দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ

ট্রাম্প বর্ণবাদী, ধূর্ত ও প্রতারক: সাবেক ব্যক্তিগত আইনজীবী কোহেন

ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেন মার্কিন কংগ্রেসের শুনানিতে তাকে ‘বর্ণবাদী ধূর্ত ও প্রতারক’ আখ্যা দিয়েছেন। সেখানে তিনি ৩৫ হাজার ডলার একটি চেক উপস্থাপন করে বলেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনের মাত্র কয়েক দিন আগে পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের মুখ বন্ধ করানোর জন্য ট্রাম্প তাকে ওই অর্থ দিতে বলেছিলেন। ট্রাম্প ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের কাছেও এ বিষয়ে তাকে মিথ্যা বলতে বাধ্য করেছিলেন। এই অর্থ প্রদানের মাধ্যমে ট্রাম্প নির্বাচনি ব্যয় নির্বাহের আইন ভেঙেছেন। আর তা ঢাকতে গিয়ে অভিযুক্ত হয়েছেন তিনি। অন্যদিকে ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি এরকম কোনও কিছু করতে বলেননি কোহেনকে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদপত্র দ্য টেলিগ্রাফ ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মুদ্রিত সংখ্যার প্রধান শিরোনাম করেছে এ বিষয়ে, ‘ট্রাম্প ইজ অ্যা রেসিস্ট, অ্যা কনম্যান অ্যান্ড এ চিট।’1551438742মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেন। তিনি প্রায় এক দশক ধরে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী ছিলেন। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তার প্রতি কোহেনের সমর্থন এতটা বেড়ে গিয়েছিল যে এক পর্যায়ে তিনি বলেছিলেন, ট্রাম্পকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনে তিনি গুলির সামনে বুক পেতে দেবেন। কিন্তু গত ডিসেম্বরে আদালত তাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়। অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিল ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে মুখ বন্ধের জন্য দুই নারীকে অর্থ দেওয়া, রাশিয়ায় প্রস্তাবিত ট্রাম্প টাওয়ার প্রকল্পের বিষয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া এবং কর ফাঁকি দেওয়া। এর সবগুলোতেই দোষ স্বীকার করেছিলেন মাইকেল কোহেন। আদালতের রায়ে সাজা পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় নিজের সব অপকর্মের জন্য সাবেক মক্কেল ট্রাম্পকে দায়ি করেন এই আইনজীবী।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মাইকেল কোহেন মার্কিন কংগ্রেসের সঙ্গে এক শুনানির জন্য উপস্থিত হন।  সেখানেও তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ দেওয়ার জন্য একটি চেক আমার হাতে দেন। সংশ্লিষ্ট নারীর মুখ বন্ধের জন্য এই অর্থ খরচের মাধ্যমে তিনি নির্বাচনি ব্যয় সংক্রান্ত আইন ভঙ্গ করেছেন। আর তার এই দোষ ঢাকার চেষ্টা করার জন্যই আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।’ তিনি আরও জানিয়েছেন, ট্রাম্পের কাছ থেকে তিনি মোট ১১টি চেক পেয়েছেন এক বছর ধরে, যার মাধ্যমে স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। কংগ্রেসের সামনে যে চেক কোহেন উপস্থাপন করেন, তার তারিখ ২০১৭ সালের পয়লা আগস্ট। যার অর্থ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরও ট্রাম্প এই অর্থ পরিশোধ করে গেছেন।
কোহেন জানিয়েছন, ট্রাম্প তাকে বলেছিলেন মেলানিয়া কাছে স্টর্মি ড্যানিয়েলসের বিষয়ে সঠিক তথ্য না দিতে। তার ভাষ্য, ‘ফার্স্ট লেডির কাছে মিথ্যা বলাটা আমার জীবনের সবচাইতে বড় অনুতাপের বিষয়গুলোর একটি। তিনি একজন দয়ালু এবং ভালো মানুষ। আমি তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি।’
কোহেন আরও দাবি করেছেন, উইকিলিকস যে প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের  হ্যাক হয়ে যাওয়া ইমেইল ফাঁস করবে তা আগে থেকেই জানতেন ট্রাম্প। নির্বাচনি প্রচারণা চলা অবস্থায় ট্রাম্পের ছেলে ডোনাল্ড জুনিয়র এবং একজন রাশিয়ান আইনজীবীর নিউ ইয়র্কে অবস্থিত ট্রাম্প টাওয়ারে অনুষ্ঠিত বৈঠকটির বিষয়েও ট্রাম্প আগে থেকে জানতেন। গতবার যখন তিনি কংগ্রেসে সাক্ষ্য দিতে গিয়েছিলেন তখন মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তাকে বাধ্য করেছিলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের বিষয়ে কংগ্রেসে উপস্থাপিত মাইকেল কোহেনের মূল্যায়ন: ‘আমি জানি ট্রাম্প কী। তিনি একজন বর্ণবাদী। তিনি একজন ধূর্ত। তিনি একজন প্রতারক।’ ট্রাম্প কে মিথ্যাবাদীও আখ্যা দিয়েছেন কোহেন। তারা ভাষায়, ট্রাম্প ‘চরিত্রগতভাবেই অবিশ্বস্ত প্রকৃতির।’ তিনি আমেরিকার জনগণের ব্যাপারে কোনও পরোয়া করেন না। ঘৃণা ও অসহিষ্ণুতাকে ব্যবহার করে নিজের প্রচারণা চালিয়ে ছিলেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হতে চেয়েছিলেন নিজের ‘ব্র্যান্ডকে গ্রেট’ করার জন্য, ‘দেশকে গ্রেট’ বানানোর জন্য নয়। এই দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার কোনও নিয়ত তার নেই। তার একমাত্র উদ্দেশ্য নিজের প্রচার-প্রচারণা চালানো। নির্বাচিত হওয়ার কথা তিনি নিজেও কখনও ভাবেননি।’