দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস

নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতায় চীনকে হারাতে তৎপর যুক্তরাষ্ট্র

ইন্টারনেট ব্যবস্থার বাস্তবায়নে চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে যাতে যুক্ত হতে না পারে সেজন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইন্টারনেট ব্যবস্থা কে নিয়ন্ত্রণ করবে তা যেন হয়ে উঠেছে এককালের অস্ত্র প্রতিযোগিতার মতো, যখন ভাবনার বিষয় হয়ে থাকতো সর্বাধুনিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি। ইন্টারনেট আজকের বিশ্বের ‘নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতার’ বিষয় হয়ে উঠেছে। আর প্রতিযোগিতায় চীনকে হারাতে মরিয়া যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র দেশগুলোর ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। একদিকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের আলোচনা হচ্ছে ওয়াশিংটনে, অন্যদিকে সতর্ক করা হচ্ছে পোল্যান্ডকে। হুয়াওয়েকে পঞ্চম প্রজন্মের (ফাইভ জি) ইন্টারনেট অবকাঠামো বাস্তবায়নের কাজ দিলে দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী সেনা ঘাঁটি স্থাপনের প্রকল্প ঝুলে যাবে। মার্কিন কর্মকর্তারা জার্মানিতেও গেছেন, চীনের হুয়াওয়ের বিষয়ে তাদের শঙ্কার কথা জানাতে। এ বিষয়ে মার্কিন সংবাদপত্র দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস ২৭ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মুদ্রিত সংখ্যার প্রধান শিরোনাম করেছে, ‘ইউএস স্ক্র্যাম্বলস টু আউটরান চায়না ইন নিউ আর্মস রেস।’Untitled


ফাইভ জি প্রযুক্তির ইন্টারনেট ব্যবস্থা কার্যকর হয়ে গেলে ব্যবহারকারীরা প্রথমেই যেটা খেয়াল করবেন, সেটা হচ্ছে গতি। এই উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবস্থা গড়ে উঠলে বিস্তৃতি লাভ করবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার। সমস্যা হচ্ছে, ফাইভ জি ইন্টারনেট ব্যবস্থা কার্যকরে জটিল ও অত্যাধুনিক যে সফটওয়্যার ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে তার যেকোনও রকম পরিবর্তন করা সম্ভব হবে ব্যবহারকারীর অজ্ঞাতেই। ফলে যার হাতে ইন্টারনেটে ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ থাকবে তার পক্ষে বিপুল পরিমাণ তথ্য পরিবর্তন ও কপি করার সুযোগ চলে যাবে। নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, ফাইভ জি ইন্টারনেট ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ যার হাতে যাবে সে আগামী একশ বছর নেতৃত্বে থাকবে।
ফাইভ জি ইন্টারনেট অবকাঠামো বাস্তবায়নের সঙ্গে যে অর্থনৈতিক ও নজরদারির সুযোগ রয়েছ তা হাতছাড়া হয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্রের, যদি চীনের হুয়াওয়ে এর বাস্তবায়নের কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্রের আশঙ্কা, চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে তাদের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ফাইভ জি ইন্টারনেট অবকাঠামো তৈরি করলে সেখানে তারা গোপন সুযোগ রাখবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর সামরিক-অর্থনৈতিক নজরদারির। যুক্তরাষ্ট্র তাই নেমেছে নতুন যুগের অস্ত্র প্রতিযোগিতায়; ফাইভ জি ইন্টারনেট ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখার।
যুক্তরাজ্যে সঙ্গে চীনের হুয়াওয়ের আলোচনা হয়েছে দেশটির ফাইভ জি ইন্টারনেট অবকাঠামো গড়ে দেওয়ার। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্টের সঙ্গে তা থামাতে আলোচনায় বসেছে ওয়াশিংটন ডিসিতে। যুক্তরাজ্যকে এখন বেছে নিতে হবে, মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চীনকে ক্ষুব্ধ করবে কি না তারা।
অন্যদিকে, পোল্যান্ডকে সরারই বলে দেওয়া হয়েছে, তারা যদি হুয়াওয়েকে পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট অবকাঠামো গড়ার কাজ দেয় তাহলে তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহযোগিতা স্থগিত করা হবে। দেশটিতে ‘ট্রাম্প ফোর্ট’ নামের মার্কিন সেনাবাহিনীর যে স্থায়ী ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে, তা স্থগিত করে দেওয়া হবে।
এদিকে জার্মানির সঙ্গেও কথা বলছেন মার্কিন কর্মকর্তা। ইউরোপের ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের আবাস জার্মানিতে। তারা তাদের ইন্টারনেট অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য হুয়াওয়ের আগ্রহের কথা জানতে পেরেছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, কম দামে কাজ করাতে পারলে নিরাপত্তা ঝুঁকি মেনে নেওয়ার নিয়ত জার্মানির। যুক্তরাষ্ট্র তার নিয়ত পাল্টাতে চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আগের মতো হার্ডওয়্যারে ‘ব্যাকডোর’ না খুঁজে বর্তমান পরিস্থিতিতে চীনা আইন-কানুনই যে বিপদের কারণ সেদিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স সেন্টারের’ উইলিয়াম আর ইভানিয়া মন্তব্য করেছেন, চীনে কোনটা সরকারি, আর কোনটা বেসরকারি তার পার্থক্য খুব কম।
চীন চাইলেই যেকোনও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য করতে পারে। ফলে যারা চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের প্রযুক্তি ব্যবহার করবে, হুয়াওয়েকে সরকারি আদেশ মানতে বাধ্য করার মাধ্যেমে সেসব প্রতিষ্ঠানের ওপরও নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যাবে চীনের সরকার। ২০১৭ সালের জাতীয় গোয়েন্দা আইনে চীন সরকার বলেছে, নজরদারির জন্য যেখানেই দরকার হোক না কেন, চীনের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদেরকে সহায়তা করতে বাধ্য।