দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস

মাদুরোকে সমর্থন জানালেন ভেনেজুয়েলার শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা

নিকোলাস মাদুরোকে আর ভেনেজুয়েলার বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে গ্রহণ না করার যে ঘোষণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন দেশটির শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা। তাদের বেশ কয়েক জন একে একে প্রকাশ্যে এসে মাদুরোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। কেউ কেউ সরাসরি নিন্দা করেছেন ট্রাম্প সমর্থিত স্বঘোষিত অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট জুয়ান গুইদোর। বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশটির সেনাবাহিনী যেদিকে দাঁড়াবে, ক্ষমতার পাল্লা সেদিকেই হেলে পড়বে। তবে মাদুরো যে সমর্থন পেয়েছেন তা নিরঙ্কুশ নয়। দেশটির মিলিটারি পুলিশের সদস্যরা সপ্তাহখানেক আগেই বিদ্রোহ করেছিল। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদপত্র ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মুদ্রিত সংখ্যার প্রধান শিরোনাম করেছে, ‘ভেনেজুয়েলাস মিলিটারি চিফস ব্যাক মাদুরো।’Untitled
সরকার বিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় গত বুধবার (২৩ জানুয়ারি) নিজেকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলীয় নেতা জুয়ান গুইদো। কয়েক মিনিটের মাথায় তাকে ‘স্বীকৃতি’ দিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘ভেনেজুয়েলার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির প্রেসিডেন্ট জুয়ান গুইদোকে আমি দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছি।’
ট্রাম্পের এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) ভেনেজুয়েলার শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের অনেকে প্রকাশ্যে মাদুরোর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। দেশটির সামরিক বাহিনীর জেনারেল পদ মর্যাদার কর্মকর্তা ও একই সঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদ্রিনো লোপেজ ঘোষণা দিয়েছেন, মাদুরো ভেনেজুয়েলার বৈধ নেতা। নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেওয়ায় জুয়ান গুইদোর নিন্দা জানিয়ে তিনি আরও বলেছেন, তার ঘোষণা ‘অবৈধ।’
লোপেজের ভাষ্য, ‘গতকাল আমরা একটি নিন্দনীয় কাজ দেখেছি: একজন ব্যক্তি নিজেকে প্রেসিডেন্ট দাবি করলেন। এটা খুবই গুরুতর ঘটনা, যা আইনের শাসন ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। আমরা ভেনেজুয়েলাবাসীদের মধ্যে সংঘাত চাই না। কোনও গৃহযুদ্ধ সমস্যার সমাধান করবে না। দরকার আলোচনার টেবিলে বসা।’
ভেনেজুয়েলার পশ্চিমাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ম্যানুয়েল বেরনাল মার্টিনেজ দাবি করেছেন, ‘ভেনেজুয়েলার নাগরিকরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নিকোলাস মাদুরো মোরোসকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছেন।’ সেনা পরিবেষ্টিত অবস্থায় আরও বেশ কয়েকজনকে প্রকাশ্যে মাদুরোর পক্ষে সমর্থ জ্ঞাপন করতে দেখা গেছে।
মাদুরোর পূর্বসূরি হুগো চ্যাভেজের আমল থেকেই দেশটির সেনাবাহিনী অত্যন্ত প্রভাবশালী। তারা যেদিকে সমর্থন দেবে, ক্ষমতার পাল্লা সেদিকেই হেলে পড়বে। এখন পর্যন্ত উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তারা মাদুরোর পক্ষে থাকলেও সেনাবাহিনীর তুলনামূলক কম বয়সী কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছে সাধারণ জনগণের মতোই ক্ষোভ। এ সপ্তাহের শুরুতেই দেশটির ‘বলিভিয়ান ন্যাশনাল গার্ড’ নামে পরিচিত মিলিটারি পুলিশের ২৭ সদস্য বিদ্রোহ করেছিল, যা পরে নস্যাৎ করে দেওয়া হয়।
অনেক বড় তেলের মজুদ থাকা সত্ত্বেও গত কয়েক বছর ধরে কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে ভেনেজুয়েলাকে। সম্প্রতি দেশটির সাধারণ মানুষকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কলম্বিয়া থেকে খাদ্যসহ অন্যান্য জরুরি সামগ্রী সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। আর্থিক দুর্দশা থেকে উক্তি পেতে তাদের অনেকেই আশেপাশের দেশে অভিবাসী হওয়ার চেষ্টা করছেন।

এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে নির্বাচন। তাতে জিতে দ্বিতীয় মেয়াদে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন নিকোলাস মাদুরো। দেশটির বিরোধী দলসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নির্বাচনের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে। বিরোধীদের এমন দাবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অর্থনৈতিক মন্দা। অর্থনৈতিক সংকটে জনগণের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ শেষ পর্যন্ত পরিণত হয় সরকার বিরোধী বিক্ষোভে।