ওয়াশিংটন পোস্ট

জিকা আক্রান্ত ব্রাজিলের কার্নিভাল: মশার জন্য মাংস ও ভোজের উৎসব

আগামী কয়েকটি রাতে ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনিরোর রাস্তায় নিয়মিত নাচবেন সাম্বা কুইন তুয়ানে রচা। তিনি খুব দ্রুত নাচেন। রচা মনে করেন যদি তিনি নাচতে থাকেন তাহলে মশাকে সাগরে পাঠিয়ে দিতে পারবেন। ব্রাজিলে কার্নিভাল থামিয়ে দেওয়ার মতো কোনও শক্তি নেই। সরকার, ভেঙে পড়া অর্থনীতি কিংবা জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ- কিছুই থামাতে পারে না এই কার্নিভাল।
আগামী সপ্তাহে ব্রাজিলে শুরু হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম বেকানাল উৎসব। যে উৎসবে রাতভর দেশটির রাস্তায় রাস্তায় চলে উদাম নাচ ও পানাহার। সাম্বার তালে তালে নাচতে দেশটির কয়েক লাখ মানুষ ওই দিন রাস্তায় নামবে। সঙ্গে থাকবে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসা মানুষ। কোনও সন্দেহ নাই এদের অনেকেই শরীরে জিকা ভাইরাস নিয়ে ফিরবে এবং তা আরও ছড়িয়ে পড়বে। মশার মাধ্যমে কার্নিভালে জড়ো হওয়া উৎসবকারীদের মাধ্যমে আমেরিকাজুড়ে ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়বে আরও দ্রুত। ছড়াবে দৈহিক মিলনেও।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জিকা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করেছে। তবে ব্রাজিলে এ কার্নিভ্যালকে ঘিরে মনেই হচ্ছে না এটা ভয়ংকর কিছু। অথচ এই ব্রাজিলেই সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসটি।
আগস্টে অনুষ্ঠিতব্য অলিম্পিক বাতিলের আহ্বানে ব্রাজিল সরকারের মতোই দেশটির জনগণ ক্ষুব্ধ হয়েছে। একই ভাবে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকলেও ব্রাজিলিয়ানরা জানে কার্নিভাল চলবে। ব্রাজিলে কার্নিভাল বাতিল করা যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিসমাস বাতিল করার সমান।

ব্রাজিলের সমাজ বিজ্ঞানী ও কলাম লেখক লুইজ সিমাস জানান, এই ছুটির দিনটি ব্রাজিলের সবচেয়ে পবিত্র দিন। মানুষের বিভিন্ন সমস্যা ভুলে যেতে দিনটি সহযোগিতা করে। তিনি বলেন, বিদেশের মানুষরা এটাকে অদ্ভুত মনে করতে পারে। কিন্তু রিও’র ইতিহাসে দেখা যায়, যখন কঠিন সময় আসে তখন কার্নিভালের প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়ে যায়।

সিমাস আরও বলেন, জীবন সুখের বলে কার্নিভালে আপনি পার্টি করবেন না। জীবন কঠিন বলেই কার্নিভালে আপনি পার্টি করবেন।

ঐতিহ্যের পাশাপাশি কার্নিভালে যুক্ত হয়েছে বিরাটাকারে কর্পোরেট পৃষ্ঠপোষকতা। বিভিন্ন কোম্পানির অর্থায়নে রাস্তায় নামবে কয়েক হাজার লোক। বিচিত্র পোশাক পরে নাচবে তারা। সঙ্গে যোগ দেবে প্রতিবেশি দেশগুলো থেকে আসা নাচের দল। যাদেরকে স্থানীয়ভাবে ব্লোকোস নামে ডাকা হয়।

উৎসব আয়োজনে ব্রাজিলের মানুষের প্রস্তুতি দেখে বিশ্ববাসীর মনে হতে পারে দেশটিতে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। অথবা লোকজন ভাবতে পারে দেশটি ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে সতর্কও না। কার্নিভাল ও অলিম্পিক থেকে পর্যটন খাতে রাজস্ব লাভের আশায় জিকা ভাইরাসকে পাত্তা দিচ্ছে না ব্রাজিল।

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জিকা ভাইরাসের সংক্রমণকে গুরুত্ব না দেওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে। ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অলিম্পিক স্থগিত করার আহ্বানে।

প্রেসিডেন্ট দিলমা রোসেফ সব ব্রাজিলিয়ানদের ভাইরাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। ভাইরাসে আক্রান্ত সন্তানসম্ভবা মায়েদের সুরক্ষার জন্য সামর্থ অনুযায়ী সবকিছু করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

গত সপ্তাহে এডিস মশার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। ২ লাখ ২০ হাজার সেনাকে ৩০ লাখ বাড়িতে লিফলেট পৌঁছানোর কাজে মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। ৫০ হাজার সেনা মশার বংশ বৃদ্ধির স্থান ধ্বংস করবে। তবে এসব কাজ শুরু হবে কার্নিভালের পরে।

এডিস প্রজাতির মশা থেকে জিকা ভাইরাস মানুষের দেহে ছড়িয়ে থাকে। জ্বর, জয়েন্ট পেইনসহ ছোটখাটো কিছু শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয় এ ভাইরাসের কারণে। আবার তা এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে সেরেও যায়। তবে বিপত্তি তৈরি হয় গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে। গর্ভাবস্থায় জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মাইক্রোফেলাসি তথা বিকৃত ও ছোট মাথা নিয়ে জন্ম নিতে পারে শিশু। এসব শিশুর বুদ্ধিমত্তার ঘাটতি থাকে, শারীরিক বৃদ্ধি কম হয় এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

জিকা ভাইরাসের সবচেয়ে বেশি প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে। দেশটিতে ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার মাইক্রোসেফালি আক্রান্ত শিশু শনাক্ত হয়েছে। ল্যাটিন আমেরিকার অন্যান্য দেশগুলোতেও জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রয়েছে। এসব দেশে নারীদের আপাতত গর্ভধারণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত ল্যাটিন আমেরিকায় সীমাবদ্ধ থাকছে না জিকা ভাইরাস। ভাইরাসটি নতুন করে শনাক্ত হচ্ছে বিভিন্ন দেশে।

/এএ/