দেওয়া হয়। ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া তীর্থ যাত্রার প্রসঙ্গে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ২৮ সেপ্টেম্বরের রায় এখনও বহাল থাকায় সরকারকে আইনি দিকটা খতিয়ে দেখতে হচ্ছে।