আনাদোলু পোস্ট

হামাসবিরোধী প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় জাতিসংঘকে ধন্যবাদ ফিলিস্তিনের

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে নিন্দা জানিয়ে আনা মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ফিলিস্তিন। ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাতমূলক এই প্রস্তাব পাস হতে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন ছিল। তবে বৃহস্পতিবারের ভোটাভুটিতে প্রয়োজনীয় সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হয় যুক্তরাষ্ট্র। ভোটাভুটিতে প্রস্তাবের পক্ষে ৮৭টি আর বিপক্ষে ৫৭টি ভোট পড়ে। আর ৩৩টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে। প্রস্তাবটি পাস করতে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত নিকি হ্যালি সদস্য দেশগুলোকে কড়া ভাষায় চিঠি লিখেও চূড়ান্ত সাফল্য আনতে ব্যর্থ হন। এ বিষয়টি নিয়ে শনিবার শিরোনাম করেছে তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু পোস্ট।

Leadsমার্কিন প্রস্তাবের পরাজয়কে স্বাগত জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তিনি বলেন, জাতীয় সংগ্রামকে নিন্দা জানানো অনুমোদন করতে পারতে পারেন না ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট।

প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ সদস্য দেশগুলোকে ‘তাদের জনগণের প্রতিরোধ ও তাদের ইস্যুতে ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়ানোয়’ ধন্যবাদ জানিয়েছে ফিলিস্তিনি জাতিমুক্তি আন্দোলনকারী গ্রুপ হামাস। ওই বিবৃতিতে নিকি হ্যালিকে আক্রমণ করে লেখা হয়, তিনি উগ্রবাদীতা ও ফিলিস্তিনিদের ওপর জায়নবাদী সন্ত্রাসে সমর্থন দেওয়ার মতো অবস্থানের কারণে পরিচিত।

হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জাহরি এই ভোটের ফলাফলকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনের ওপর ‘চপেটাঘাত’ বলে বর্ণনা করেছেন। মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসন কট্টর ইসরায়েলপন্থী অবস্থান নিয়েছে বলে জানান তিনি। টুইটারে জাহরি লিখেছেন, জাতিসংঘে মার্কিন উদ্যোগের ব্যর্থতা ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর চপেটাঘাতের প্রতিফলন ও প্রতিরোধের বৈধতার অনুমোদন।

জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলি দূত ড্যানি ড্যানোন বলেছেন, যেসব দেশ খসড়া প্রস্তাবটি প্রত্যাখান করেছে তাদের লজ্জিত হওয়া উচিত। প্রস্তাবের পক্ষে যারা ভোট দিয়েছে সেসব দেশের প্রশংসা করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

ফিলিস্তিনপন্থী স্বাধীন অনলাইন সংবাদমাধ্যম ইলেকট্রনিক ইন্তিফাদার সহ-প্রতিষ্ঠাতা আলী আবুনিমাহ বলেছেন, প্রস্তাবটির ব্যর্থতা তাৎপর্যপূর্ণ। আসলে ফিলিস্তিনি জনগণ এবং তাদের বৈধ অধিকারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে প্রস্তাবটি আনা হয়েছিল। এই প্রস্তাবটিতে ইসরায়েলি ভাষ্যের প্রতিফলিত হয়েছে, এতে সামরিক দখলদারিত্বের উল্লেখ নেই, গাজা অবরুদ্ধ করে রাখার কথা নেই, গাজা আর পশ্চিম তীরে প্রতিদিনই ইসরায়েলের চালানো হামলার কথাও এতে নেই। আমি মনে করি, এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসী এটা দেখতে পেরেছে আর প্রত্যাখান করেছে।

২০০৬ সালে জাতিসংঘের অনুমোদনে গাজা উপত্যকায় অনুষ্ঠিত এক নির্বাচনে ফাতাহকে পরাজিত করে হামাস। নির্বাচনে জয়ী হয়ে এক বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয় সংগঠনটি। এরপরই ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনির বসতি গাজাকে অবরুদ্ধ করে ফেলে ইসরায়েল। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা সেই সড়ক, নৌ ও আকাশ অবরোধের কারণে দিন দিন খারাপ থেকে আরও খারাপ হচ্ছে সেখানকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। কাজের জন্য এখন ইসরায়েলেও যেতে পারে না গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিরা। মিসরও একই পদক্ষেপ নেওয়ায় কার্যকরভাবে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে গাজা। উপত্যকাটি এখন পরিচিতি পেয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম উন্মুক্ত কারাগারের।