দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস

ট্রাম্প আর স্যান্ডার্সের সমর্থকদের মিল-অমিল


নিউইয়র্ক টাইমসের প্রথম পাতামার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) আইওয়া ককাস। রিপাবলিকান আর ডেমোক্র্যাটদের হয়ে কে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হবেন তা নিয়ে এদিন প্রথম রায় দেবেন দলের নীতিনির্ধারকরা। ককাসকে সামনে রেখে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় রয়েছেন প্রার্থিতা প্রত্যাশীদের সমর্থকরা। এসব সমর্থকদের কেউ কেউ চলমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে বিরক্ত। কেউ আবার অভিবাসন ব্যবস্থা নিয়ে হতাশ। আবার কেউ কেউ মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র ভুল পথে যাচ্ছে। তবে কৌশলগত ভিন্নতা থাকলেও তাদের সবার দাবি এক। সবারই দাবি, নিজের সমর্থিত নেতারাই প্রার্থী হওয়ার যোগ্য, তারাই পারবেন যুক্তরাষ্ট্রে পরিবর্তন আনতে।
আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ডেমোক্র্যাট আর রিপাবলিকানদের হয়ে যতগুলো ভাগে ক্যাম্পেইন চলছে তার মধ্যে দুটি ভাগ হলো রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প আর ডেমোক্র্যাট নেতা বার্নি স্যানডার্স। আর এ দুদলের সমর্থকদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পরস্পরবিরোধী পক্ষ হলেও ট্রাম্প আর স্যানডার্সের সমর্থকদের মধ্যে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সাদৃশ্য রয়েছে। দুপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে শ্বেতাঙ্গদের আধিক্য রয়েছে, দুপক্ষেই পুরুষের সংখ্যা বেশি, দুপক্ষের সমর্থকদের কণ্ঠেই ফুটে ওঠে দল আর অন্য প্রার্থীদের প্রতি অনাস্থার কথা। যেমন, হিলারি ক্লিনটনের প্রতি অনাস্থা রয়েছে স্যানডার্স সমর্থকদের।

সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আইওয়া ককাসে নিজেদের সমর্থিত নেতাদের ভাগ্যে কী জুটবে তার নিশ্চয়তা না থাকলেও ক্যাম্পেইনকে ঢেলে সাজাচ্ছেন সমর্থকরা। দেশের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে ট্রাম্প আর স্যান্ডার্স দুজনের সমর্থকদের মাঝেই। সম্পদ আর আয় বৈষম্য নিয়ে চিন্তিত স্যান্ডার্সের সমর্থকরা। আবার সীমান্ত দিয়ে সন্ত্রাসী প্রবেশ করে কিনা সে ব্যাপারে উদ্বেগ রয়েছে ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে। দুজনের সমর্থকরাই আশা করেন তাদের প্রার্থীরাই পারবেন ভঙ্গুর ব্যবস্থার সমাধান করতে।

অ্যালেক্স কার্টিস নামে স্যানডার্সের এক তরুণ সমর্থক বলেন, ‘আমার যা কিছু বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে তা আমি স্যানডার্সের মাঝে খুঁজে পাই। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণ করতে যাচ্ছেন বলেই আমার বিশ্বাস।’

আইওয়ার নক্সভিলেভিত্তিক কৃষক টোবি রিচার্ডস ট্রাম্পকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, ‘যারা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যান না এমন লোককেই সমর্থন করি আমি আর ট্রাম্প বিক্রি হচ্ছেন না।’

তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে মিল থাকলেও উল্লেখযোগ্য কিছু ক্ষেত্রে ট্রাম্প আর স্যান্ডার্সের প্রার্থীদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। গত মাসে পরিচালিত নিউইয়র্ক টাইমস/সিবিএস জরিপ অনুযায়ী ট্রাম্প বিশাল জনগোষ্ঠীর সমর্থন পেলেও তাদের বেশিরভাগেরই(প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জনের) কলেজ ডিগ্রি নেই এবং তারা নিম্ন আয়ের মানুষ। 

বার্নি স্যান্ডার্স ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

আর একই জরিপে দেখা যায়, স্যান্ডার্সের সমর্থকরা বেশিরভাগই তরুণ এবং স্বঘোষিত উদারপন্থী। তাছাড়া স্যান্ডার্সের সমর্থকদের ৪৩ শতাংশই কলেজ গ্র্যাজুয়েট।  

নিউইয়র্ক টাইমস আর সিবিএসের জরিপে বলা হয়, দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে ২০১০ সাল থেকে ডেমোক্র্যাট আর রিপাবলিকান দু দলের সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে রিপাবলিকানরাই নিজেদের রাগের জানান বেশি দিয়ে থাকেন বলে উঠে আসে জরিপে। আবার আফ্রিকান-আমেরিকানদের চেয়ে শ্বেতাঙ্গরা নিজেদের ক্ষোভ বেশি প্রকাশ করেন।

সাভান্না গ্রানাহান নামে স্যান্ডার্সের এক নারী সমর্থক বলেন, ‘আমি খুব ক্ষুব্ধ, এদেশ সরকার চালায় না। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ডলার দিয়েই পরিচালিত হয় এটি।’

ইসথার টোনি নামে ট্রাম্পের এক সমর্থক বলেন, ‘আমি খুবই ক্ষুব্ধ। আমাদের রাজনীতিকরা কেবল নিজেদের পাওয়ার কথাই ভাবেন। কিভাবে আমাদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটাতে হবে তা নিয়ে তারা ভাবেন না। যারা তাদের অর্থ দেন কীভাবে তাদের সুবিধা দেওয়া যাবে সেটাই কেবল ভাবা হয়।’

ট্রাম্প আর স্যান্ডার্স দুজনের সমর্থকরাই হিলারি ক্লিনটনের কঠোর সমালোচক। তবে এক্ষেত্রে কারণ ভিন্ন। স্যান্ডার্সের সমর্থকরা মনে করেন হিলারি অসৎ। আর ট্রাম্পের সমর্থকদের আশঙ্কা, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার যেসব নীতিমালা নিয়ে তারা বিরোধিতা করছেন, ক্ষমতায় গেলে হিলারি সেগুলো বহাল রাখবেন।

/এফইউ/বিএ/