তুমুল বিরোধিতার মধ্যেই বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) ভারতের লোকসভায় পাস হলো সংশোধিত তিন তালাক বিল। সংশোধিত বিলটি এখন পাসের জন্য রাজ্যসভায় উত্থাপিত হবে। তবে এনডিও জোটবিরোধীদের একটা বড় অংশ এ আইনের বিরোধিতা করায় রাজ্যসভায় তা পাস হওয়াটা অনিশ্চিত। সংশোধিত বিলটি আইনে পরিণত হলে, তাৎক্ষণিক তিন তালাক জামিন অযোগ্য ধারায় ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তির তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা হবে। পাশাপাশি স্ত্রীর খরচ জোগাতে হবে তাকে। শুক্রবার (২৮ ডিসেম্বর) তিন তালাক বিল পাসের এ খবরকে প্রধান শিরোনাম করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
তিন তালাক নিষিদ্ধ করে ভারতের লোকসভায় বিল পাস হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরে। তাতে বলা হয়েছিল, তিন তালাক একটি জামিন অযোগ্য অপরাধ। কোনও মুসলিম ব্যক্তি স্ত্রীকে তিন তালাক দিলে তার তিন বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা হবে। সেসময় ওই বিল নিয়ে তীব্র আপত্তি তোলেন বিরোধীরা। ওই আইনের অপব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। আর বিরোধীদের সমর্থন ছাড়া রাজ্যসভায় ওই বিল পাস করানো সম্ভব নয়। সে কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় সরকার ওই বিলে সংশোধনী আনে। সংশোধিত বিলে বলা হয়, বিচারক ইচ্ছা করলে তিন তালাকের মামলায় অভিযুক্তকে জামিন দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে অভিযোগ করতে পারবেন কেবল সংশ্লিষ্ট নারী ও তার পরিবারের লোকজন। সংশোধিত বিলটিও লোকসভায় বিরোধিতার মুখে পড়ে।
তিন তালাকে অপরাধীদের জেল হাজতের ধারা বাতিলের আবেদন জানানো হয়। তবে তা সরকার শোনেনি। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ যুক্তি দেন, অন্য অপরাধের বিল পাশ করানোর সময় বিরোধীরা যখন সম্মত হন, তখন তিন তালাকের অপরাধের সময় একথা কেন তারা মানছেন না! এদিন লোকসভায় পাঁচ ঘণ্টা আলোচনা-বিতর্ক চলার পরে বিল পাশ হয়েছে। সরকার বারবার বলার চেষ্টা করে কীভাবে সুপ্রিম কোর্ট এই তিন তালাক প্রথাকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছে এবং সরকারকে এর বিরুদ্ধে আইন তৈরির পরামর্শ দিয়েছে।
বিল পেশ করার সময় কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘বিরোধীরা যেন বিল নিয়ে রাজনীতি না করেন। এটি কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের স্বার্থে করা হয়নি, নারীর প্রতি ন্যায়ের লক্ষ্যেই এই বিল সংশোধিত হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের ২০টি দেশে তাৎক্ষণিক তিন তালাক নিষিদ্ধ। তাহলে ভারতের মতো ধর্ম নিরপেক্ষ দেশে একে নিষিদ্ধ করতে আপত্তি কোথায়?’
কেন্দ্রের বিরোধিতা করে বিলটি যৌথ সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি তোলেন লোকসভায় কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়গে। তার দাবি, এই বিলের একাধিক প্রস্তাব সংবিধানবিরোধী। এক পর্যায়ে কংগ্রেসসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ওয়াকআউট করে। তা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার বিলটি লোকসভায় ২৪৫-১১ ভোটে পাস হয়।