দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া

উত্তরাখণ্ড ইস্যুতে আদালতের নির্দেশে অস্বস্তিতে কেন্দ্র

রাষ্ট্রপতির শাসন জারি হওয়া সত্ত্বেও উত্তরাখণ্ডে ক্ষমতাচ্যুত মুখ্যমন্ত্রীকে আস্থা ভোট নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কংগ্রেসের আবেদনে সাড়া দিয়ে নৈনিতাল হাইকোর্ট মঙ্গলবার এ রায় দেন। রায়ে বলা হয়, আগামী বৃহস্পতিবার (৩১শে মার্চ) বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে হরিশ রাওয়াতকে আস্থা ভোট নিতে হবে। হাইকোর্টের এ নির্দেশ দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারকে ঘোর অস্বস্তিতে ফেলেছে। এ বিষয়টি নিয়ে বুধবার প্রধান শিরোনাম করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।

বিধানসভার স্পিকার দলত্যাগ রোধ আইন অনুযায়ী যে নয়জন কংগ্রেস নেতার সদস্যপদ খারিজ করে দিয়েছিলেন, ভোটদানের অধিকার থাকবে তাদেরও। তবে ওই সদস্যদের রায় আলাদাভাবে রাখতে হবে। আস্থা ভোটের ফল স্পিকার অবশ্য ঘোষণা করতে পারবেন না। তা সিল করা খামে হাইকোর্টের কাছে জমা দিতে হবে।

হাইকোর্টের এ নির্দেশে দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকার অসন্তুষ্ট হলেও রায়ে খুশি কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত যে ‘অগণতান্ত্রিক’ ছিল, এই রায় তার প্রমাণ।

এর আগে রবিবার উত্তরাখণ্ডে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করলেও বিধানসভা বহাল রাখা হয়। কংগ্রেসের পক্ষে অপসারিত মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত রাষ্ট্রপতির শাসন জারির বিরুদ্ধে উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন।

Times of India

বিধানসভার মধ্যেই এই শক্তিপরীক্ষা হবে। আগেই ২৮শে মার্চ এমন আস্থাভোট নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টা আগেই রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হয়। হাইকোর্টের রায়ের আইনি ব্যাখ্যা নিয়ে অবশ্য কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। অপসারিত রাওয়াত সরকারকে ফেরানো হলো কিনা, রাষ্ট্রপতি শাসনে স্থগিতাদেশ হলো কিনা —এমন অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

হাইকোর্টের নির্দেশে বলা হয়েছে, দলত্যাগী ৯ কংগ্রেস সদস্যও ভোট দিতে পারবেন। বিধানসভার অধ্যক্ষ দলত্যাগ বিরোধী আইনে এই বিধায়কদের সদস্যপদ খারিজ করেছেন। হাইকোর্টের বিচারপতি ইউ সি ধ্যানী তার নির্দেশে বলেছেন, ওই নয়জনের ভোট পৃথকভাবে রাখা থাকবে। তাদের গোপন ভোট হবে। আদালতের পর্যবেক্ষক সমগ্র শক্তিপরীক্ষার পর্ব নজরদারি করবেন। দলত্যাগী নয়জনের ভোট আদালতের কাছে জমা থাকবে। এই বিধায়করা তাদের সদস্যপদ খারিজের বিরুদ্ধে যে আবেদন করেছেন তার পূর্ণাঙ্গ নিষ্পত্তির সময়ে এই বিধায়কদের ভোট সম্পর্কেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

রাষ্ট্রপতির শাসন জারির কারণ হিসাবে কেন্দ্রীয় সরকার ‘সাংবিধানিক শাসন ভেঙে পড়ার’ যুক্তি দেখিয়েছিল। বিজেপি’র দাবি বিধানসভায় কংগ্রেস সংখ্যালঘু হয়ে গেছে। ১৮ই মার্চ ব্যয়বরাদ্দ বিল সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়াই অনুমোদন করিয়ে নিয়েছে রাওয়াত সরকার। কংগ্রেসের পাল্টা দাবি, বিজেপি উত্তরাখণ্ডে দল ভাঙিয়ে সরকার গড়তে শত শত কোটি টাকা খরচ করেছে। তারপরেও সফল না হওয়ায় রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করেছে।

হাইকোর্টের রায়ের ব্যাখ্যা যাই হোক না কেন রাষ্ট্রপতির শাসন জারির পরেও অপসারিত মুখ্যমন্ত্রীকে শক্তি যাচাইয়ের সুযোগ দেওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত বড় প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল। দেরাদুনে হাইকোর্টে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সওয়ালে বলেন, রাষ্ট্রপতির শাসন খারিজ করা যায় না। ধারণা করা হচ্ছে, কেন্দ্র বুধবারই হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যাবে।

কংগ্রেস হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। হরিশ রাওয়াত বলেছেন, কেন্দ্রের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কড়া রায় দিয়েছে আদালত। সাধারণভাবে হিসাব বলছে, কংগ্রেসের ২৭ জন বিধায়ক এবং সহযোগী পিডিএফ’র সাতজন রাওয়াতের পক্ষে ভোট দেবেন। ৭১ সদস্যের বিধানসভায় বিজেপি’রও সদস্য সংখ্যা ২৭। দলত্যাগী নয়জনের ভোট গণনার আগে পর্যন্ত রাওয়াতই এগিয়ে থাকবেন। তবে দলত্যাগী বিধায়কদের এভাবে ভোট দিতে দেওয়ার সুযোগের বিরুদ্ধে কংগ্রেসও ডিভিশন বেঞ্চে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

উত্তরাখন্ড বিধানসভার সংকট শুরু চলতি মাসের ১৮ তারিখে। সেদিন রাজ্য বাজেট কণ্ঠভোটে পাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিজেপি দাবি জানায়, কংগ্রেসের নয়জন বিক্ষুব্ধ সদস্য তাদের পক্ষে থাকায় বাজেট পাস অবৈধ। তাদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন। স্পিকার গোবিন্দ সিং কুঞ্জওয়াল দলত্যাগ রোধ আইন অনুযায়ী ওই নয়জনের সদস্যপদ খারিজ করে দেন। সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।

/এমপি/