ভারতের রাজ্যসভায় পাস হয়েছে ‘রিয়েল এস্টেট (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) বিল, ২০১৫’। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়নমন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডুর পেশ করা বিলটি সমর্থন করে কংগ্রেসসহ অন্য বিরোধী দলগুলোও। এ বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার প্রধান শিরোনাম করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।
টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, আবাসন বিলটি পাস হওয়ায় ফ্ল্যাট কেনার ব্যাপারে এখন ক্রেতাদের আশাবাদী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিলটি নিয়ে রাজ্যসভায় দীর্ঘ আলোচনার সুযোগ ছিল না। সব দলের জন্যই বরাদ্দ সময় ছিল কম। এর মধ্যেই বিরোধীদের সংশোধনীগুলো মেনে পাস হয় বিলটি।
রাজ্যসভায় বিলটি পেশ করে নাইডু বলেন, ‘‘এই বিল সময়ের দাবি মেনে আবাসন খাতে স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং ক্রেতাদের স্বার্থরক্ষার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে।’’
তিনি জানান, নতুন বিল অনুযায়ী, ফ্ল্যাট বা বাড়ির কেনা-বেচার ক্ষেত্রে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, মতবাদ বা আঞ্চলিকতাবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।
নতুন বিলে ইউপিএ আমলের প্রস্তাবিত শর্ত মেনে আবাসন নির্মাণকারী সংস্থাগুলোর জন্য কোনও নির্দিষ্ট প্রকল্পে ক্রেতাদের থেকে নেওয়া অর্থের ৭০ শতাংশ জমি ক্রয় এবং নির্মাণ খরচ বাবদ একটি পৃথক অ্যাকাউন্টে সরিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই হার কমিয়ে ৫০ শতাংশ করার কথা ভেবেছিল নরেন্দ্র মোদির সরকার। কিন্তু বিরোধীরা এতে আপত্তি তোলে।
মোদি সরকারের খসড়া বিলে ক্রেতাদের অভিযোগ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ৯০ দিনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালকে। কিন্তু সংশোধনী বিলে তা ৬০ দিন করা হয়েছে।
বর্তমান মোদি সরকারের আমলেই আরও একবার লোকসভায় পাস হয়েছিল বিলটি। কিন্তু রাজ্যসভায় তা বিরোধিতার মুখে পড়ে। অভিযোগ ওঠে, আবাসন নির্মাতা সংস্থাগুলির চাপে পড়ে মোদি সরকার বিলের নিয়মকানুন শিথিল করছে। বিল চলে যায় সিলেক্ট কমিটিতে।
বিরোধীদের অধিকাংশ দাবি মেনে নিয়ে ফের নিয়মকানুন কঠোর করা হয়। তারপরই কংগ্রেস ও অন্য বিরোধী দলগুলোর সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় পাস হয় বিলটি। তবে ৫০০ বর্গমিটারের কম জমি এবং ৮টি বা তার চেয়ে কম ফ্ল্যাটের আবাসন এই আইনের আওতার বাইরে থাকবে। রাজ্যসভায় সংশোধিত হওয়ায় বিলটি ফের লোকসভায় পাশ করাতে হবে।
সরকারের দাবি, অর্থ প্রদান করেও ঠিক সময়ে ফ্ল্যাটের চাবি হাতে না পাওয়া, নকশা বা নির্মাণের ক্ষেত্রে গলদ, ঠিকঠাক অনুমোদনের অভাব—এ ধরনের যাবতীয় হয়রানি বন্ধ করার ব্যবস্থা রয়েছে বিলটিতে। প্রোমোটারদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতদিন হয়রানি হলেও আলাদাভাবে আবাসন খাতের ক্রেতাদের অভিযোগ শোনার কোনও সংস্থা ছিল না। তারও ব্যবস্থা রয়েছে এই বিলে।
কেন্দ্রীয় আবাসনমন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডু বলেন, ‘‘আবাসন ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে কালো টাকা ঢুকেছিল। তা বন্ধ হবে। তবে নিয়ন্ত্রণের নামে প্রোমোটারদের গলায় ফাঁস চেপে বসানো হচ্ছে না। বরং আবাসন ক্ষেত্রে লগ্নিকারীদের উৎসাহ ফিরে আসবে।’’
নাইডু বলেন, এবার সঠিক সময়ে আবাসনের কাজ শেষ হওয়া নিশ্চিত হবে। মোদি সরকারের সবার জন্য আবাসনের লক্ষ্যও পূরণ হবে।
মনমোহন সিং আমলেল বিলে বলা হয়েছিল, প্রোমোটাররা একটি আবাসনের ক্রেতাদের থেকে টাকা নিয়ে অন্য প্রকল্পে খরচ করে ফেলে। ফলে ওই আবাসন তৈরির কাজ শেষ হয় না। তাই কোনও প্রকল্পের ক্রেতাদের থেকে নেওয়া টাকার ৭০ শতাংশ একটি অস্থায়ী ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। মোদি সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, ক্রেতাদের থেকে নেওয়া টাকার ৫০ শতাংশ পৃথক অ্যাকাউন্টে রাখলেই যথেষ্ট। পরে বিরোধীদের চাপে তা বাড়িয়ে ফের ৭০ শতাংশ করা হয়।
এই বিলে ফ্ল্যাটের ‘কার্পেট এরিয়া’র সংজ্ঞা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ফ্ল্যাটের দেয়ালের ভেতরের অংশকেই ‘কার্পেট এরিয়া’ হিসেবে ধরা হবে। তার ভিত্তিতেই দাম নির্ধারণ করতে হবে। এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘সুপার-বিল্ট এরিয়া’ বা ‘কভার এরিয়া’-র হিসেবে প্রোমোটাররা ফ্ল্যাট বিক্রি করেন।
বিল অনুযায়ী, আবাসন খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে সব প্রকল্প নথিভুক্ত করতে হবে। তা না হলে তিন বছর পর্যন্ত জেল বা জরিমানা হবে। ফ্ল্যাটবাড়িতে কাঠামোগত কোনও সমস্যা দেখা দিলে প্রোমোটার ৫ বছর পর্যন্ত তার জন্য দায়বদ্ধ থাকবেন। বাণিজ্যিক ও আবাসিক, দুই ধরনের প্রকল্পই এই বিলের আওতায় থাকছে। ঠিক সময়ে প্রোমোটার ফ্ল্যাটের কাজ শেষ করতে না পারলে কিংবা ক্রেতা ঠিক সময়ে দাম মেটাতে না পারলে একই হারে দুই পক্ষকে সুদ গুণতে হবে। এতোদিন প্রোমোটাররা নিজেদের তরফে চুক্তির খেলাপ হলে ২-৩ শতাংশ সুদ দেওয়ার শর্ত রাখতেন। কিন্তু ক্রেতাদের জন্য ১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদের শর্ত রাখা হতো। নতুন নিয়মে সেই বৈষম্য দূর হলো। সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।
/এমপি/