দ্য গার্ডিয়ান

যেভাবে অর্থ গোপন করেছেন ধনী ও বিখ্যাতরা

মোস্যাক ফনসেকা নামের পানামাভিত্তিক একটি ল’ ফার্মের এক কোটি ১৫ লাখ গোপন নথি ফাঁস হয়েছে। ফাঁস হওয়া এসব নথি দুনিয়াজুড়ে আলোড়ন তৈরি করেছে। এতে বেরিয়ে এসেছে বিশ্বের ধনী ও বিখ্যাত ব্যক্তিরা কিভাবে কর ফাঁকি দিয়ে গোপন সম্পদের পাহাড় গড়েছেন সেই তথ্য। এ বিষয়টি নিয়ে সোমবার শিরোনাম করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

বিশ্বের যেসব প্রতিষ্ঠান গোপনীয়তা রক্ষার জন্য বিখ্যাত, পানামার এই মোস্যাক ফনসেকা তাদের অন্যতম। গত ৪০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি তাদের ক্ষমতাশালী মক্কেলদের কীভাবে অর্থ পাচারে সহযোগিতা করেছে, নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর এবং কর ফাঁকি দেওয়ার পথ দেখিয়েছে, সেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে এসব নথিতে। এই মক্কেলদের মধ্যে অন্তত ৭২ জন বিভিন্ন দেশের সাবেক ও বর্তমান সরকারপ্রধান; যারা নিজ দেশের সম্পদ লুণ্ঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বা আছেন। এই তালিকায় রয়েছেন মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক, লিবিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফি এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ প্রমুখ। ফাঁস হওয়া নথিতে উঠে এসেছে ফিফার দুর্নীতির প্রসঙ্গও।

চীনের ক্ষমতাসীন দলের সাবেক-বর্তমান অন্তত ৮ জনের অবৈধ অথবা গোপন সম্পদ থাকার তথ্যও পাওয়া গেছে ফাঁস হওয়া নথির মাধ্যমে। নথিতে রয়েছে ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির এমপি, রাজনীতিবিদের গোপন সম্পদের কথাও।

The Guardian

এছাড়া এক ব্যাংকের মাধ্যমে অন্তত প্রায় বিলিয়ন ডলার অর্থ পাচারের সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগীও রয়েছেন। নথিতে বিলিয়ন ডলার পাচারকারী একটি চক্রের সন্ধান মিলেছে, যা পরিচালিত হয় একটি রুশ ব্যাংকের মাধ্যমে এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কয়েকজন ঘনিষ্ট সহযোগীও এতে জড়িত বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সম্মতি ব্যতিত এতো বড় কাজ তার ঘনিষ্ঠ লোক করতে পারেন না। রাশিয়া, ক্রিমিয়াকে নিজেদের অংশ করে নেওয়ার পর ব্যাংক রোশিয়া নামের ওই ব্যাংকের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ব্যাংকটি কিভাবে অর্থ পাচার করে আসছিল তা ফাঁস হওয়া নথির মাধ্যমেই প্রথম জানা যাচ্ছে।

জার্মান দৈনিক জিড্ডয়েটশ সাইটুঙ্গ একটি বেনামি সূত্র থেকে এই বিপুল তথ্যভাণ্ডারের সন্ধান পায়। তারা  ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস বা আইসিআইজের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি জানিয়ে দেয়। তবে নথিগুলোর সংগ্রাহক ও প্রকাশকারীর নাম এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।

গোপনীয়তা রক্ষাকারী হিসেবে পৃথিবীর অন্যতম প্রতিষ্ঠান মোস্যাক ফনসেকা, যেটি পানামার একটি আইনি প্রতিষ্ঠান, সেখান থেকেই সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে ১১ মিলিয়ন নথিপত্র। বিশ্বের ৩৫টির বেশি দেশে প্রতিষ্ঠানটির শাখা রয়েছে। ফাঁস হওয়া নথিগুলোতে দেখা যাচ্ছে, অর্থ পাচার করতে, কর ফাঁকি দিতে এবং বিভিন্ন রকম নিষেধাজ্ঞা এড়াতে এই আইনি প্রতিষ্ঠানটি তার মক্কেলদেরকে পরামর্শ দিয়ে আসছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই তারা গত ৪০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছে।

ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস বা আইসিআইজে-এর ডিরেক্টর, জেরার্ড রাইল বলেছেন, গত ৪০ বছর ধরে মোস্যাক ফনসেকা তার দৈনন্দিন যেসব কাজকর্ম করেছে সেগুলোর নথি রয়েছে এই ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টগুলোতে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।

/এমপি/