ডন

মোশাররফের প্রস্থানে অস্বস্তিতে সরকার

আদালত কর্তৃক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর গত সপ্তাহে 'চিকিৎসার জন্য' দুবাই গেছেন পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফ। ৭০ বছর বয়সী এ জেনারেল 'স্পাইনাল কর্ডের' জটিলতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। তাদের দাবি, পাকিস্তানে এর চিকিৎসা অপ্রতুল হওয়ায় তার দুবাই যাওয়া প্রয়োজন। তবে আদালতের আদেশের সুযোগ নিয়ে সাবেক এ সেনাশাসকের দেশত্যাগে অস্বস্তিতে পড়েছে পাকিস্তান সরকার। সোমবার পার্লামেন্টে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনাতেও উঠে আসে মোশাররফের দেশত্যাগ প্রসঙ্গ। এ বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার প্রধান শিরোনাম করেছে পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডন।

প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের উপস্থিতিতেই পার্লামেন্টে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) নেতারা। সাবেক এ সেনাশাসকের কঠোর সমালোচনা করেন তারা। তার দেশত্যাগ নিয়েও তারা প্রশ্ন তোলেন।

বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের পর এ বিষয়ে সরকারের হাতে আর কোনও বিকল্প থাকে না।

Dawn

১৬ মার্চ ২০১৬ বুধবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট মোশাররফের দেশত্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন। পরদিন বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের 'এক্সিট কন্ট্রোল লিস্ট' থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পর শুক্রবার ভোরে দেশ ছাড়েন এ জেনারেল।

এর আগে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিসার আলী খান জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর সরকার মোশাররফকে বিদেশ যেতে অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যেই দেশে ফিরবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন।

মোশাররফের রাজনৈতিক দল অল পাকিস্তান মুসলিম লিগ তার দেশে ফেরার ব্যাপারে দৃঢ়তা দেখিয়েছে। মোশাররফ নিজেও দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে ফের দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমি একজন কমান্ডো এবং আমার দেশকে ভালবাসি। কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যেই আমি ফিরে আসবো।’

সুপ্রিম কোর্ট মোশাররফের বিদেশ গমনে জারি নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে দিলেও সরকার চাইলে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করার সুযোগ ছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন নওয়াজ শরীফের সরকার তা করেনি।

বিষয়টিকে পাকিস্তান সরকারের আগের অবস্থানের বিপরীত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০১৩ সালের নভেম্বরে নওয়াজ শরিফ ক্ষমতায় আসার পরপরই মোশররফের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনা হয়।

২০০৬ সালের বালুচ জাতীয়তাবাদী নেতা আকবর বাগতি হত্যার ঘটনায় গত জানুয়ারি মাসে নির্দোষ প্রমাণিত হন মোশাররফ। কী কারণে মোশাররফের সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের আপাত 'মীমাংসা' হল তা অবশ্য পরিষ্কার নয়।

১৯৯৯ সালে সেনাপ্রধান থাকাকালে নওয়াজ শরীফের সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেন পারভেজ মোশাররফ। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর পিপিপি’র নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হলে প্রায় এক দশকের সেনাশাসনের অবসান ঘটে।

পিপিপি ক্ষমতায় আসার পরপরই দেশ ছাড়েন মোশাররফ। কিছুদিন দুবাই এবং পরে লন্ডনে অবস্থান শেষে ২০১৩ সালে স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে দেশে ফিরেন মোশাররফ। তবে নানা কারণে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেননি।

মোশাররফের আমলে ২০০৭ সালে পিপিপি’র তৎকালীন প্রধান বেনজির ভুট্টো আততায়ীদের হামলায় নিহত হন। ওই বছর দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন তিনি। পরে তার বিরুদ্ধে বেনজির হত্যার অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা ও আলোচিত লাল মসজিদ অভিযানসহ বেশকিছু ঘটনায় বিচারের মুখে পড়েন সাবেক এ সেনাপ্রধান। সূত্র: ডন।

/এমপি/