দ্য হেরাল্ড

থেরেসা মের ব্রেক্সিট চুক্তি: যেমন বিলম্বিত, তেমন হতাশাজনক

দ্বিতীয়বারের মতো ব্রিটিশ হাউস অব কমন্সের ভোটাভুটিতে হেরে গেছে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের উত্থাপন করা ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন চুক্তি। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দ্বিতীয় দফার ভোটাভুটিতে ৩৯১-২৮২ ভোটে এমপিরা তার পরিকল্পনা প্রত্যাখান করেন। দীর্ঘ সময় ধরে ইইউ নেতাদের সঙ্গে চুক্তি নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনা পর গত জানুয়ারিতে চুক্তিটির প্রথম সংস্করণ উপস্থাপন করেছিলেন তিনি। সেটি ৪৩২-২০২ ভোটে হেরে যায়। তারপর পার হয়ে যায় প্রায় দুই মাস।কিন্তু নতুন চুক্তি উপস্থাপনে এই বিলম্বও নিশ্চিত করতে পারল না ব্রেক্সিটের ভবিষ্যৎ। যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ডভিত্তিক সংবাদপত্র দ্য হেরাল্ড ২০১৯ সালের ১৩ মার্চ মুদ্রিত সংখ্যা প্রধান শিরোনাম করেছে এ বিষয়ে, ‘ডিলে অ্যান্ড ডিসমে।’Capture
২০১৬ সালের ব্রেক্সিট গণভোটের রায় অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ রাত ১১টার পর থেকে আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য থাকবে না যুক্তরাজ্য। ব্রেক্সিট পরবর্তীকালে ইইউয়ের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের শর্ত নির্দিষ্ট করে একটি খসড়া চুক্তি প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সে তা সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যের সমর্থন পায়নি। মূল সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়টি। তাছাড়া, ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের পরিকল্পনার সঙ্গে দ্বিমত জানিয়ে ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টি থেকে পদত্যাগ করেছেন অন্তত সাত জন এমপি। মে আবার ইইউ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সংসদ সদস্যদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে এমন একটি চুক্তি উপস্থাপন করেছেন মঙ্গলবার (১২ মার্চ)। আর তা পরাজিত হয়েছে।
এখন সামনে দুইটি পথ খোলা আছে। প্রথমত, চুক্তিহীনভাবে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়া ও দ্বিতীয়ত ব্রেক্সিট বাতিলের বাস্তবতা মেনে নেওয়া। যুক্তরাজ্য ‘নো-ডিল’ ব্রেক্সিটের বাস্তবায়ন চায় কি না সে বিষয়ে হাউস অব কমন্সে ভোটাভুটি হবে বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ)। যদি নো-ডিলের পক্ষে সমর্থন আসে তাহলে যুক্তরাজ্য পূর্বনির্ধারিত দিনক্ষণে, ২৯ মার্চ রাত ১১টা, আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করবে।
আর যদি তা না হয় তাহলে ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন ২৯ মার্চ থেকে পিছিয়ে দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সেক্ষেত্রে ব্রেক্সিট বাতিল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। স্বয়ং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে গত ডিসেম্বরে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, তার প্রস্তুত করা ব্রেক্সিট চুক্তিকে সমর্থন না করলে তা ব্রেক্সিট বাতিলের পরিস্থিতি তৈরি করবে। গত রবিবার (১০ মার্চ) ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্টও দ্বিতীয় দফা ভোটাভুটির আগে একইরকম মন্তব্য করেছিলেন। ‘ব্রেক্সিট বিরোধীদের পালে হাওয়া লেগেছে’ উল্লেখ করে তিনি সতর্ক করেছিলেন,‘আপনি যদি ব্রেক্সিট বন্ধ করাতে চান, তাহলে মাত্রা তিনটি পদক্ষেপ দরকার। একটি হচ্ছে ব্রেক্সিট চুক্তি পাস করাতে না দেওয়া, যার ফলে প্রলম্বিত হতে বাধ্য হবে ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন এবং তৃতীয় ধাপে আরেকটি গণভোট।’
দ্য হেরাল্ড লিখেছে, এবারও প্রস্তাবটি হেরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে খুব সম্ভবত প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের শাসনকাল শেষ হতে চলেছে। হয়তো এটা ব্রেক্সিটেরও শেষ অধ্যায়। ব্রেক্সিটপন্থী হওয়া সত্ত্বেও চুক্তির বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে সংশ্লিষ্ট এমপিরা ‘অসচেতনে’ ব্রেক্সিট বাতিলের পরিস্থিতিকেই ডেকে এনেছেন।