দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস

ফিলিপাইনের জঙ্গলে সুযোগ পাচ্ছে ইসলামিক স্টেট

ফিলিপাইনে মুসলিম প্রধান মিন্দানাও অঞ্চলে সুযোগ পাচ্ছে ইসলামিক স্টেটের অনুগত জঙ্গিরা। অঞ্চলটিকে তারা ইসলামিক স্টেটের পূর্ব এশীয় প্রদেশ হিসেবে গণ্য করে। এর সঙ্গে যুক্ত সাবেক সদস্যদের ভাষ্য থেকে সেখানে বিদেশি যোদ্ধাদের উপস্থিতির কথা জানা গেছে। ফিলিপাইনের সরকারি সূত্রগুলোও নিশ্চিত করেছে, মিন্দানাওয়ের জঙ্গলঘেরা বাছিলান দ্বীপে যাওয়া পথে বোমা বানানোর সরঞ্জাম ও অর্থসহ আটক হয়েছে বিদেশিরা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমস ২০১৯ সালের ১০ মার্চ মুদ্রিত সংখ্যা প্রধান শিরোনাম করেছে এ বিষয়ে, ‘ফার ফ্রম সিরিয়া, অ্যা উইল্টিং আইএসআইএস ফাইন্ডস রিচ সয়েল।’Newspaper_New_York_Times_(USA)._Newspapers_in_USA._Today`s_press_covers._Kiosko.net_-_2019-03-11_07.18.19একসময় ইসলামিক স্টেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছিল সিরিয়া ও ইরাকের বহু অংশ। তাদের খেলাফতের শাসনে থাকতে হয়েছে প্রায় এক কোটি মানুষকে। পাঁচ বছর পরে এখন খেলাফত সঙ্কুচিত হয়ে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে ইউফ্রেটিস নদীর এক বাঁকে। মরুভূমির মধ্যে অবস্থিত বাঘুজের কয়েকটি সড়কেই কেবল তাদের দখল কায়েম রয়েছে। সেখান থেকে তাদের নিশ্চিহ্ন করতে প্রবল হামলা চালাচ্ছে মার্কিন সমর্থিত কুর্দি যোদ্ধাদের সংগঠন ‘সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস’ (এসডিএফ)।
১৯৯০-এর দশকে ফিলিপিনোরা যখন আফগানিস্তান যুদ্ধ থেকে ফিরতে শুরু করে তখন তাদের সঙ্গে ফিলিপাইনে যায় ইয়েমেন-সৌদি আরবের মাদ্রাসায় প্রশিক্ষিতরা। আল-কায়েদার একটি শাখা হিসেবে বিবেচিত জামেয়াহ ইসলামিয়াহ নামের একটি জঙ্গি সংগঠন ২০০২ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অবস্থিত এক নাইট ক্লাবে ২০০ জনকে হত্যা করে। এই ঘটনায় জড়িত জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ হয়েছিল ফিলিপাইনের জঙ্গলে।
ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় অবস্থিত ‘ইনস্টিটিউট ফর পলিসি অ্যানালাইসিস অব কনফ্লিক্টের’ পরিচালক সিডনি জোন্স মন্তব্য করেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ফিলিপাইনের বিচ্ছিন্ন জঙ্গিদের একতাবদ্ধ হওয়া উপলক্ষ আসে। ফিলিপাইনের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসলামিক স্টেট ২০১৬ সালের দিকে দক্ষিণ ফিলিপাইনে সদস্য সংগ্রহের জন্য সবচাইতে বড় উদ্যোগ গ্রহণ করে। তাদের ভিডিও প্রচারণার সূত্রে ইরাক এবং সিরিয়াতে যেতে না পারা চেচনিয়া, সোমালিয়া এবং ইয়েমেনের অনেক জঙ্গি ফিলিপাইনে যায়।
এর পরের বছর ইসলামিক স্টেটের প্রতি আনুগত জঙ্গিরা মিন্দানাও দ্বীপের একটি শহর দখল করে নেয়। পাঁচ মাস পরে সেই শহরের দখল ফিরে পায় ফিলিপাইন। দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে প্রাণ হারায় ৯০০ জনের বেশি জঙ্গি। এদের মধ্যে ছিল বিদেশি যোদ্ধারাও। ইসলামিক স্টেটের পূর্ব এশিয়ার আমিরের দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিও সে সময় নিহত হয়। বাসিলান দ্বীপের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, সেখানে জঙ্গিদের তেমন কোনও উপস্থিতি নেই। কিন্তু ফিলিপাইনের সেনা কর্মকর্তা কর্নেল জেরি বেসানা মনে করেন, মিন্দানাওয়ের বাসিলান দ্বীপে ২০০ জনের মতো বিদেশি জঙ্গি রয়েছে, যারা ইসলামিক স্টেটের প্রতি অনুগত।
জঙ্গি সংগঠনটির সাবেক সদস্য ইন্দামার ভাষ্য থেকে নিউ ইয়র্ক টাইমস জেনেছে, জঙ্গলের প্রশিক্ষণ শিবিরগুলোতে বিদেশি যোদ্ধাদের উপস্থিতি রয়েছে। অবশ্য ফিলিপাইনের সরকার খুব স্পষ্টভাবে তা স্বীকার করে না। বাসিলান দ্বীপে কোনও বিদেশি জঙ্গি নেই, এমন দাবি গত বছরের জুলাই মাসে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যখন ফিলিপাইনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঘটে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা। ইসলামিক স্টেট এ হামলার দায় স্বীকার করে জানায়, আত্মঘাতী হামলাকারী মরক্কোর নাগরিক। পরবর্তীতে ফিলিপাইনের সরকারও স্বীকার করে নেয় হামলাকারীর ওই পরিচয়।
সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত বছর বাসিলান দ্বীপে যাওয়ার পথে একজন স্পেনীয় নাগরিককে আটক করা হয়েছে, যার কাছে ছিল বোমা বানানোর সরঞ্জাম। মিশরীয় এক নাগরিককে আটক করা হয়েছে ১৯ হাজার ডলার সমেত। সেও বাসিলান দ্বীপে যাচ্ছিল। ফিলিপাইন ‘ইনস্টিটিউট ফর পিস, ভায়োলেন্স অ্যান্ড টেরোরিজম রিসার্চের চেয়ারম্যান রোমেল বানালোই মন্তব্য করেছেন, ‘ইসলামিক স্টেট বর্তমান ফিলিপাইনের সবচাইতে জটিল এবং বাড়তে থাকা এক সমস্যা। আমাদের এমন ভাব করা উচিত না যে তাদের অস্তিত্ব নেই। কারণ আমরা চাই, তাদের নির্মূল করতে।’