দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস

জমা পড়েছে মুলারের প্রতিবেদন, মার্কিন কংগ্রেসে প্রকাশ হবে তথ্য

মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ এবং তাতে ট্রাম্প শিবিরের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে করা তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন বিধি অনুযায়ী মার্কিন আইন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন বিশেষ তদন্তকারী রবার্ট মুলার। শুক্রবার (২২ মার্চ) জমা দেওয়া এই প্রতিবেদনের বিষয়ে মার্কিন আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মুলারের তদন্তের মূল ফলাফল কংগ্রেসের কাছে উপস্থাপন করা হবে। এদিকে, ট্রাম্পের আইনজীবীরা এরই মধ্যে তোড়জোড় শুরু করেছেন, প্রতিবেদনে আপত্তিকর কিছু থেকে থাকলে তার প্রকাশ নিষিদ্ধ করার। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমস ২০১৯ সালের ২৩ মার্চ মুদ্রিত সংখ্যার প্রধান শিরোনাম করেছে, ‘মুলার সাবমিটস ট্রাম্প ইনক্যুয়ারি ফাইন্ডিংস।’Capture
২০১৬ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়টি অনেকদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রে। অভিযোগ রয়েছে, এই নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জেতাতে মস্কো প্রপাগান্ডা ছড়িয়েছিল, যাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পালন করেছিল বড় ভূমিকা। সাবেক এফবিআই পরিচালক জেমস কোমিকে বরখাস্তের পর এ বিষয়ক তদন্তে বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ ওঠে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের’ (এফবিআই) জেমস কোমিকে অপসারণের পর বিশেষ তদন্তকারী রবার্ট মুলারকে ২০১৭ সালের মে মাসে দায়িত্ব দেওয়া হয় নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়ে তদন্ত পরিচালনার জন্য। আগে তিনি তদন্তটির তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত ছিলেন। মুলার এফবিআইয়ের সাবেক প্রধান। মার্কিন আইন মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের পদেও কাজ করেছেন তিনি।
গত শুক্রবার (২২ মার্চ) মুলার তার তদন্ত প্রতিবেদন মার্কিন আইনমন্ত্রী উইলিয়াম বারকে হস্তান্তর করেছেন। বার জানিয়েছেন, এ সপ্তাহের মধ্যেই কংগ্রেসকে তিনি মুলারের তদন্ত প্রতিবেদনের মূল ফলাফল সম্পর্কে অবহিত করবেন। নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, বহুল প্রতীক্ষিত এই প্রতিবেদনটির বিষয়ে আইনমন্ত্রীর এই ঘোষণাটি ‘বিস্ময়কর রকম দ্রুত।’ বার কংগ্রেসের নেতাদের উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে আরও জানিয়েছেন, তথ্য উপস্থাপনে  যথাসম্ভব স্বচ্ছতা বজায় রাখার বিষয়ে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
ট্রাম্প মুলারের তদন্তের বিষয়ে কোনও বাধা দিয়েছিলেন কি না সে বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র নিউ ইয়র্ক টাইমসের কাছে দাবি করেছে, প্রশাসন যদি এমন কোনও চেষ্টা করত তাহলে তা তখনই হাউস অব কমন্স ও সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটিকে জানানোর বাধ্যবাধকতা ছিল। আইন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ আরেকটি সূত্র বলেছে, মুলার নতুন করে কাউকে অভিযুক্ত করবেন না। অর্থ প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তার ভিত্তিতে ট্রাম্পের আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত হওয়ার বিষয়ে যেসব কথা চলছে, তা বাস্তব হবে না।  কিন্তু ট্রাম্পের আইনজীবীরা এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন, প্রতিবেদনে আপত্তিকর কিছু থাকলে তা প্রকাশ নিষিদ্ধ করতে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে মুলারের তদন্তে এরই মধ্যে ট্রাম্পের আধা ডজন সহযোগী অভিযুক্ত হয়েছেন। এদের কারও কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিতও হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলোর মধ্যে অসত্য সাক্ষ্য দেওয়াটাই প্রধান অভিযোগ। বাকিদের বিরুদ্ধে থাকা তদন্ত কার্যক্রম অন্যান্য তদন্তকারীদের হাতে ন্যস্ত করে দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্পের সহযোগী ছাড়াও রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও অন্যান্য নাগরিকরা মুলারের তদন্তে অভিযুক্ত হয়েছেন।
মুলারের তদন্তের ভিত্তিতে নতুন করে কাউকে অভিযুক্ত করা হবে না, এমন সংবাদের ভিত্তিতে মুখ খুলেছেন রিপাবলিকান রাজনীতিবিদরা। তারা বলছেন, রাশিয়ার সঙ্গে কোনও আঁতাত ছিল না এমন কথা তো তারা আগে থেকেই বলে আসছেন। এদিকে আর ২০২০ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হতে চান এমন রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট রাজনীতিবিদরা দাবি করছেন, মুলারের তদন্ত প্রতিবেদন যেন সম্পূর্ণভাবে জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করে দেওয়া হয়।