দ্য গার্ডিয়ান

ব্রেক্সিট নিয়ে শঙ্কা: ওষুধ কিনে জমিয়ে রাখছে ব্রিটেনবাসী

ব্রেক্সিট নিয়ে শঙ্কার রেশ গিয়ে পড়েছে যুক্তরাজ্যের ওষুধ ব্যবস্থাপনায়। একদিকে ওষুধের মজুত যেমন কমছে, অন্যদিকে তেমন বাড়ছে রোগীদের আগাম ওষুধ কিনে মজুত করে রাখার প্রবণতা। ‘নো ডিল ব্রেক্সিট হলে’ বাণিজ্য চুক্তির অভাবে প্রয়োজনীয় ওষুধ আমদানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এমনটাই তাদের আশঙ্কা। বিশেষ করে ডায়েবেটিক রোগীরা ইনসুলিন কিনে ভবিষ্যতের জন্য জমিয়ে রাখছেন। এ বিষয়ে ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ান ১৯ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মুদ্রিত সংখ্যার প্রধান শিরোনাম করেছে, ‘পেশেন্টস স্টকপাইল ড্রাগস ইন ফিয়ার অফ নো ডিল ব্রেক্সিট।’00

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার শর্ত হিসেবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসার মের নেতৃত্বে যে ব্রেক্সিট চুক্তি প্রণীত হয়েছিল, তা গত মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) দেশটির সংসদে বিশাল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে। মের প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন চুক্তির পক্ষে ভোট দিয়েছেন ২০২ জন ব্রিটিশ এমপি। আর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন ৪৩২ জন। তারপর ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে তার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে আস্থা ভোট। সেখানে মাত্র ১৯ ভোটের ব্যবধানে জিতেছে ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির বর্তমান সরকার। গণভোটের মাধ্যমে ব্রেক্সিটের পক্ষে জনগণের দেওয়া  রায় বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে সব এমপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মে। যুক্তরাজ্যবাসীদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন, শেষ পর্যন্ত ‘নো ডিল’ ব্রেক্সিটের দিকে যাচ্ছে তাদের দেশ। সেক্ষেত্রে কোনও চুক্তি ছাড়াই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছাড়বে যুক্তরাজ্য।

চুক্তি ছাড়াই ইইউ ত্যাগ করলে যুক্তরাজ্য যেসব ওষুধ আমদানি করে, বাণিজ্য চুক্তির শর্তের বেড়াজালে তার যোগান বিলম্বিত হতে পরে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট রোগীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডায়েবেটিক রোগীদের একজন বলেছেন, রোগীদের ফোরামের সবাই বাড়তি ইনসুলিন কিনে রাখার বিষয়ে কথা বলছে। কারণ নো ডিল ব্রেক্সিট হলে ইনসুলিনের যোগান বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

এসব রোগীরা তাদের চিকিৎসকের কাছে গিয়ে আশঙ্কার কথা জানাচ্ছেন এবং অনুরোধ করছেন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ওষুধ কিনে রাখার সুযোগ পেতে ‘প্রাইভেট প্রেসক্রিপশন’ দিতে। তাদের চিকিৎসকরাও সহানুভূতির বশে তা দিয়ে দিচ্ছেন। আরেকজন ডায়েবেটিক রোগী জানিয়েছেন, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ওষুধ কেনা যে নিষেধ তা জানা সত্ত্বেও তিনি ছয় মাসের ওষুধ কিনে রেখেছেন এই আশঙ্কায় যে নো ডিল ব্রেক্সিট হলে ওষুধগুলো পাওয়া যাবে না।

ফ্লোরেন্স  পাটারালোহা নামের আরেকজন রোগী  গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, তার চিকিৎসক নাকি তাকে ন্যাপ্রোক্সেন নামের ওষুধটির মজুত যুক্তরাজ্যে শেষ হয়ে হয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। এই ওষুধটি যুক্তরাজ্যে আমদানি করতে হয়। রোগীদের এমন মজুতের কাজ না করতে সংশ্লিষ্টরা পরামর্শ দিলেও গার্ডিয়ান জানিয়েছে সরকার ওষুধ কোম্পানিগুলোকে ‘নো ডিল ব্রেক্সিটকে’ মাথায় রেখে ওষুধ মজুত করতে বলেছে।

‘ডায়াবেটিস ইউকের’ নীতি বিভাগের প্রধান রবিন হেউইংস বলেছেন, এভাবে রোগীরা যদি ওষুধ মজুত করে তাহলে সরবরাহ স্বভাবিক রাখার সরকারি চেষ্টা বিফল হবে। সরকার যে মজুতের ব্যবস্থা করছে, পরে তার অপচয় হবে। কিন্তু যুক্তরাজ্যের রোগী কল্যাণ সংস্থার প্রধান র‍্যাচেল পাওয়ার বলেছেন, ব্রেক্সিট নিয়ে থাকা অনিশ্চয়তার জন্য প্রতিদিন ওষুধ খেতে হয় এমন রোগীরা স্বাভাবিকভাবেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও বিভাগগুলোকে রোগীদের আস্থা অর্জনের জন্য চেষ্টা করতে হবে।