গাল্ফ টাইমস

ব্রেক্সিট ইস্যুতে নতুন গণভোটের দাবিতে ১০ লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ

ব্রেক্সিট নিয়ে নতুন একটি গণভোটের দাবিতে যুক্তরাজ্যে ১০ লাখের বেশি মানুষ সমাবেশ করেছেন। সমাবেশে লেবার পার্টির সহ-প্রধান সমাবেশে ভাষণ দিয়েছেন এবং সমাবেশে বামপন্থী কয়েকটি সংগঠন জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নিয়েছে। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্রেক্সিট চুক্তির বিরোধিতায় কনজারভেটিভ পার্টি থেকে পদত্যাগ করা সাবেক এক টোরি এমপি। নতুন ব্রেক্সিট গণভোটকে জনগণের মধ্যে সৃষ্ট বিভক্তি নিরসনের পথ বলে মনে করেছেন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা। রবিবার কাতারের ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা গাল্ফ টাইমস খবরটি শিরোনাম প্রতিবেদন হিসেবে প্রকাশ করেছে।

গাল্ফ টাইমস
২০১৬ সালের ব্রেক্সিট গণভোটের রায় অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ রাত ১১টার পর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। ব্রেক্সিট পরবর্তীকালে ইইউয়ের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের শর্ত নির্দিষ্ট করে একটি খসড়া চুক্তি প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সে তা সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যের সমর্থন পায়নি। থেরেসা মে আবার ইইউ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সংসদ সদস্যদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে এমন একটি চুক্তি উপস্থাপন করেন গত ১২ মার্চ। কিন্তু তাও পরাজিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে তৃতীয়বারের মতো চুক্তিটি হাউস অব কমন্সে তোলার কথা জানিয়েছিলেন মে। কিন্তু প্রস্তাবটি পাসে যথেষ্ঠ সংখ্যক এমপির সমর্থ পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।
শনিবার (২৩ মার্চ) আরেকটি ব্রেক্সিট গণভোটের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দেওয়া লন্ডনের মেয়র সাদিক খান মন্তব্য করেছেন, ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের বিভ্রান্তিকর পথ কার্যত ব্রেক্সিট বাস্তবায়নকে ব্যর্থ করেছে। এখন ব্রেক্সিটের বিষয়ে গণভোট আয়োজন ছাড়া কোনও পথ খোলা নেই। ব্রেক্সিটের ‘সময় শেষ হয়ে গেছে’ উল্লেখ করে সাদিক খান আরও বলেছেন, ‘নতুন করে চুক্তির বিষয়ে দেন-দরবার করার জন্য আর কোনও সময় অবশিষ্ট নেই। এবং প্রধানমন্ত্রী তার বিভ্রান্তিকর তৎপরতার মাধ্যমে আমাদের ভালো ইউরোপীয় বন্ধুদের আস্থা নষ্ট করেছেন। যারা উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষা হয় এমন একটি ভালো চুক্তি পাওয়ার বিষয়ে সহায়তা করতে চেয়েছিলেন, তারাই এখন ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ায় ইতি চান।’
সমাবেশের আয়োজকদের মধ্যে মারিয়েলা ফ্রস্ট্রাপ এবং রিচার্ড বেকন এক পর্যায়ে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট স্কয়ারে ঘোষণা দেন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তখন যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টি থেকে পদত্যাগ করা এবং বর্তমানে নিরপেক্ষ সংসদ সদস্য হিসেবে কাজ করা রাজনীতিবিদ অ্যানা সৌব্রিকে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়। ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির এই সদস্যসহ আরও কয়েকজন থেরেসা মের ব্রেক্সিট চুক্তির বিরোধিতা করে দল থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।
এদিকে যুক্তরাজ্যের বামপন্থী কতগুলো সংগঠন ব্রেক্সিটের বিরোধিতায় একজোট হয়েছে। শনিবারের সমাবেশে ‘অ্যানাদার ইউরোপ ইজ পসিবলের’ ব্যানারে একতাবদ্ধ হওয়া এসব বামপন্থী সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রিন পার্টি, টিএসএসএ ইউনিয়ন, ওপেন লেবার এবং লেবার ফর সোশ্যালিস্ট ইউরোপের সদস্যরা। তাদের সঙ্গে রয়েছেন লেবার পার্টির কয়েকজন সংসদ সদস্যও। এদের একজন ক্লাইভ লিউইস। তিনি মনে করেন, ব্রেক্সিট বিরোধিতাকে যে শুধু মধ্যপন্থীদের আন্দোলন হিসেবে দেখা হয় তা ঠিক না। বামপন্থীরাও ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে। ব্রেক্সিট একটি ‘টোরি’ প্রজেক্ট, যার মূল লক্ষ্য অর্থনীতিকে বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া এবং শ্রমিক-অভিবাসী সবার অধিকার ক্ষুণ্ন করা।
ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির সাবেকসদস্য থেকে শুরু বামপন্থীরাও দ্বিতীয় গণভোটের যে কর্মসূচিতে সরব হয়েছেন, সেখানে দেখা গেছে লেবার পার্টির শীর্স্থানীয় একজন নেতাকেও। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান মনে করে, ব্রিটিশ লেবার পার্টির সহ-প্রধান টম ওয়াটসনের উপস্থিতি, দ্বিতীয় ব্রেক্সিট গণভোটের দাবির প্রতি লেবার পার্টির অবস্থান স্পষ্ট করবে। র‍্যালির পরে সমাবেশে দেওয়া ভাষণে ওয়াটসন বলেছেন, ব্রেক্সিটের বিষয়ে আবার গণভোটের আয়োজন করা উচিত। এই ভোটের মাধ্যমেই জাতি ঐক্যবদ্ধ হবে এবং একসঙ্গে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারবে।