দ্য গার্ডিয়ান

প্রধানমন্ত্রীর পদ ও ব্রেক্সিট বাঁচাতে মরিয়া থেরেসা মে

ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের চুক্তি চূড়ান্ত করে আনতে নিয়ে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যেতে হচ্ছে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মেকে। ইউরোপিয়ান ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আবারও আলোচনার পর যে চুক্তি তিনি সংসদের ভোটাভুটির জন্য উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন, তা পাস করানোর মতো ভোট প্রাপ্তির নিশ্চয়তা এখনও তৈরি হয়নি। নর্দান আয়ারল্যান্ডের শুল্ক-সীমান্ত নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সন্দেহের চোখে দেখা ব্রেক্সিটপন্থী এমপিরা হুমকি দিয়ে রেখেছেন, এবার চুক্তি পাস না হলে তারা মের নেতৃত্বে বিরুদ্ধে এক জোট হয়ে দাঁড়াবেন। অথচ সমালোচনামুখর এমন প্রায় শখানেক ইউরোস্কেপটিকের ভোট দরকার মের নতুন খসড়া চুক্তিটি হাউস অব কমন্সে পাস করানোর জন্য। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ান ২০১৯ সালের ১১ মার্চ মুদ্রিত সংখ্যা প্রধান শিরোনাম করেছে এ বিষয়ে, ‘মে ফাইটস টু সেভ হার ব্রেক্সিট ডিল অ্যান্ড হার জব অ্যাজ ইউরোস্কেপটিকস সার্কেল।’Newspaper_The_Guardian_(United_Kingdom)._Newspapers_in_United_Kingdom._Today`s_press_covers._Kiosko.net_-_2019-03-12_01.17.49

২০১৬ সালের ব্রেক্সিট গণভোটের রায় অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ রাত ১১টার পর থেকে আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য থাকবে না যুক্তরাজ্য। ব্রেক্সিট পরবর্তীকালে ইইউয়ের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের শর্ত নির্দিষ্ট করে একটি খসড়া চুক্তি প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সে তা সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যের সমর্থন পায়নি। মূল সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়টি। তাছাড়া, ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের পরিকল্পনার সঙ্গে দ্বিমত জানিয়ে ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টি থেকে পদত্যাগ করেছেন অন্তত সাত জন এমপি। মে আবার ইইউ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সংসদ সদস্যদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে এমন একটি চুক্তি উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন মঙ্গলবার (১২ মার্চ)।


ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের পাশাপাশি সহযোগী ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টিও জানিয়ে দিয়েছে, নতুন চুক্তিতে যদি এমন কোনও কিছু থাকে যাতে নর্দান আয়ারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে শুল্ক-সীমান্ত তৈরি হয় বা যুক্তরাজ্যকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের শুল্ক কাঠামোর অনুগত থাকতে হয়, তাহলে তারা সেই চুক্তির জান জানালেন না মেয়েকে পক্ষে ভোট দেবেন না। ব্রেক্সিট চুক্তির পক্ষে ভোট নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বিরোধী দল লেবার পার্টির সদস্যদের মন জয়েরও চেষ্টা করছেন। তিনি তাদেরকে আরও বেশি শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতের ব্যবস্থা গ্রহণ ও অপেক্ষাকৃত অনুন্নত শহরগুলোর উন্নয়নে বিশাল অঙ্কের অর্থ বরাদ্দের আশ্বাস দিয়েছেন ।
বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট ব্রেক্সিটপন্থী হওয়া সত্ত্বেও মের ব্রেক্সিট চুক্তির বিরুদ্ধে যাওয়া এমপিদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এবার যদি সংসদে উপস্থাপিত চুক্তিটি পাস না হয় তাহলে তা ব্রেক্সিট বাতিল করে দেওয়ার মতোন পরিস্থিতি তৈরি করবে। তার ভাষ্য, বিরোধীদের পালে হাওয়া লেগেছে এবার চুক্তি পাস করতে না পারলে তাদের দ্বিতীয় গণভোটের দাবি বাস্তবায়িত হয়ে যেতে পারে।
ইউরোস্কেপ্টিকরা চুক্তির সমালোচনা করলেও ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন বিলম্বিত করতে চায় না। কারণ একদিকে যেমন দ্বিতীয় গণভোটের দাবি শক্তিশালী হয়ে উঠবে, অন্যদিকে তেমনি ব্রেক্সিট বিলম্বের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাজ্যকে শত শত কোটি পাউন্ড জরিমানার সুযোগ পাবে।
কিন্তু থেরেসা মে যদি সংসদে গ্রহণযোগ্য কোনও চুক্তি উপস্থাপন করতে না পারেন তাহলে ব্রেক্সিটপন্থী এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে সন্দেহের চোখে দেখা এমপিরা প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মেকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে একযোগে কাজ করতে পারেন। এ বিষয়ে আভাস পাওয়া গেছে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নিকি মর্গান ও ব্রেক্সিট বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী ডোমিনিক রাবের কাছ থেকে।