কুয়েত টাইমস

গাজা সীমান্তে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ

‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ কর্মসূচির বর্ষপূর্তিতে গাজায় ইসরায়েল সীমান্তে বিক্ষোভে জড়ো হন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। বিক্ষোভে ইসরায়েলি গুলিতে ৩ ফিলিস্তিন তরুণ নিহত হয়েছে। বিক্ষোভ শুরু হওয়ার আগে আরেক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের ৯ এপ্রিলের পূর্বে ভূমি দিবসের বিক্ষোভের বর্ষপূর্তি নিয়ে বেশ সতর্ক অবস্থায় ছিল দেশটি। সীমান্তে কয়েক হাজার অতিরিক্তি সেনা মোতায়েন করে নেতানিয়াহু সরকার। রবিবার কুয়েত টাইমস খবরটি শিরোনাম প্রতিবেদন হিসেবে প্রকাশ করেছে।

কুয়েত টাইমস

১৯৭৬ সাল থেকে বছরের ৩০শে মার্চ ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের দখলদারিত্বের প্রতিবাদে ‘ভূমি দিবস’ পালন করছে। ওইদিন নিজেদের মাতৃভূমির দখল ঠেকাতে বিক্ষোভে নামলে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে ৬ ফিলিস্তিনি নিহত হন। তাদের স্মরণে ওই বছর থেকেই ভূমি দিবস পালন করে আসছেন ফিলিস্তিনিরা। ২০০৭ সাল থেকে গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান এবং পূর্বপুরুষের ঘর-বাড়ি ফিরে পাওয়ার দাবিতে ২০১৮ সালের ৩০ মার্চ থেকে ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ নামের বিক্ষোভ শুরু করে ফিলিস্তিনিরা। এর অংশ হিসেবে ইসরায়েল সীমান্তে নিয়মিত আয়োজিত হতে থাকে প্রতিবাদ বিক্ষোভ। শনিবার ছিল ফিলিস্তিনিদের গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন বা ভূমি দিবসের বর্ষপূর্তি। বরাবরের মতোই এদিনের কর্মসূচিতেও বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলে পড়ে দখলদার বাহিনী।

গাজা সীমান্তে বিক্ষোভ করার সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে তিন কিশোরসহ চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৪০ জনেরও বেশি। ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ এর বর্ষপূর্তিতে বিক্ষোভ করার সময় ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালায় ইসরায়েলি বাহিনী।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এদিনের বিক্ষোভেও গুলি ছুড়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়। আর বিক্ষোভ শুরুর আগেই ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে একজন।

পূর্ববর্তী বিক্ষোভের চেয়ে এবার প্রাণহানির সংখ্যা কমিয়ে আনতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিল মিসর। হামাস জানিয়েছিল, সীমান্ত বেড়ার দিকে যেন বিক্ষোভকারীরা না যায় তা নিশ্চিত করবে তারা। বিনিময়ে ইসরায়েল সীমান্তবেড়া থেকে দূরে থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি ছুড়বে না। এ ধরনের কোনও চুক্তি হওয়ার কথা জানায়নি ইসরায়েল। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারী সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় জড়ো হয়েছে। সীমান্ত বেড়া অতিক্রম করে বিক্ষোভকারীরা পাথর ও বিস্ফোরক নিক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ তাদের।  

শনিবার বিক্ষোভ শুরুর আগে এক ফিলিস্তিনি তরুণকে গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। নিহত তরুণের নাম মোহাম্মদ সাদ (২১)।শনিবারের কর্মসূচিকে সামনে রেখে আয়োজিত মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন সাদ। ইসরায়েলি সীমান্তের কাছে পৌঁছানোর পর তাদের দিকে ছররা গুলি ছোড়ে দেশটির সেনা সদস্যরা। এতে মাথায় গুলি লাগে সাদের। এ সময় ইসরায়েলি সীমান্ত থেকে ১০০ মিটারেরও বেশি দূরে ছিলেন তিনি। 

বিক্ষোভ দমনের নামে ২০১৮ সালে প্রায় ২০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। জাতিসংঘ মনে করে, এসব ফিলিস্তিনিকে হত্যার দায়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা যেতে পারে। এমন অনেককে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী গুলি করেছে যারা স্পষ্টতই সহিংসতায় জড়িত নয়। এদের মধ্যে শিশুরা যেমন রয়েছে শিশু, তেমনি রয়েছে চিকিৎসাকর্মী ও সাংবাদিকরাও।