দ্য গার্ডিয়ান

ইয়েমেনে সৌদি জোটের অভিযানে সংশ্লিষ্টতা নিয়ে চাপের মুখে ব্রিটিশ প্রশাসন

Guardianইয়েমেনে সৌদি আবরের নেতৃত্বাধীন জোটের হামলায় যুক্তরাজ্যের ভূমিকা নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন ফাঁসের ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে ব্রিটিশ প্রশাসন। চাপের মুখে রয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন হামলায় যুক্তরাজ্যের অবস্থানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ডেভিড ক্যামেরনের কাছে বিশদ ব্যাখ্যা চেয়েছেন অনেকে। ওই হামলাকে মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ। ইয়েমেন অভিযানে যুক্তরাজ্যের সম্পৃক্ততা নিয়ে জানতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে যৌথ চিঠি দিয়েছেন ব্রিটেনের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন এবং ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি বেন।
ফাঁস হওয়া প্রতিবেদনে ইয়েমেনে সৌদি জোটের ব্যাপক ও পদ্ধতিগত হামলার কথা বলা হয়েছে। ৫১ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনটি গত সপ্তাহে জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনের একটি কপি হাতে পায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। এতে সৌদি জোটের ১১৯টি হামলার উল্লেখ রয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব হামলার অনেকগুলোই ছিল বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুর ওপর।

এই বোমা হামলায় ব্রিটেনের ভূমিকা ধীরে ধীরে সামনে আসছে। চলতি মাসেই সৌদি আরব জানিয়েছে, ইয়েমেনের ঠিক কোন স্থানে বোমা হামলা চালানো হবে তা নির্ধারণের মূল দায়িত্বে রয়েছেন যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। এ সংক্রান্ত নির্দেশনার সঙ্গে ঠিক কি পরিমাণ জনবলের সম্পৃক্ততা রয়েছে সেটা জানাতে অস্বীকার করেছে সৌদি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তারা শুধু জানিয়েছে, এটা একটা ছোট টিম এবং তাদের ভূমিকা অপারেশনাল নয়।

হামলায় যুক্তরাজ্যের ভূমিকা নির্ণয়ে জেরেমি করবিন স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানান। জাতিসংঘের প্রতিবেদনের আলোকে সৌদি আরবে যুক্তরাজ্যের অস্ত্র রফতানি নীতির বিষয়টিও সামনে নিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন এবং ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি বেন প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া তাদের চিঠিতে সৌদি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ব্রিটিশ কর্মীদের সম্পৃক্ততার একটা সঠিক চিত্র জানতে চান।

চিঠিতে মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এসব ব্রিটিশ কর্মীদের সম্পর্কে ব্যবস্থা নিতে ব্রিটিশ সরকার কোনও প্রতিবেদন পেয়েছে কিনা- সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করতেও প্রধানমন্ত্রীর নিকট আহ্বান জানান করবিন এবং ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি বেন।

জাতিসংঘ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনের আলোকে ইয়েমেনে মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের ঘটনায় শিগগিরই সৌদি আরবে অস্ত্র রফতানির লাইসেন্সের একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা এবং দেশটিতে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করতে তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।

এদিকে যুক্তরাজ্যে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর পরিচালক ডেভিড মেপহ্যাম। তিনি বলেন, ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের হামলার বিষয়ে ব্রিটিশ মন্ত্রীদের বারবার দেওয়া বিবৃতি জাতিসংঘের প্রতিবেদনের সঙ্গে স্পষ্টতই সাংঘর্ষিক। প্রায় এক বছর ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাজ্যের মিত্র সৌদি আরব এবং সৌদি জোটের অন্য সদস্য দেশগুলোর জোট প্রচলিত আইন বা যুদ্ধের আইন ভঙ্গ করেছে এমন কোনও প্রমাণ নেই।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে-এর পলিসি অ্যান্ড গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক প্রধান অ্যালান হোগার্থ। তিনি বলেন, এরইমধ্যে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এই বিধ্বংসী সংঘাতে সৌদি আরবের বেপরোয়া আচরণ থামাতে ডাউনিং স্ট্রিট ব্যর্থ হয়েছে। এটা বেশ উদ্বেগজনক।

ইয়েমেনে সৌদি জোটের বিমান হামলার বিষয়ে একটি স্বতন্ত্র তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার ব্যাপারে এ মুহূর্তে চাপের মুখে রয়েছে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতর।

ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান স্টিফেন টুইগ বলেন, ‘আজ আমরা খুব শক্তিশালী একটি প্রমাণ পেয়েছি যে, আমাদের একটা স্বাধীন তদন্ত দেখার প্রয়োজন রয়েছে। এই তদন্ত ইয়েমেন সরকার কর্তৃক পরিচালিত হবে না। সব দিক থেকেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ আছে। এসবের তদন্ত হওয়া উচিত, তবে সেটা সংঘাতে লিপ্ত কোনও পক্ষের দ্বারা নয়।’

ফরেন অফিস মিনিস্টার টবিয়াস এলউড বলেছেন, ইউনিসেফের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তিনি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত করতে চাপের মুখে রয়েছেন। এতে বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানির উল্লেখ রয়েছে। তবে তিনি সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রির স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যদি আপনি ভাবেন যে ব্রিটেন তার মিত্রদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতে পারবে না তাহলে আপনি নিরলঙ্কার হয়ে পড়বেন। সৌদি আরব নিজেকে রক্ষার জন্যই এটা করছে। ইয়েমেনের বৈধ সরকারকে রক্ষার অধিকার সৌদি আরবের রয়েছে। টবিয়াস এলউড বলেন, এসব জিনিস আমরা ই-বে’তে বিক্রি করতে পারি না। প্রতিটি অস্ত্র বিক্রির বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হয়।

যুক্তরাজ্যের সামরিক সরঞ্জামের অন্যতম ক্রেতা হচ্ছে সৌদি আরব। ক্যাম্পেইন অ্যাগেইনস্ট দ্য আর্মস ট্রেড- এর হিসাবে ২০১৫ সালের প্রথম নয় মাসে সৌদি আরবের কাছে মোট দুই দশমিক ৯৫ বিলিয়ন পাউন্ড অস্ত্র বিক্রি করেছে যুক্তরাজ্য। আর ডেভিড ক্যামেরন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে দেশটির কাছে প্রায় সাত বিলিয়ন পাউন্ডের অস্ত্র বিক্রি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭২টি ইউরোফাইটার টাইফুন জেট-এর একটি চুক্তিও রয়েছে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।

/এমপি/বিএ/