ডেইলি মেইল

‘মিথ্যা’র আশ্রয় নিয়ে ব্রিটেনকে ইরাকযুদ্ধে জড়ান ব্লেয়ার

ইরাক যুদ্ধে ব্রিটেনকে জড়াতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলেন ওই সময়ের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। সোমবার ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইলের প্রধান শিরোনাম বলছে, সামরিক প্রধান, বেসামরিক কর্মকর্তা, মন্ত্রিসভার সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিয়ে রচিত একটি নতুন বইয়ে এ বিস্ফোরক তথ্য পাওয়া গেছে। খবরে বলা হয়েছে, টনি ব্লেয়ারের মিথ্যাচারের কারণেই  অনেক ব্রিটিশ সেনাকে জীবন দিতে হয়েছে।
টনি ব্লেয়ার কিভাবে ব্রিটেনকে ইরাকযুদ্ধে যুক্ত করেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিক টম বোয়ের এর আত্মজীবনী ‘ব্রোকেন বাউস’এ। এই বইয়ের আলোকেই ইরাকযুদ্ধের বিষয়ে টনি ব্লেয়ারের মিথ্যাচারের খবর প্রকাশ করে পত্রিকাটি।
২০০২ সালের শুরুতেই সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করে ইরাকের শাসন পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন ব্লেয়ার। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি প্রতিরক্ষা প্রধান, মন্ত্রিসভা সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, প্রতিরক্ষা সচিব ও মন্ত্রিসভার বেশির ভাগ সদস্যকেই অন্ধকারে রেখে প্রতারণা করেন।
টনি ব্লেয়ারের ‘ছলনা’র কারণ হিসেবে ডেইলি মেইলের খবরে বলা হয়, দেশটির সেনাবাহিনী পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি না নিয়ে তার সিদ্ধান্তে রাজি না হওয়ার আশঙ্কা থেকে তিনি এটা করেন। ওই সময়ে টনি ব্লেয়ার শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা বলেছিলেন,যুদ্ধের কথা বলেননি।
এর ফলে যখন যুদ্ধ শুরু হয় পর্যাপ্ত বডি আর্মার ও সরঞ্জামের অভাবে ব্রিটিশ সেনাদের অনেকেই নিহত হয়। প্রতিরক্ষা প্রধান অ্যাডমিরাল স্যার মাইক বয়েস টনি ব্লেয়ারের অবস্থানকে ‘পাগলামো’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। তখন ব্লেয়ার তাকে বলেছিলেন, ‘ঠিক আছে, এটা এমনই’।
ডেইলি মেইলের খবরে বলা হয়, প্রতিরক্ষা সচিবও ব্লেয়ারের কাছে মেশিন গান, বডি আর্মার ও অন্যান্য সরঞ্জামের ব্যাপারে বলেছিলেন। তখন ব্লেয়ার জবাবে বলেছিলেন, ‘না। আমাকে জাতিসংঘের মধ্যস্ততায় যেতে হবে। আমরা যুদ্ধে যাচ্ছি এমন কোনও কিছু করা যাবে না।’
২০০২ সালে ব্লেয়ার পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নিলেও তা প্রকাশ্যে আসে ২০০৩ সালে। ইরাক দখল অভিযান শুরুর প্রায় দুই মাস আগে মধ্যপ্রাচ্যে নৌবহর ২৬ হাজার সেনা পাঠায় ব্রিটেন।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতের জন্য গণবিধ্বংসী অস্ত্র মজুদের কথা বলে ২০০৩ সালে ইরাক দখল অভিযান শুরু করেন।

ইরাক দখলের পর বৃটিশ পার্লামেন্টের হাউজ অব কমন্সে টনি ব্লেয়ার বলেছিলেন, ইরাক যুদ্ধের জন্য তিনি ক্ষমা চাইবেন না। ২০০৭ সালে এক টেলিভিশন সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না ইরাকে যা করছি আমরা তার জন্য আমার ক্ষমা চাওয়া উচিত। আমাদের গর্বিত হওয়া উচিত।’ ২০০৯ সালে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘যদি জানতাম ইরাকে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র নেই তাহলেও আমি মনে করি সাদ্দাম হোসেনকে সরিয়ে দেওয়া ঠিক ছিল।’

অবশ্য গত বছর, ইরাক আগ্রাসনের প্রায় ১২ বছর পর ইরাক যুদ্ধের জন্য ক্ষমা চান টনি ব্লেয়ার।

/এএ/বিএ/