গালফ টাইমস

মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি খারাপ থেকে নিকৃষ্ট হয়েছে: উপপ্রধানমন্ত্রী

বিগত দশকে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্কট খারাপ থেকে নিকৃষ্ট হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কাতারের উপপ্রধান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি। নিজ দেশের ওপর আরোপিত অবরোধ, লেবানন, সিরিয়া, লিবিয়া ও ইয়েমেন পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেছেন। বৃহস্পতিবার রোমে ভূমধ্যসাগরীয় কনফারেন্সের এক পার্শ্ববৈঠকের বিশেষ অধিবেশনে তিনি এই মন্তব্য করেন। আর এই খবরটিকে প্রধান শিরোনাম করেছে দেশটির সংবাদপত্র গালফ টাইমস।noname

কায়রোয় নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিনিধি ডেকলান ওয়ালশ ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সম্পাক ডেভিড হার্স্টের সঙ্গে আলাপচারিতায় শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি সামনে আনা প্রয়োজন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কাতারকে প্রথমে সন্ত্রাসে অর্থায়নকারী ও পরে বন্ধু বলে সম্মোধন করা বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনও টুইটের ওপর ভিত্তি করে আমরা পুরো দেশের নীতি বিচার করতে পারি না। মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ছিলো আর কাতারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেছে। তারা বলেছে কাতার যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর, প্রতিরক্ষা দফতর, অর্থ দফতর সবাই এসব কথা বলেছে। সন্ত্রাসবিরোধী তৎপরতায় কাতারের ভূমিকার প্রশংসা করেছে তারা। প্রেসিডেন্টের প্রথম বিবৃতি হয়তো মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া, ওই সময়ে হয়তো তাকে সেসব দেওয়া হয়েছিলো। হতে পারে নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী দেশগুলো তা দিয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত আমরা দেখতে পেলাম সত্য উন্মোচিত হলো। আর যা ঘটেছে তা সবাই দেখেছে। তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো প্রেসিডেন্টকে বুঝিয়েছে কাতার যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সহযোগী ও সন্ত্রাসে অর্থায়নকারী নয়। কাতারের ঘাটি থেকেই সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের সূচনা।

কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কাতারের বিরুদ্ধে একটি ব্যাপক অপপ্রচার শুরু হয়েছিল আর সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সবাই বুঝেছে তা সত্য নয়। পর্দা সরে গেছে। তাদের নীতির বিরোধিতা করলে যেকোনও দেশের বিরুদ্ধে একই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন কানাডা।

সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড বিষয়ক এক প্রশ্নে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খাশোগির সঙ্গে যা ঘটেছে তা হৃদয়বিদারক আর আমাদের বিশ্বাস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তদন্তের শেষ পর্যন্ত যাবে আর দায়ী অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করবে। আমাদের বিশ্বাস তদন্তের পর বিপুল ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে তবে এর কোনও কিছুই খাশোগিকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না।

ইয়েমেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে শেখ মোহাম্মদ বলেন, আমি ইয়েমেন যুদ্ধ বন্দের প্রতিশ্রুতি দেখতে পাচ্ছি। হোবায়দাহ বন্দরে অভিযান বন্ধে আমরা মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতি দেখেছি। আমরা এসব প্রক্রিয়ায় ইয়েমেনের জনগণের সম্পৃক্ততা দেখতে চাই। আমরা চাই না বিদেশি ক্রিড়নকেরা পরিস্থিতির সুযোগ নিক। তিনি বলেন, ইয়েমেনি জনগণ মূল্য চুকাচ্ছে। কোনও দেশের ২০ শতাংশ মানুষ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে থাকলে দুর্যোগ বিবেচনা করা হয়। আর ইয়েমেনের ৭০ শতাংশ মানুষ ক্ষুধার্ত। এটা মহাবিপর্যয়। রোগ ছড়ানোর ঝুঁকির কথা বলাই অবান্তর। ইয়েমেন পরিস্থিতির সমাধান পদরকার। আর আমরা আশা করি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি সমাধান দেবে।

তিনি বলেন, দুই কারণে ইয়েমেন যুদ্ধ শুরু হয়। একটি বৈধ সরকারকে পুনর্বহাল এবং সৌদি সীমান্তের দিক থেকে আসা নিরাপত্তা হুমকি। এখন পর্যন্ত তার কোনওটিই অর্জিত হয়নি। এখনও এর মূল্য দিচ্ছে বহু মানুষ আর নিরাপত্তা হুমকি ক্রমাগত বাড়ছে। তিনি বলেন, এখনও অর্জিত না হওয়া এই দুটি লক্ষ্যই ইয়েমেনি জনগণকে একত্রিত করার একমাত্র উপায়। এই লক্ষ্য অর্জিত হলেই যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, নিরাপত্তা হুমকি বাড়ছে। সৌদি শহরগুলোর ওপর হুমকি আছে যা এই অঞ্চলের শান্তির ওপর মারাত্মক হুমকি। আমাদের এই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে এবং আমাদের পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।

সৌদি জোটের যোগ দেওয়া প্রশ্নে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে তার দেশের কোনও অনুশোচনা নেই। তিনি বলেন,  আমাদের সমর্থন ছিলো সৌদি সীমান্ত রক্ষা। এই জোটের প্রধান লক্ষ্যই ছিল নিরাপত্তা হুমকি অপসারণ এবং বৈধ সরকার পুনর্বহাল। আর আমরা সেই সমর্থন থেকে বিচ্যুত হইনি।

ইয়েমেনে সৌদি আরবের ভূমিকা নিয়ে কাতারের মত প্রসঙ্গে শেখ মোহাম্মদ বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি তারা সেখানে একই আচরণ অব্যাহত রেখেছে। ইস্যু সমাধানে তারা সাড়া দিচ্ছে না। আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রশ্নে এটাকে চলমান অদূরদর্শিতা বলেই দেখে থাকি আমরা।